অনায়াসেই বাংলাদেশকে হারালো ভারত
স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পূর্ণ শক্তির ভারতের বিপক্ষে সমানতালে লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটি হেরেছিল শেষ তিন বলের বোকামিতে। সে তুলনায় শ্রীলঙ্কায় এবারের নিদাহাস ট্রফিতে ভারতীয় দলটা অনেক দুর্বল। কোহলি নেই, ধোনি নেই। নেই আরও কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার।
তবুও, এই দুর্বল দলটির সামনে দাঁড়াতে পারলো না বাংলাদেশ। টাইগারদের দলে হয়তো এক সাকিব আল হাসান নেই; কিন্তু বাকি পুরো শক্তি তো ছিল। তবুও যাদেরকে প্রথম ম্যাচে বলতে গেলে উড়িয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, তাদেরকে বাংলাদেশ হারানো তো দূরে থাক, উল্টো নিজেরাই হেরেছে খুব বাজেভাবে। বাংলাদেশকে হেসে-খেলেই বলতে গেলে রোহিত শর্মার দল হারিয়েছে ৬ উইকেটের ব্যবধানে। সে সঙ্গে নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশের যাত্রাটা শুরু হলো পরাজয় দিয়েই।
১৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় দুই ওপেনার করেন উড়ন্ত সূচনা। তিন ওভার পার হতেই ২৮ রান তুলে ফেলেন তারা। অবশেষে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। ১৩ বলে ১৭ রান করা রোহিত শর্মাকে বোল্ড করেন এই পেসার।
এরপর ভারতীয় আরেক ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে টাইগার শিবিরে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেন রুবেল হোসেন। তার বলে এবার ইনসাইড-এজ ৭ রান করা ঋশাভ পান্ত।
৪০ রানের মধ্যেই ভারতের দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা এবং ঋশাভ পান্তকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের সামনে দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন মোস্তাফিজ আর রুবেল হোসেন; কিন্তু তৃতীয় উইকেট জুটিতে শিখর ধাওয়ান এবং সুরেশ রায়না মিলে গড়েন ৬৮ রানের জুটি।
এই জুটির ওপর ভর করেই মূলত জয়ের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে আসে ভারত। অবশেষে দলীয় ১০৮ রানের মাথায় সুরেশ রায়নাকে ফেরান রুবেল হোসেন। তার হালকা শর্ট বলটি রায়না বুঝতে না পেরে তুলে দেন স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে। ২৮ রান করে ফিরে যান রায়না।
এরপর মানিস পান্ডেকে নিয়ে আরও একটি জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শিখর ধাওয়ান। তার আগেই তিনি হাফ সেঞ্চুরি করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত তাসকিন আহমেদের বলে ৫৫ রান করে আউট হন ধাওয়ান। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার। কিন্তু বল গিয়ে জমা পড়ে লিটন কুমার দাসের হাতে। ৪৩ বলে ৫ বাউন্ডারি এবং ২ ছক্কায় এই রান করেন তিনি।
বাকি কাজটুকু অনায়াসেই সেরে ফেলেন মানিস পান্ডে আর দিনেশ কার্তিক। ১৯ বলে ২৭ রানে মানিস এবং ২ রানে অপরাজিত থাকেন কার্তিক।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বলতে গেলে দাঁড়াতেই পারেনি ভারতীয় বোলারদের সামনে। কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন সাব্বির রহমান আর লিটন কুমার দাস। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ভারতীয়দের সামনে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ৩৪ রান করেন লিটন দাস এবেং ৩০ রান করেন সাব্বির রহমান।
তামিম ইকবালের সঙ্গে সৌম্য সরকার ওপেনিংয়ে শুরুটা করেছিলেন ভালোই। হঠাৎই ভুল করে বসেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ১২ বলে ১৪ রান করে পেসার জয়দেব উনাদকাতের বলে শর্ট ফাইন লেগে যুজবেন্দ্র চাহালকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর শার্দুল ঠাকুরের ওভারের তৃতীয় বলটায় তামিম ইকবালকে আউট দিয়ে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে যান দেশসেরা এই ওপেনার। পরের দুই বলে দুটি বাউন্ডারিও মারেন তিনি।
কিন্তু ওভারের শেষ বলে আরেকটু চড়াও হতে গিয়ে সৌম্যর মতোই শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন তামিম। ২ চারের সাহায্যে বাঁহাতি এই ওপেনার করেন ১৬ বলে ১৫ রান।
ইনিংস বড় করতে পারেননি মুশফিকুর রহীমও। দারুণ খেলতে থাকা এই ব্যাটসম্যান বিজয় শঙ্করকে এগিয়ে এসে হিট করতে চেয়েছিলেন। বলটা ব্যাটে আলতো ছোঁয়া পেয়ে চলে যায় ভারতীয় উইকেটরক্ষক দিনেশ কার্তিকের হাতে। আম্পায়ার আউট দেননি। সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নিয়ে নেন কার্তিক।
রিভিউতে ব্যাটে-বলে সংযোগের প্রমাণ মেলায় আউট হয়ে ফিরতে হয় মুশফিককে। ১৪ বলে তিনি করেন ১৮ রান। মারকুটে এই ইনিংসে ছিল ২ চার আর ১টি ছক্কার মার।
এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলের ভারপ্রাপ্ত এই অধিনায়ক ৮ বল খেলে করেন মাত্র ১ রান। শঙ্করের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেন তিনি।
লিটন দাস আর সাব্বির রহমান বাংলাদেশকে ১০০ রানের ঘর পার করে দিয়েছেন কোনোমতে। তবে যুজবেন্দ্র চাহালকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান দারুণ খেলতে থাকা লিটন। ৩০ বলে ৩ চারে ৩৫ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
মেহেদী হাসান মিরাজ ৩ বলে ৩ রান করে ফেরার পর ইনিংসের একদম শেষভাগে এসে ২৬ বলে ৩ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৩৫ রান করে আউট হয়েছেন সাব্বির রহমান। ভারতের পক্ষে ৩৮ রানে ৩টি উইকেট নিয়েছেন পেসার জয়দেব উনাদকাত।