বিলুপ্তপ্রায় বাঁশের তৈরী আবাসন সামগ্রী,বেকার ছইয়াল-বাঁশের কারিগর
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের তৈরী ঘরের ছাদ,বেড়া আর সীমানা প্রাচীর। বেকায়দায় পড়ছেন ‘ছইয়ালরা’(বাঁশ শ্রমিকরা)। অন্য কাজে মন বসাতে না পেরে অভাব অনটনে পরিবার পরিজন নিয়ে দিশেহারা বাঁশের শ্রমীকগোত্রটি। বর্তমান সময়ে তাঁরা কাজ চায় শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে। একজন ছইয়াল’র (বাঁশ শ্রমিকের) বাঞ্ছারামপুর সদরের রমজান মিয়া(৬৩) দীর্ঘ নি:শ্বাস নিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন“জন্মের পরেততে বাপদাদারে ছুইয়ালগিরি করতে দেখছি।নিজেরাও হিকছি ছুইয়ালের কাম-কাজ।অহন মাইনষ্যে খালি ইট-বালি দিয়া ঘর-বাড়ি করে,হের লাইগ্যা আমরা কোন কাম পাই না।অভাবে আছি।মাটির পুজা বইয়া চাইল কিন্ন্যা কোন রকম সংসার চালাইতেছি”।
সোমবার।দুপুর। প্রচন্ড গরম আর তীব্ররোধে বাঁশ ঝাড়ের নিচে কাঁজের ফাকে একান্ত আলাপ চারিতা করতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছলিমাবাদ গ্রামের বাঁশের দক্ষ কারিগর হাসু মিয়া (৬০) বললেন, ‘‘বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের ঘরের ছাদ, ঘরের বেড়া, বাঁশের চাল, দইয়ের ঝাপি তৈরী করতে পারেন। প্রচন্ড ধৈয্যের কাজ। বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইন তৈরী করা। সেই কাজটি প্রায় ২০বছর যাবৎ করে আসছেন তিনি। তার নিজ এলাকাসহ আশে পাসের এলাকায় সবাই তাকে বাঁশের কাজ বা ছইয়াল হাসু নামেই চেনেন। হাসু মিয়ার দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ চার সদস্যের একটি পরিবার। স্ত্রী গৃহীনি। বড় ছেলে হাশেম মিয়া ।বর্তমানে তার (হাশেম)একজনের আয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। ছেলেদের পড়ালেখার খরচও ঠিকভাবে চালাতে পারিনা। বড় ছেলে মাছের আরদে কাজ করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে কোন রকম তার পড়ালেখার খরচ চালায়।
ভিটে বাড়ি ছাড়া আর কোন জমিজমা আমার নেই। বাঁশের কাজ ছাড়া অন্য কাজ ভাল লাগেনা। এলাকায় ও আসেপাশে যে পরিমান কাজ হয় তা দিয়ে কোন রকমে দিন যাপন করা যায়।
ছইয়াল হাসু মিয়া জানান,-‘‘ আমার কোন ওস্তাদ নেই। প্রথমে উপনে নামে এক লোকের কাজ থেকে দৈইয়ের ঝাপি বানা শিখি। তারপর নিজের প্রচেষ্টায় তৈরী করি বাঁশ দিয়ে ঘরের বিভিন্ন ডিজাইনের ছাদ। হার্ডবোর্ডের চেয়ে বাঁশের তৈরী ছাদ ঠান্ডা বেশি হয়। একটি একটি ঘরের ছাদ তৈরী করতে হার্ডবোর্ডের চেয়ে খরচ একটু বেশি পড়ে। তবে টেকসই হার্ডবোর্ডের চেয়ে অনেক বেশি। নিম্মে এক’শ বছর। তার দলে সুন্দর, ইদ্রিস, ছানাউল্লাহসহ ৫/৬জন আছে । তারাও এই বাঁশের কাজ করতে পারে। আমি কাজ পেলে তারাও আমার সঙ্গে যান। যা আয় হয় তা ভাগ বাটোয়ারা করে নেই। এলাকায় তেমন কাজ নেই। টাকা পয়সাও নেই। নিজে ছইয়াল হইলেও নিজের দুচালা ভাঙ্গা ঘরটি বৃষ্টি হলে চুঁইয়ে পানি পড়ে।আমার যদি বহু টাকা থাকতো,তাহলে বাশেঁর বিভিন্ন ডিজাইনের রেডিমেট ছাদ,দইয়ের ঝাপি, বাঁশের বেড়ার দোকান দিতাম।যদি বাইরের এলাকা থেকে আমাকে যদি কেউ কাজের জন্য ডাকতো এক মাসের জন্য!!’’
বাঞ্ছারামপুর হাইস্কুল রোড সংলগ্ন জান্নাত নার্সারীর মালিক মো.মহসিন বলেন,-‘বাঁশের যে কোন পন্য দেখতে সুন্দর,মজবুত,দীর্ঘস্থায়ী হয়।বর্তমানে বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি,বাঁশের সংগ্রহশালা কম বা কেবলমাত্র চট্রগ্রাম-বান্দরবান থেকে আনতে হয় বিধায় বাঁশের কদর কমে গেছে।কিন্তু,আমি আমার নার্সারীর সব কাজে এখনো বাঁশের ব্যবহারকে প্রাধান্য দেই।’