সৌদি বাদশাকে হুমকি দিলেন ট্রাম্প!
অনলাইন ডেস্ক : সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের সক্ষমতাশালী দেশগুলোর একটি। সেখানকার জটিল আঞ্চলিক রাজনীতি। ইয়েমেনে বিদ্রোহীদের সাথে সৌদি আরব জড়িয়ে রয়েছে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে। ইয়েমেনের মতো না হলেও সিরিয়াতে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধেও রয়েছে সৌদি আরবের ভূমিকা। রয়েছে ইরানের সাথে দীর্ঘ দিনের বিবাদ। কাছাকাছি সময়ে নতুন করে কাতারের সাথে ভালো বিবাদে জড়িয়েছে সৌদি আরব। বলা হয়, বন্ধুরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রই সৌদি আররের এমন সাহসের মূল শক্তি।
কিন্তু সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র যখন উল্টো জানিয়ে দেয় যে, মার্কিন সেনাবাহিনী ছাড়া তাদের বাদশাহ’র কোন অস্তিত্বই থাকবে না তখন তা সৌদি আরবের জন্য উদ্বেগের বৈকি। গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ সম্পর্কে সেরকমই এক বিবৃতি দিয়েছেন। যাতে তিনি একদম সোজাসাপ্টা বলেছেন, মার্কিন সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া সৌদি রাজপরিবার দুই সপ্তাহও টিকবে না।
তেল সমৃদ্ধ সৌদি আরবের রাষ্ট্র হিসেবে প্রথম আবির্ভাব নব্বই বছর আগে। ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি রাজপরিবারের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সম্পর্ক সবসময় আন্তরিক ছিল। সৌদি আরব জ্বালানী তেলের সার্বক্ষণিক সরবরাহ নিশ্চিত করবে আর বিনিময়ে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে যুক্তরাষ্ট্র।
সৌদি আরবে কি পরিমাণে মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে তার কোন আনুষ্ঠানিক হিসাব নেই। তবে গণমাধ্যমে বলা হয় ৮৫০ থেকে চার হাজারের মতো মার্কিন সৈন্য প্রশিক্ষণ ও সামরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে সৌদি আরবে রয়েছে।
তবে কেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হঠাৎ এমন বিবৃতি দিলেন সেটি নিয়ে ভাবিয়ে তুলেছে অনেককেই। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক একজন বিশ্লেষক আহমেদ কুরেসি বিবিসিকে বলেছেন, গত দশ বছর ধরে সৌদি আরব তাদের সামরিক সক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়েছে। তাদের সেনাবাহিনী দুর্বল এই ধারনা এখন আর ঠিক নয়।
সৌদি আরবের জন্য কি তাহলে মার্কিন সামরিক সহায়তা দরকার? আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ড. মেহদি হাসান বিবিসিকে বলেছেন, আমেরিকা সৌদি আরবকে সহায়তা করে কারণ হল তারা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।
তিনি বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের রাজপরিবারগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র যদি আর সাহায্য না করে তাহলে তাদের জন্য টিকে থাকা মুশকিল হবে। কারণ ওই অঞ্চলের জনগণ তখন গণতন্ত্রের দিকে ঝুঁকবে। সৌদি রাজতন্ত্রকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের স্বার্থেই সমর্থন দেয়। তবে ড. হাসান বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়ত রাজপরিবারকে সমর্থন দেয়ার বিনিময়ে কিছু চাইছেন।
সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান সেখানে খুব ক্ষমতাশালী হয়ে উঠছেন। তবে সৌদি আরবে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত শহিদ আমিন বলছেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া সৌদি রাজপরিবার টিকে থাকতে পারবে না তা ভ্রান্ত একটি ধারণা।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যে যুক্তি দিয়েছিলেন তার একটি হল অনেক দেশ মার্কিন বদান্যতার সুযোগ নিচ্ছে। সেসব দেশে মার্কিন সেনা মোতায়েন থাকলেও তার প্রতিদান দেয়া হচ্ছে না।
শহিদ আমিন আরও বলছেন, “ট্রাম্প যে বিবৃতি দিয়েছেন তা রীতিমতো হুমকি। সৌদি রাজপরিবার যদি কোন সংকটে পড়ে তবে তারা যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ করবে।”
প্রতিদান বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? সৌদি আরবের কাছে থেকে প্রতিদান হিসেবে তিনি কি চান সেটি পরিষ্কার করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। পৃথিবীতে মার্কিন অস্ত্রের সবচাইতে বড় ক্রেতা বর্তমানে সৌদি আরব। কিন্তু সম্প্রতি তারা বিকল্পও যাচাই করতে শুরু করেছে। রাশিয়ানদের অস্ত্র কেনা যায় কিনা সে ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সৌদি আরবকে মার্কিন অস্ত্র কিনতে বাধ্য করাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতির অন্তর্নিহিত ইঙ্গিত।সূত্র: বিবিসি বাংলা