বড় হয়ে দুনিয়াটা যেভাবে দেখেছি সেটাকেই জীবন ভেবেছি : হ্যাপি
বিনোদন প্রতিবেদক : একটা সময়ের ভালোবাসার নাম ছিল আইফোন! কয়েকদিন পরপর ফোন চেঞ্জ করতাম। সেই সময়গুলো দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কি যে ইচ্ছা ছিল! ঘুরাঘুরির নেশা ছিল চরম আকারে! রাত দুপুরে মন হল কক্সবাজার যাব, সোজা চলে যেতাম বিমানের টিকিট কেটে! একা একা ঘুরে আবার চলে আসতাম! হঠাৎ মন চাইল, চলে গেলাম নেপালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে!
টাকা-পয়সা ধুলার মত উড়াতাম! টাকা-পয়সাকে স্রেফ কাগজ ভেবেই বোধহয় ট্রিট করতাম! কোন দিন টাকা জমাতে হবে এমন চিন্তায় মাথাতেই আসতো না। হাতে ২ লাখ টাকা থাকলে ৫ লাখ খরচ করার টার্গেট থাকতো। তাও কি! হাবিজাবি করে! কাজের কাজ কিছুই না। এই ঘোরাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, শপিং etc.
জীবনের লক্ষ্য ছিল জাস্ট ভালো থাকা। তবুও কেনো যেন ভালো থাকতে পারতাম না। হাজারো উল্লাসের ভিতরেও কোথাও যেন শান্তি খুঁজে পেতাম না। মানে অপূর্ণতা!
জীবনের অনেকটা সময় পার করেছি দেশের বিখ্যাত পার্লারে রূপচর্চায়, যদিও নিজের কাছে ন্যাচারাল আমাকেই ভালো লাগতো! কত টাকা যে এই পার্লারে দিয়েছি হিসাব নেই।
কিছুদিন আগেও লাখ লাখ টাকার এক্সপেনসিভ সব ওয়েস্টার্ন ড্রেস বস্তা ভরে বের করা হয়েছে। ঘরে রেখে কি লাভ! এর আগেও দফায় দফায় বের করা হয়েছে! স্টোররুমে সব দামি দামি হাই হিল, বুট, পড়ে আছে, কতগুলো বেরও করা হয়েছে! শখের কেনা সব। জুতা আর ব্যাগ দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যেত। কিনতাম আর কিনতাম! আহা! যতক্ষণ না টাকা শেষ হতো!
আমার কাছে মিডিয়ায় কাজ করাটা ছিল শখের। দাপট নিয়ে থাকতাম। কাউকে ফালতু কথা বলার সুযোগ দিতাম না। কারণ আমি জানতাম মিডিয়াতে কাজ না করলেও আমার কিছু যায় আসে না। তবে কাজ করতে খুব ভালোবাসতাম, নিজেকে বিভিন্ন ক্যারেক্টারে, বিভিন্ন ভাবে রিপ্রেজেন্ট করতে ভালো লাগতো। সেটা এক মোহনীয় জগৎ। একবার কেউ সেখানে কাজ শুরু করলে আর ফিরতে তার ইচ্ছা করবে না।
নিজের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে গর্ববোধ হতো। মনে হতো আমি অবশ্যই অনেক বড় অভিনেত্রী হবো, যাকে সবাই অভিনয়ের জন্য চিনবে। মরে গেলেও বলবে আমার কথা। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অভিনয় করে যাব। এসব ছিল মনের ভেতর।
আমি যে কত আধারে ছিলাম কে বোঝাবে আমাকে! অনেকটা কথিত নারীবাদীও ছিলাম। নারীর অধিকার নিয়ে বেশ সচেতন ছিলাম। অতিরিক্ত সাহস ছিল আমার। ছেলেদের চেয়ে নিজেকে কোনো অংশে কম ভাবতাম না।চিন্তা চেতনা ছিল, একটা ছেলে যা পারে আমি তার বেশি করতে পারব। মেয়েরা কেন পিছিয়ে থাকবে। সমান নয় বরং আগে আগে চলবে!
আসলে আমার পর্যন্ত তো দ্বীনের কথা কেউ কোনোদিন সেভাবে বলেনি। ইসলামের সৌন্দর্য তো কেউ তুলে ধরেনি। আসল পথ কেউ আঙ্গুল দিয়ে বলেনি, ‘এই যে মেয়ে কোথায় চলছো তুমি, ফিরে আসো আল্লাহর দ্বীনের পথে’ আমি জানবো কিভাবে তবে!
বড় হয়ে দুনিয়াটা যেভাবে দেখেছি সে সবকেই জীবন ভেবেছি। তার বাইরে কিছু ভাবিনি। ভাবতে পারিনি। আমরা কেমন জানেন, কিছু দ্বীনদার লোক (যারা নিজেকে ভাবে আরকি!) তারা মানুষকে বলবে’ এই এটা করো না জাহান্নামে যাবা, এটা হারাম, এটা ঠিক না। তুমি খারাপ এই টাইপ বোঝানো’ এতে করে অনেকে ভাবে, ওরে বাবা! ইসলাম এত কঠিন! দূরে সরে যায়।
কিন্তু যদি এভাবে না হয়ে ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতো এরকম, আল্লাহ তোমার জন্য নাজ নেয়ামতে ভরা জান্নাত রেখেছেন, অনেক আরাম পাবা, অনেক পুরস্কার পাবা, তার জন্য তোমাকে কিছু কাজ করতে হবে, যেমন তওবা করে নাও, গুনাহ ছেড়ে দাও, আল্লাহকে ভালোবাসো, তার সব হুকুম মেনে চলো, নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল।
আমি যখন অন্ধকারে ডুবে ছিলাম তখন তো কেউ আমাকে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দেননি। যখন আল্লাহ নিজ রহমতে আমাকে তার ছায়াতলে আশ্রয় দিলেন। তখন আমার কোনটা করা ঠিক বেঠিক নিয়ে উঠে পড়ে লাগলেন। আসলে তখন ছিল প্রকাশ্যে শত্রু আর এখন গোপন শত্রু। অনেকের সহ্য হয়না আমার পরিবর্তন। সেটা জানি। এত হিংসা সুবহানআল্লাহ!
কোনো এক কথিত ফেসবুকের দ্বীনিবোন আমাকে নিয়ে বেশকিছু দিন ৯০% অপবাদ এবং ১০% গীবত করে ফেসবুক ভাসিয়েছিলেন। ওখানে অনেকের কমেন্টেও এমন ছিল যে, ‘সে যে পরিবর্তন হয়েছে তা নিয়ে আমার আগে থেকেই ডাউট ছিল।’
এরা হচ্ছে- দ্বীনি লেবাসে, হাহাহা। তবে ভালো হচ্ছে, সে বা যারা আমাকে ফেসবুকে এরকম বলে হাজার হাজার সাক্ষী রেখেছে, কিয়ামতের দিন তারা সাক্ষ্য দিবে। কতবার যে মাফ করতে চাইলাম কেন যেন পারলাম না। অনেক দ্বীনিবোন সেদিন স্ক্রীনশট দিয়ে বলেছে, এসব কি বলেছে দেখো, আমি চুপ ছিলাম। সেদিনই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহকে বলেছিলাম- ‘এটা অবশ্যই তোমার উপর ছেড়ে দিলাম, আমাকে এভাবে অপমান করার জন্য তোমার বিচারের আশায় থাকবো।’ জুলুমের স্বীকার হয়েছিলাম। মজলুম হয়েছিলাম।
যারা আমার পরিবর্তন নিয়ে কঠিন চিন্তায় আছেন তাদের জন্য আমার মত জালেমের (নিজের উপর জুলুমকারী) পক্ষ থেকে পরামর্শ, নিজেকে নিয়ে ফিকির করুন। আপনার ধারণানুযায়ী আমি না হলে কিন্তু আমার নামে গীবত আর অপবাদের জন্য মাফ করবো না। এটা আমার হক। জীবনে হয়তো অনেক ভালো আমল করছেন, করেছেন সে সব ধংস হওয়ারও ভয় রাখবেন। আমার না কোনো আমল আছে না কিছু! কিছুই নেই। আল্লাহ যদি মাফ করেন সেই আশায় আছি। ভিখারি আমি।
যারা আলেম হয় তারা ১০-১২ বছর পড়াশোনা করে ইসলাম জেনে সেইমত চলে। অনেকে অনেক আগে দ্বীন পেয়েছে। আমি আবেদ, আমি দ্বীনকে জানছি-ই মাত্র দুই বছরের একটু বেশি। শিশু আমি এলেমের লাইনে। আল্লাহ যেন আমাকে পরিপূর্ণ হেদায়েত দান করেন। এবং হেদায়েতের উপরে চলার তৌফিক দান করেন। ঈমানের সাথে যেন আমার মৃত্যু হয় সেই দোয়া চাই। আমার কোনো কথায় কষ্ট পেলে আপনাদের মহত্ব দিয়ে আমাকে মাফ করবেন।
আমি ফেরেশতা না। আমি মানুষ, আমার ভুল হবে। আমার ঈমান বাড়বে, আমার ঈমান কমবে! পরিপূর্ণ কেউ হতে পারে না। তবে চেষ্টায় থাকতে হবে ইনশাআল্লাহ! আমার পেছনে লেগে থাকা মানুষগুলো হয়তো আমার জান্নাতে যাওয়ার ওছিলা হবে। তাদের জন্যই আমার জান্নাতে যাওয়া সহজ হবে ইনশাআল্লাহ! আমার গুনাহগুলো যে তাদের কাঁধে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ আকবার!
(নাজনীন আক্তার হ্যাপির ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)