বাঞ্ছারামপুরে এক অসহায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে আবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ : এক রহমান ডাক্তারের দাপট!
---
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি : ‘বেলা তখন সকাল গড়িয়ে দুপুর।ঝম্ঝম্ বৃষ্টি।মুক্তিযোদ্ধা জহির মিয়ার অন্ধ ছেলে মতিয়ূর রহমান ছাগলের ঘাস সংগ্রহের জন্য বাড়ি হতে বস্তা হাতে নিয়ে মূল সড়কে যাওয়ার চেষ্টা করছেন ধীরে-ধীরে।কিন্তু,সেটি কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছিলো না।অবশেষে বুক ঘুরিয়ে কোন রকম অন্ধ মতি সড়কে আসতে সমর্থ হয়,কিন্তু মাথার ছাতাটি বন্ধ করতে হয় স্থান সংকুলানের অভাবে।’-ঠিক এরকমই একটি দৃশ্য দেখা গেলো আজ (রবিবার) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে মৃত মুক্তিযুদ্ধা জহিরুল ইসলামের বাড়ির পথে যেতে যেতে।
সরেজমিনে,খোজ ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-বেশ কয়েক বছর আগে বীরমুক্তিযোদ্ধা জহির মারা যাবার পর,এই পরিবারটিকে কোনঠাসা করতে মরিয়া হয়ে উঠে স্থানীয় ধনাঢ্য ও ক্ষমতাবান প্রভাবশালী ব্যক্তি মো. আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।এলাকায় তার পরিচিতি রহমান ডাক্তার নামে।
অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলামের বৃদ্ধা ও অসুস্থ্য স্ত্রী আয়শা
বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত ও পুরো জায়গাটি দখল করতেই স্থানীয় রহমান ডাক্তার তাদের বাড়িটিকে পেছনে ফেলে তার স্বামীর বোনের (ননাশ) ৪ শতক অংশ রাস্তা হতে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর কিনলেও,তিনি তা না করে মূল সড়ক সংলগ্ন পূর্ব-পশ্চিম বরাবর স্কয়ার আকারে সম্মুখভাগ দখল করে তাদের বাড়িতে প্রবেশদ্বার আটকে দেন।
যেনো আমরা বাড়ি হতে বের হতে না-পারি।কিংবা পরবর্তীতে আমার স্বামীর ভিটা তার কাছে দিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হয়।
জানা গেছে,দরিদ্র ও অসহায় এই মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক (মুক্তিযোদ্ধা সনদ নং ১১৮০,গেজেট নং ১৮৮৩) এর ৪ মেয়ে ৩ ছেলে।বড় ছেলে অন্ধ।মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন বহু কষ্টে।দুই ছেলে পড়াশুনা করছে।
পরিবারটি জানায়,১৯৭১ সালে আমার স্বামী বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন।দেশ স্বাধীন করে এখন তার পরিবারটিই পরাধীন।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়ে বলেন,‘অবিলম্বে রহমান ডাক্তার গং আমার ভাঙ্গাবাড়িটিকে পেছনে ফেলে আবদ্ধ করে রেখেছে,তা দূর করতে গা’য়ের জোরে তোলা তার বানিজ্যিক বিল্ডিংটি সড়িয়ে মূল দলিল অনুযায়ী উত্তর-পূর্ব দিকে জায়গা নিক।নতুবা-আমাদের উচ্ছেদ হতে হবে,ঘর হতে বের না হতে পেরে’।
প্রতিবেশী সোবহান মিয়া জানান,-রহমান ডাক্তার ও তার মাদকাসক্ত ছেলে মাহবুবের ভয়ে এলাকায় কেউ কোন কথা বলতে পারে না।তাদের গায়ের জোরে অসহায় মুক্তিযোদ্ধার পরিবারটিকে রীতিমতো আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।এটা অমানবিক।
এবিষয়ে জানতে গিয়ে রহমান ডাক্তার জানান,-‘আমি ঐ মুক্তিযোদ্ধার এক অংশীদারের কাছ থেকে টাকা দিয়ে জায়গা কিনেছি।বিষয়টি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর দেওয়ানী আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে।আদালত যা রায় দেবে মেনে নিবো।এর চেয়ে বেশী কিছু বলার নেই’।