রাবি অধ্যাপক রেজাউল হত্যা: দুই জনের ফাঁসি, তিন জনের যাবজ্জীবন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলায় দুই জনের ফাঁসি ও তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (৮ মে) দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে এই রায় দেন বিচারক শিরিন কবিতা আক্তার।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলো, অধ্যাপক রেজাউল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক রাবি’র ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম ও বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব।যাবজ্জীবন পাওয়া তিন আসামি হলেন- নীলফামারীর মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারকেলবাড়িয়া এলাকার আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী।
অধ্যাপক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, ‘এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এই রায়ই যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে এবং দ্রুত কার্যকর হয়। পলাতক শরিফুলকে আমরা দেখতে চাই। তাকে যেন দ্রুত গ্রেফতার করা হয়।’রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘অধ্যাপক রেজাউল অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার চিন্তাভাবনা করতেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তার এলাকায় তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন । তিনি মুক্তমনা হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গ্রহণযোগ্যতা অন্যরকম ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘অধ্যাপক রেজাউল হত্যার মূল পরিকল্পনা করা হয় রাজশাহীর বাগমাড়া থেকে। আসামিদের মধ্যে দুই জেএমবি মাসকাওয়াত হাসান ও শরিফুলএই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ছিল।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে। তিনি ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও উপদেষ্টা ছিলেন। অধ্যাপক রেজাউল ভালো সেতার বাজাতেন। তিনি একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠারও চেষ্টা করছিলেন।
এরপর ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর আট জনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক রেজাউস সাদিক।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার অভিযুক্ত আট আসামির মধ্যে খায়রুল ইসলাম বাঁধন, নজরুল ইসলাম ওরফে হাসান ওরফে বাইক হাসান ও তারেক হাসান ওরফে নিলু ওরফে ওসমান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।অভিযুক্ত অন্যরা হলেন, বগুড়ার শিবগঞ্জের মাসকাওয়াত হাসান ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে সাকিব, নীলফামারির মিয়াপাড়ার রহমত উল্লাহ, রাজশাহী মহানগরীর নারিকেলবাড়িয়া এলাকার আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী, রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শরিফুল এখনও পলাতক। আবদুস সাত্তার রয়েছেন জামিনে। আর বাকি আসামিরা রয়েছেন কারাগারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জীবিত ও মৃত আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পেরেছি। রায়ে জীবিত আসামিদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’তবে এ মামলার আসামি জেএমবির শরিফুল এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নিহত শিক্ষক রেজাউল করিমের মেয়ে রিজওয়ানা হাসিন শতভি। তিনি বলেন, ‘শরিফুল বাবাকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। সে এখনও গ্রেফতার হলো না। এই বিষয়টা আমাদের খুব পীড়া দেয়। আমরা তো তার বিচারই আগে দেখতে চাই।’
শরিফুল অধ্যাপক রেজাউলের ছাত্র ছিল। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় তার বাড়ি। অধ্যাপক রেজাউলের গ্রামের বাড়িও বাগমারায়। তাই তাদের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই শরিফুল পলাতক।
অধ্যাপক রেজাউল হত্যার পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আটক এক আইএস জঙ্গির সঙ্গে শরিফুলের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তাই শরিফুল ভারতেই পালিয়ে আছে বলে ধারণা করে রাজশাহীর পুলিশ। শরিফুলকে ধরিয়ে দিতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ দুই লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার হদিস পাওয়া যায়নি।