এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারে জড়াতে পারে বাংলাদেশের নাম
ডোনাল্ড ট্রাম্প? সম্ভাবনা ক্ষীণ। দুই কোরিয়ার পুনর্মিলন? একটু অকালেই হয়ে যায়। আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার শান্তিচুক্তি? মনোনয়নের চূড়ান্ত সময়সীমা অতিক্রমের পর এ চুক্তি হয়েছে। চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দরজায় কড়া নাড়ছে। কে বা কারা এবারে শান্তির নোবেল পেতে যাচ্ছেন/যাচ্ছে; সেটা আন্দাজ করা যতটা কঠিন, ঠিক ততটাই সহজ কারা বা কে পাচ্ছেন না।
চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল জয়ী বাছাইয়ে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিকে বেশ কাঠ-খড় পোহাতে হচ্ছে। এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১১ ব্যক্তি এবং সংস্থার নাম মনোনয়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী শুক্রবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অসলোতে এবারের শান্তির নোবেল জয়ী ঘোষণা করা হবে।
সাধারণত প্রার্থীদের তালিকা গোপন রাখা হলেও কে জিতবেন তা নিয়ে চারদিকে ভবিষ্যদ্বাণী এখন তুঙ্গে। সুইডিশ একাডেমিতে যৌন কেলেঙ্কারির জেরে গত ৭০ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে মানুষের উচ্চাশা তৈরি হয়েছে।
দুই কোরিয়ার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যায়ে-ইন ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকে এগিয়ে রেখেছে অনলাইনের কিছু বেটিং সাইট।
তবে নোবেল বিশেষজ্ঞরা; যারা এ ব্যাপারে খুব কম ভুল ধারণা দেন, তারা বেটিং সাইটের এই চিন্তা-ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) প্রধান ড্যান স্মিথ বলেন, ‘একদিকে, আমি এক্ষেত্রে আন্তঃকোরীয় অর্জনকে এ বছরের সবচেয়ে নাটকীয় বিষয় হিসেবে মনে করছি।’
‘অন্যদিকে, আমি অবাক হবো; যদি এ বিষয়টিকে ধরে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। আর যদি তাই হয়, তাহলে সেটি হবে অপরিপক্ক।’ এছাড়া মানবাধিবার ইস্যুতে কিমের রেকর্ড তার পক্ষে যায় না। আর ট্রাম্প? একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।
মুন জ্যায়ে ইন কি তার নিজের কাজের জন্য পেতে পারেন? আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষজ্ঞ ও সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেস্টিন বলেন, ‘পিয়ংচ্যাং (শীতকালীন) অলিম্পিক গেমসকে ব্যবহার করে শান্তির বার্তা প্রচারে তিনি ভালো করেছেন।’
কিন্তু ট্রাম্পের সম্ভাবনা আছে কি? ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন বরিস জনসন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জ্যায়ে ইন কোরীয় উপদ্বীপে নেয়া পদক্ষেপের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন বলে মন্তব্য করেছিলেন।
ট্রাম্পের বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত; বিশেষ করে প্যারিস জলবায়ূ চুক্তি এবং ইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া। যা নেতিবাচক এবং শান্তির জন্য উদ্বেগের, সেসবের দিকে ইঙ্গিত করে স্মিথ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এ ধরনের পুরস্কার ট্রাম্পের সঙ্গে যায় না।’
এদিকে, ২০ বছরের যুদ্ধ শেষে প্রতিবেশি ইরিত্রিয়ার সঙ্গে ইথিওপিয়ার শান্তিচুক্তি হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এই শান্তিচুক্তির সঙ্গে জড়িত দুই দেশের ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে শান্তির সর্বোচ্চ এই পুরস্কার পেতে পারেন বলে প্রত্যাশা করছেন অনেকে।
অধ্যাপক পিটার ওয়ালেস্টিনের মতে, এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ পেতে পারেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসেছেন চলতি বছরের এপ্রিলে। যা নোবেল পুরস্কারের মনোনয়নের আবেদনের সময়ের পর। বছরের শুরুতেই নোবেল কমিটি মনোনয়নের জন্য আবেদন গ্রহণ করায় তিনি এবারের এই সুযোগ নাও পেতে পারেন।
যৌন সহিংসতা ও হয়রানির ব্যাপারে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা তৈরি করায় মি টু (#MeToo) আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, যেমন কঙ্গোর ধাত্রীবিদ্যাবিশারদ ডেনিস মুকওয়েজি অথবা জঙ্গিদের হাতে ধর্ষণের শিকার ইয়াজিদি নারী নাদিয়া মুরাদ এই সম্মান পেতে পারেন।
অতীতে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার মনোনয়ন পেয়েছিলেন মুকওয়েজি। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার নারীদের নিয়ে দুই দশক ধরে কাজ করছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের হাতে অপহরণের শিকার হয়ে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে তাদের আস্তানায় কাটাতে হয়েছিল মুকওয়েজিকে।
অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান হেনরিক আর্ডালের বিশ্বাস, বিশ্বজুড়ে প্রত্যেক বছর লাখ লাখ অভূক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়ার কাজে নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবারে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ইয়েমেনের যুদ্ধের ময়দান থেকে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে, আমরা এখন দেখছি যে, বর্তমান সময়ের বৃহত্তর মানবিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষুধা।’ আর জাতিসংঘের এই সংস্থা যদি এবারে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়; তাহলে এর সঙ্গে জড়িয়ে যাবে বাংলাদেশের নামও।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যার হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের দিকে ঢল ছুটেছিল সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। গত বছরের আগস্টের ওই সহিংসতায় সীমান্ত উন্মুক্ত করে বাংলাদেশে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যমে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা অন্যান্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আরো রয়েছে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, সৌদি আরবের কারাবন্দি ব্লগার রাইফ বাদায়ি, গণমাধ্যমের সুরক্ষায় কাজ করা রিপোর্টার্স উইথাউট বর্ডারস, কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (আরএসএফ) ও রুশ মানবাধিকার সংস্থা এনজিও মেমোরিয়াল এবং দেশটির বিরোধীদলীয় সংবাদপত্র নোভায়া গ্যাজেটা।
এসব কিছুই গুঞ্জন এখন বাতাসে উড়ছে। তবে কে হবেন এবারের শান্তিতে চ্যাম্পিয়ন সেটি জানা যাবে শুক্রবার সুইডেনের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায়। অপেক্ষা সেই সময় পর্যন্ত।