অবশেষে মারা গেলেন অগ্নিদগ্ধ সেই গৃহবধূ
শরণখোলা প্রতিনিধি : অবশেষে মৃত্যুর কাছে হেরে গেলেন বাগেরহাটের শরণখোলায় অগ্নিদগ্ধ সেই গৃহবধূ কমলা ওরফে নূরী (২০)। ৬ দিন দুর্বিসহ যন্ত্রনা সহ্য করে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। ওই গৃহবধূ উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বকুলতলা গ্রামের মো. ইলিয়াস হাওলাদারের স্ত্রী। তিনি একই উপজেলার ১ নম্বর ধানসাগর ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর গ্রামের মৃত মোক্তার খলিফার মেয়ে। কমলা নূরী নির্যাতনকারী ইলিয়াসের দ্বিতীয় স্ত্রী।
স্বামী ও শাশুড়ির নির্মম নির্যাতন থেকে বাঁচতে গত ৩ মার্চ এক সন্তানের জননী ওই গৃহবধূ কেরোসিন ঢেলে নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে তার শরীরের ৬০ শতাংশ মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়। প্রথমে তাকে শরণখোলা হাসপাতালে প্রথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হলে সেখানে ৬ দিন পর তিনি মারা যান। পুলিশ ও পরিবারের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নিহতের ভাই মো. আলামিন খলিফা জানান, তার বোন খুলনা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে ৬ দিন ধরে দুর্বিসহ যন্ত্রনা ভোগ করে আজ দুপুর ১টার দিকে মারা গেছে। বোনের স্বামী ইলিয়াস হাওলাদার ও তার শাশুড়ি তাসলিমা বেগম খুলনা মেডিকেলে রয়েছে। তাদের দুজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। শনিবার সকালে খুমেক হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করার পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এঘটনায় শরণখোলা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবিরুল ইসলাম অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলা রুজু হলে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের ব্যবস্থা করা হবে।
পারিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার ১ নম্বর ধানসাগর ইউনিয়নের ৮নম্বর পূর্ব রাজাপুর ওয়ার্ডের মৃত মোক্তার খলিফার মেয়ে অসহায় কমলা ওরফে নূরী (২০) পেটের দায়ে বছর তিনেক আগে কাজের সন্ধানে চট্টগ্রামে যান। সেখানে গিয়ে একটি পোশাক কারখানায় (গার্মেন্ট) কাজ নেন। চট্টগ্রামের কলসি দিঘিরপাড় একা বাসা নিয়ে থাকতেন। ওই একই এলাকায় উপজেলার ৪নম্বর সাউথখালী ইউনিয়নের মোতালেব হাওলাদারের ছেলে ইলিয়াস হাওলাদার (৩৫) একটি খাবার হোটেলে বয় হিসেবে কাজ করতেন।
একই এলাকার লোক হিসেবে এসময় তাদের মধ্যে পরিচয় ঘটে। ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। একবছর আগে তারা নিজেরাই বিয়ে করেন। এসময় ইলিয়াস তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রাখেন। পরে তারা চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে চলে আসে। কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি কমলাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা প্রথমে তাকে মানুষিভাবে নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে স্বামী-শাশুড়ি মিলে ধারাবাহিক শারীরিক নির্যাতন চালায়। তাকে বিভিন্ন সময় কারেন্ট শক দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলতো ইলিয়াস। এসব নিয়ে স্থানীয়বাবে বহুবার সালিস বৈঠক করা হলেও তাদের নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়তে থাকে। যন্ত্রণা সইতে না পেরে নিজেই গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কমলা।