শনিবার, ১লা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১৭ই ভাদ্র, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মন খারাপে হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে!

লাইফস্টাইল ডেস্ক : কথাটা শুনতে আবাক লাগলেও সত্যিই। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বহু দিন ধরে মন খারাপের মতো সমস্যার শিকার হলে শরীরের প্রতিটি অংশের ওপর বিরূপ প্রভাব পরতে শুরু করে। আর তাই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়াসহ মেধাশক্তি কমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেরি লাগে না। সেই সঙ্গে ইনসমনিয়ার মতো সমস্যাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।

সম্প্রতি চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যান্সেট’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের দাবি,দীর্ঘ সময় ধরে ডিপ্রেশনের মতো রোগে ভুগলে মস্তিস্কেরর ভিতরে প্রদাহের মাত্রা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মস্তিস্কের সেলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। আর এমনটা হতে থাকলে অ্যালঝাইমারস, ডিমেনশিয়া এবং পার্কিসনের মতো জটিল মস্তিষ্কঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে আয়ুও কমে চোখে পরার মতো। এখন প্রশ্ন হল বর্তমানে সিংহভাগের জীবনই এত মাত্রায় স্ট্রেসফুল বা মানসিক চাপ যে মানসিক অবসাদের থেকে দূরে থাকাটা সম্ভব নয়।

তবে রোজের ডায়েটে কিছু খাবার রাখলে মন খারাপ ধারে কাছে ঘেঁষতেই পারে না। সেই সঙ্গে একাধিক মারণ রোগের প্রকোপ কমাতেও সময় লাগে না। আসুন জেনে নিই খাবার গুলো সম্পর্কে-

মাছ
কথায় আছে আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। প্রতিটি বাঙালি বাড়িতেই প্রতিদিন মাছ রান্নার রেওয়াজ রয়েছে। আর এ কারণে খেয়াল করে দেখবেন মেধাশক্তির দিক থেকে বাঙালি অনেকের থেকেই বেশ এগিয়ে রয়েছে। মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, বি৬ এবং বি১২ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই উপাদানগুলো মানসিক অবসাদের মতো রোগের আক্রমণ থেকে বাচ্চাদের বাঁচাতেও নানাভাবে সহায়তা করে থাকে।
দই
স্কুল থেকে ফেরার পর প্রতিদিন যদি আপনার বাচ্চাকে এক বাটি করে দই খাওয়াতে পারেন, তাহলে তাদের শরীরে সরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এতে স্ট্রেস/চাপ কমানোর পাশাপাশি মেধাশক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার মেধাশক্তি বেড়ে গেলে অ্যাংজাইটির মতো সমস্যা কমেই, সেই সঙ্গে পড়াশোনাতেও উন্নতি ঘটে।
গ্রিন টি
শরীরকে রোগ মুক্ত রাখার পাশাপাশি মেধাশক্তি বাড়াতে এবং মানসিক অবসাদকে বাগে আনতে গ্রিন টি-এর কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। এই পানীয়তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য উপাকারি উপাদান শরীর থেকে সব টক্সিক উপাদানদের বের করে মস্তিস্ককে এতটাই চাঙ্গা করে তোলে যে মানসিক অবসাদ কমতে সময় লাগে না।
নারকেল
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নারকেলে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি ফ্যাট শরীরে প্রবেশ করার পর মস্তিষ্কের ভেতরে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে মেধাশক্তি এতটা বাড়িয়ে দেয় যে স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের প্রকোপ তো কমেই, সেই সঙ্গে বুদ্ধি এবং স্মৃতিশক্তিরও উন্নতি ঘটে।
শতমূলী
মানসিক অবসাদের কারণে কি জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে? তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত অল্প করে শতমূলী গাছের মূল থেকে বানানো পাউডার খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন এমনটা করলে দারুণ উপকার মিলবে। সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টমকে শান্ত করার মধ্যে দিয়ে মনকে চাঙ্গা করে তুলতে এই প্রকৃতিক উপাদনটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল এবং সবজি
মানসিক অবসাদের প্রকোপ কামতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নানাভাবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, মন খারাপ, অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশনের মতো ভয়ঙ্কর রোগকে দূরে রাখতেও এই উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই এমন স্ট্রেসফুল পরিবেশে নিজের মনকে চাঙ্গা রাখতে চেরি, আঙুর এবং সবুজ শাক-সবজির মতো খাবার বেশি করে খেতে হবে। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ।
পুদিনা পাতা
পুরানো দিনের আয়ুর্বেদিক পুঁথি ঘাঁটলেই জানতে পারবেন নার্ভাস সিস্টেম সম্পর্কিত নানা রোগের চিকিৎসায় কিভাবে ব্যবহার করা হতো পুদিনা পাতাকে। আসলে এই পাতাটির ভেতরে থাকা মেন্থল নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে এতে থাকা ভিটামিন এ, সি, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, কপার এবং পটাশিয়াম মানসিক অবসাদ কমানোর পাশাপাশি ইনসমনিয়ার মতো রোগ সারাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পালং শাক
বাঙালির প্রিয় এই শাকটি নিয়মিত খাওয়া শুরু করলে শরীরে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। এর প্রভাবে মস্তিষ্কের ভেতরে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ কমে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে শারীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। তাই এবার থেকে যখনই মনটা বেশ খারাপ খারাপ লাগবে পালং শাক খাওয়া শুরু করবেন। দেখবেন উপকার মিলবে।
রসুন
রসুনে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ভেতরে থাকা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, ছোট থেকেই নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস করলে হার্টের কর্মক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায়। তেমনি ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
টমেটো
এতে উপস্থিত লাইকোপেন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর মন খারাপকে সমূলে উৎখাত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে মানসিক অবসাদের মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে না। এই কারণেই যাদের খুব স্ট্রেসফুল কাজ করতে হয়, তাদের প্রতিদিন একটা করে কাঁচা টমাটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
থানকুনি পাতা বা ব্রাহ্মি শাক
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এই প্রকৃতিক উপাদানটি কতটা সাহায্য করে থাকে, তা সবারই কম বেশি জানা। কিন্তু মানসিক অবসাদ কমাতেও থানকুনি নিজের খেল দেখায়, সে কথা হয়তো অনেকেরই জানান নেই। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই শাকটি খাওয়া মাত্র মস্তিষ্কের ভেতরে সেরাটোনিন লেভেল বাড়তে শুরু করে। ফলে মন এতটাই চনমনে হয়ে ওঠে যে মানসিক অবসাদ দূরে পালাতে সময়ই লাগে না।
লেবু
পাতি লেবু, কমলা লেবু এবং মৌসাম্বি লেবুর মতো সাইট্রাস ফলের শরীরে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রকৃতিক সুগার, যা স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ তো কমায়ই, সেই সঙ্গে মানসিক অবসাদকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই বাচ্চাদের প্রতিদিন এক বাটি করে ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
বাদাম
এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন বি২, ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্ক। এই সবকটি উপাদান সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বার করে দেয়। ফলে কোনওভাবেই স্ট্রেস ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।