g সু চির পুরস্কার ও সম্মানসূচক ডিগ্রি স্থগিত | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ৭ই আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সু চির পুরস্কার ও সম্মানসূচক ডিগ্রি স্থগিত

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
news-image

---

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির কয়েকটি পুরস্কার এবং সম্মানসূচক ডিগ্রি স্থগিত করেছে বা স্থগিতের পর্যালোচনা করছে ব্রিটেনের কয়েকটি সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।

রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ব্রিটিনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য ইউনিয়ন ইউনিসন ঘোষণা করে, তারা সু চির সম্মাননাসূচক সদস্যপদ স্থগিত করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের সু চির অনেক কিছুই করার আছে বলেও উল্লেখ করে তারা।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে ইউনিসনের প্রেসিডেন্ট মারগারেট ম্যাককি গার্ডিয়ানকে বলেন, আমরা ইউনিসনে তার সম্মাননাসূচক সদস্যপদ স্থগিত করেছি। আমরা আশা করছি তিনি আন্তর্জাতিক চাপে সাড়া দেবেন। উল্লেখ্য, সু চি তার রাজনৈতিক জীবনে গৃহবন্দি থাকার সময় ২০১০ সালে ওই সদস্যপদ পেয়েছিলেন।

সু চি যখন বিরোধী দলে থেকে সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধীতা করে গণতন্ত্রের ডাক দিয়েছিলেন তখন তাকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছিল ব্রিসটল ইউনিভার্সিটি। তারাও সু চিকে দেয়া পুরস্কার পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে।

ওই বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, ১৯৯৮ সালে ড. অং সান সু চিকে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সে সময় তিনি বার্মায় মানবিক অধিকার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সু চিকে প্রদান করা ওই সম্মানসূচক ডিগ্রি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

এদিকে, লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বলছে, তারা সু চির সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি বাতিল করবে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, গণহত্যা বন্ধে সু চির বিরোধী অবস্থান প্রকাশ করতেই আমরা তার সম্মানসূচক প্রেসিডেন্সি বাতিল করব।

গত ৩০ বছরে গ্লাসগো, বাথ অ্যান্ড ক্যামব্রিজসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন সু চি। অক্সফোর্ডের উপদেষ্টারা ঘোষণা করেছেন, তারা সু চিকে দেয়া ১৯৯৭ সালের দ্য ফ্রিডম অব দ্য সিটি অব অক্সফোর্ড পুরস্কার পরবর্তী মাসের উপদেষ্টা পরিষদের আলোচনায় পুনর্বিবেচনা করবেন। ১৯৯৩ সালে সু চিকে সম্মানিত ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছিল অক্সফোর্ড।

১৯৯১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন সু চি। রোহিঙ্গা সংকটে তার অবস্থানের কারণে ওই নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারেরও দাবি উঠেছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তরে। অনলাইনে বিভিন্ন সাইটে অং সান সু চির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহারের আবেদনে সই করেন হাজার হাজার মানুষ। অবশ্য, সু চিকে দেয়া নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির প্রধান বেরিট রেইস এন্ডারসন।

গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ অভিযানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এ দফায় চার লাখেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। এই শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

অবশ্য, মিয়ানমার সরকারের দাবি, রাখাইনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নয়, তারা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। তবে জাতিসংঘের দাবি, সেখানে জাতিগত নিধন চলছে।

এমন পরিস্থিতিতে নীরব থাকায় বেশ সমালোচিত হচ্ছিলেন সু চি। ‘দীর্ঘ’ নীরবতা ভেঙে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। সুচির ভাষণ নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও, তার ভাষণের কিছু কথা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ, সুচি বাস্তবতা এড়িয়ে গেছেন।

তিনি তার ভাষণে বলেন, চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান কেন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। জাতিসংঘ ওবিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যখন বলছে- রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করা হচ্ছে, তখন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সুচি অবগত না থাকার কথা বেশ হতবাক করেছে।

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে না। তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি মুসলিম’ হিসেবে বর্ণনা করে। সুচিও তার বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। জাতির উদ্দেশে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তেমন কোনো সমাধানের কথা উল্লেখ না করলেও সেনাবাহিনীর পক্ষেই ঠিকই সাফাই গেয়েছেন এই নেত্রী। মানবিক সংকটে সু চির এমন অবস্থানকে কেন্দ্র করেই তার পুরস্কার স্থগিত করা হলো।

এ জাতীয় আরও খবর