মঙ্গলবার, ১৩ই মার্চ, ২০১৮ ইং ২৯শে ফাল্গুন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সৌম্য-লিটন-সাব্বিররা যাতে হারিয়ে না যায়…

স্পোর্টস ডেস্ক : কাউকে ছুড়ে ফেলে দিতে আমাদের জুড়ি নেই। আমাদের ক্রিকেট মস্তিষ্ক এতটাই ‘উন্নত’ যে, আমরা মনে করি প্রতি ম্যাচেই সব ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করবেন। প্রতি ম্যাচেই চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দেবেন। আর না পারলেই ইদানিং সোশ্যাল সাইটের যুগে তো ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা ক্রিকেটারদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার না করলে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কয়েকটি ম্যাচ কিংবা কয়েকটি সিরিজ খারাপ খেললেই সেই ক্রিকেটারকে বাদ দিতে হবে। এই বাদ দেওয়া যদি চিরতরে হয়, তাতেও আপত্তি নেই।

এই বাদ দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আমরা নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে অনেক প্রতিভাকে ছুড়ে ফেলেছি। তুষার ইমরান, শাহরিয়ার নাফীস, আব্দুর রাজ্জাক, অলক কাপালী, রাজিন সালেহ, আফতাব আহমেদদের মত সম্ভাবনাময় তারকাদের আমরা হেলায় হারিয়েছি। তাদের কেউ বিপথে গিয়েছেন, এর দায় কিন্তু দেশের ক্রিকেটাঙ্গণের এড়ানোর সুযোগ নেই। তবে আমরা এড়িয়ে যাই। আমাদের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রকরা ক্রিকেটারদের ছুড়ে ফেলে দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। কিন্তু একবারও ভাবেন না, এদের সঠিক পরিচর্যা দরকার ছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ক্রিকেটে আলোচিত তিন তরুণ নাম- সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান এবং লিটন দাস। টি-টোয়েন্টির যুগে যখন দেশে হার্ডহিটারের অভাবে হাহাকার চলে, তখন এই তিন তরুণ ক্ষণে ক্ষণে জানিয়ে দেন, প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করতে তাদের জুড়ি নেই। সাব্বির ফর্মহীনতায় ভুগছেন। সৌম্য ফর্মে ফেরার পথে আছেন। আর লিটন দলে সুযোগ পেলেই প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তিনি তিন ফরম্যাটেই একাদশে থাকার যোগ্য। কিন্তু তিনজনের এক জায়গাতেই গলদ- ধারাবাহিকতার অভাব।

এই ধারাবাহিকতার অভাবের কারণেই তাদের অনেক কথা শুনতে হয়; অনেক সমালোচনা হজম করতে হয়। একাদশ থেকে এমনকী স্কোয়াড থেকেও বাদ পড়তে হয়। তাদের বাদ দেওয়ার জন্য সোশ্যাল সাইটে দাবি ওঠে। সাম্প্রদায়িক এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়। নির্বাচকেরা আজগুবি সব সিদ্ধান্ত নেন। অথচ, দলের প্রয়োজনীয় সময়ে এরাই ভূমিকা রাখেন বিভিন্নভাবে। গতকালের ম্যাচে দেখুন, তিনটি দারুণ ক্যাচ নিলেন সাব্বির। ওপেনিংয়ে নেমে ১৯ বলে ৪৩ রানের টর্নেডো বইয়ে দিয়ে জয়ের ভিত রচনা করলেন লিটন। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর ২২ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২৪ রানের ইনিংস খেললেন সৌম্য। কিন্তু মুশফিকের অতিমানবীয় ম্যাচ জেতানো ইনিংসে ঢাকা পড়ে গেল তাদের অবদান।

ছুড়ে ফেলা যেতেই পারে। এটা কোনো পরিশ্রমের কাজ না। কলমের এক খোঁচায় কোনো ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শেষ করে দেওয়া যায়। কিন্তু একজন অ-ধরাবাহিক ক্রিকেটারকে গড়ে তোলাটা সহজ কাজ নয়। প্রচুর পরিচর্যা এবং সঠিক দিকনির্দেশনার দরকার আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই জিনিগুলোর বড় অভাব। আমরা সবাই ছুড়ে ফেলতে চাই। কিন্তু গড়ে তুলতে চাই না। আমরা ভাবি না যে, সাকিব-তামিম-মুশফিকরা বড়জোর আর ৫ বছর খেলবেন। মাশরাফি ২-৩ বছর। তারপর এদেশের ক্রিকেটের কী হবে? এখনই যদি ভবিষ্যতের তারকাদের গড়ে তোলা না হয়, তাহলে শ্রীলঙ্কার মত জেনারেশন গ্যাপের ধকল সামলাতে হবে।

সৌম্য-সাব্বির-লিটনদের ছুড়ে ফেলবেন না। তাদের গড়ে তুলুন। সঠিক পথের দিশা দেখান। ওরাই এদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত। আগামীর ক্রিকেটবিশ্বে ওরাই রাজত্ব করবে।

Print Friendly, PDF & Email

এ জাতীয় আরও খবর

সাড়ে তিনদিনেই হার মানলো অস্ট্রেলিয়া

বিমানে ওঠার আগে সোনামনি লিখেছিল ‘তৃতীয় হানিমুন’

এই মানুষগুলোর জন্য প্রার্থনা করুন : মুশফিক

পাইলটের অনুরোধ রাখেনি কন্ট্রোল রুম (পাইলটের শেষ অডিও রেকর্ড)

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০১ রানের লক্ষ্য দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া

শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ : যে সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়াল অপুর জীবনে