যেখানে সুবিধা বেশি সেখানেই যাবেন এরশাদ
ভোটের আগেই জোটের পাওনা নিশ্চিত করতে চান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। যেখানে গেলে সুবিধা বেশি, সেখানেই যাবেন তিনি। যার সঙ্গে জোট করলে বেশি আসন পাওয়ার সুযোগ এবং সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে- সেই দলের সঙ্গেই জোট করবে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। গতকাল বুধবার বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে
দলটির প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় দলের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে অংশ নেবে জাপা, অন্যথায় এককভাবে নির্বাচন করবে তারা। এরশাদ নিজেই এ সম্ভাবনার কথা বলে আসছেন কয়েক মাস ধরে।
কিন্তু গতকালের বৈঠকে দলের নেতাদের বক্তব্য শোনার পর এরশাদ বলেন, যে দলের সঙ্গে জোটে জাপা লাভবান হবে, তার সঙ্গেই যাবেন। বৈঠক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে আগ বাড়িয়ে জোটে যাওয়ার কথা কেন বলব?’
১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর সরকার গঠনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে মন্ত্রিসভায় শরিক হয়েছিল জাপা। ১৯৯৯ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটে যোগ দেয়। এক বছরের মাথায় বিএনপির জোট ছাড়েন এরশাদ। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকারের শরিকানা পায়। এরশাদ বর্জন করলেও রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপার একাংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে গত নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে রয়েছে এরশাদের দল। সরকারেও শরিকানা রয়েছে। জাপা নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগকে দুবার সমর্থন দিয়েও ন্যায্য পাওনা পাননি তারা।
একাদশ নির্বাচনে আর মাত্র চার মাস বাকি। অতীতের মতো এবারও ভোটের আগে জাপায় নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। গতকালের বৈঠকে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিরা এরশাদকে অনুরোধ করেন, ন্যায্য হিস্যা আদায় করে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করার আগে শতবার চিন্তা করারও পরামর্শ দেওয়া হয়। কত আসন দেওয়া হবে, সরকার গঠন করতে পারলে কতটি মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে- ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি চান জাপা নেতারা।
নেতাদের বক্তব্যে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, কারও কাছে আসন চাইব না। মন্ত্রিত্বও নয়। বিরোধী দল বা সরকারের অংশীদার হতে রাজনীতি করছি না। রাজনীতি করছি ক্ষমতায় গিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করব। তবে নির্বাচনী রাজনীতিতে জোট করা যায়। কিন্তু এবার আমরা কারও সঙ্গে আগ বাড়িয়ে জোটে যাওয়ার কথা কেন বলব?
বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে এরশাদ বলেন, রওশন এরশাদের বক্তব্যে তিনি খুশি হয়েছেন। উৎসাহিত হয়েছেন। প্রয়োজন হলে আরও বৃহৎ জোট করবেন। এবার ন্যায্য হিস্যা আদায় করেই জোটের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
সভার শুরুতে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বক্তব্য দেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের নেতাদের আহ্বান জানান তিনি।
পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করলে জাপাকে যেসব আসন দেওয়া হয়, সেখানেই বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। এবারও তা করতে পারে, তাই তাদের সঙ্গে জোট করার আগে বুঝেশুনে করতে হবে।
কুমিল্লার এমপি নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, জাপাকে আসন ছেড়ে দিয়েও সেখানে নৌকার প্রার্থী দেয় আওয়ামী লীগ। আবার বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাপার আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দেয়। এমন আসন সমঝোতায় কী লাভ, তা দলের চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান তিনি।
প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, জোট যার সঙ্গেই হোক, জাপার স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
বৈঠকে জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপস্থিত থাকলেও কথা বলেননি।
বৈঠকে বক্তব্য দেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সালমা ইসলাম এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, মীর আবদুস সবুর আসুদ, জিয়াউল হক মৃধা এমপি, নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সেলিম উদ্দীন এমপি প্রমুখ। সূত্র: সমকাল।