প্রয়োজনের বেশি চাল আমদানিতে প্রধানমন্ত্রীর বারণ
---
নিউজ ডেস্ক : ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় আরো কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ওই মন্ত্রীরা নিজ নিজ প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গেলেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে তাঁরা অর্থমন্ত্রীকে সমর্থন দেন।
দুজন সিনিয়র মন্ত্রী জানান, অর্থমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, এবারের ঈদের ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে যাওয়ায় ছুটির পরিমাণ কম। সরকারি চাকরিজীবীরা অনেকেই ঈদের সময় বাড়ি যেতে পারবে না। এ কারণে ঈদের ছুটি বাড়ানো যেতে পারে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করেননি কেন?’ জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈঠকের এজেন্ডায় না থাকায় আলোচনা হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী ক্ষমতায় এ ছুটি দিতে পারেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত মন্ত্রীদের জানান, সব কিছুতে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা ঠিক নয়।
এদিকে ঈদের ছুটির বিষয়টি আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আলোচনা না হওয়ায় বৈঠক-পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘ছুটি নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি, (মন্ত্রিসভা বৈঠকে) আলোচনাও হয়নি।’
আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। সে অনুযায়ী ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর ঈদের সাধারণ ছুটি নির্ধারিত আছে। এর মধ্যে ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এবং ২ সেপ্টেম্বর শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিও।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটি বাড়িয়ে ছয় দিন করার জন্য গত ২৫ জুলাই প্রস্তাব দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চারটি সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে ওই প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়টি। এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় গণপরিবহনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপকে। দীর্ঘ যানজটের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ কমানোর জন্য ঈদের ছুটি বাড়ানো দরকার বলে মনে করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আরো মনে করে, ঈদের আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব প্রাণহানি হয় তা লাঘব করা এবং ঈদের পরে অফিস খোলা হলেও কর্মচারীদের অনুপস্থিতি রোধ করার জন্য ঈদের ছুটি বাড়ানো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ছুটির প্রস্তাবেও ওই চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়।
ঈদে ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাবটি মূলত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েরই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইনোভেশন টিম নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিন থেকে কমিয়ে ১৪ দিন নির্ধারণ করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করা এবং ঈদের ছুটির সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করার প্রস্তাব দেয়। অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের সরকারি ছুটির সঙ্গে দুই দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটির প্রস্তাব করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এমন প্রস্তাব দেওয়ার পরও নিয়মতান্ত্রিকভাবে ছুটির প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
এর আগেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ঈদুল ফিতরের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল, শুধু ঈদের ছুটি বাড়ানো নয়, অন্যান্য প্রধান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসবের ছুটিও বাড়ানো দরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই অভিমত পাওয়ার পর বিষয়টি ইতিবাচক ধরে নিয়েই সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের আগে আর ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেননি প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় ছুটি না বাড়ানোর কারণ হিসেবে অর্থবছর শেষ এবং সংসদে বাজেট পাস করার বিষয় সামনে আনা হয়েছিল।
এর আগে পুলিশের পক্ষ থেকেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর আরজি জানানো হয়েছিল। ছুটি বাড়ানোর পক্ষে তাদের যুক্তি ছিল—ছুটি বাড়ানো হলে এক দিনে রাস্তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়বে না। ঘরমুখো যাত্রীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে বাড়ি যেতে পারবে। এতে করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কাজ করা সুবিধাজনক হবে। ঈদের ছুটি বাড়ানো নিয়ে এর আগে সচিব সভায়ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভা বৈঠকেও।
ঈদের ছুটি কম হলে যারা দূরে থাকেন তাঁদের পক্ষে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করা সম্ভব হয় না। যাওয়া-আসা করতে পথেই সময় শেষ হয়ে যায়। বাইরের অনেক দেশে জাতীয় ও ধর্মীয় উৎসবে দীর্ঘদিন ছুটি দেওয়া হয়।
প্রয়োজনের বেশি চাল আমদানি না করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকের এজেন্ডা ছিল খাদ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কম্বোডিয়া সফর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ বিষয়ে। বিষয়টি উপস্থাপন শেষ হলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ চাল আমদানির সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চান। ওই সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং খাদ্যসচিব কায়কোবাদ হোসেন খাদ্য মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তাঁরা জানান, বর্তমানে সরকারের গুদামে চার লাখ ৪৫ হাজার টন চাল ও গম মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে তিন লাখ ১১ হাজার টন চাল এবং এক লাখ ৩৪ হাজার টন গম রয়েছে। চলতি অর্থবছরে গত ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি খাতে এক লাখ এক হাজার টন চাল এবং বেসরকারি খাতে আট লাখ ৮২ হাজার টন খাদ্যশস্য (চাল ও গম) আমদানি করা হয়েছে। তাঁরা আরো জানান, কম্বোডিয়া থেকে চাল আনা হচ্ছে। আগামী পাঁচ বছরে ১০ লাখ টন চাল আমদানির জন্য কম্বোডিয়ার সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আসছে থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে। মিয়ানমার থেকেও চাল আনার প্রক্রিয়া চলছে।
বৈঠকের ওই পর্যায়ে দেশে খাদ্য ঘাটতি কত তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। তখন বৈঠকে জানানো হয়, আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে খাদ্য ঘাটতি ২০ লাখ টন হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে এই ২০ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য যেন আমদানি না করা হয়। কোনো অবস্থায়ই প্রয়োজনের বেশি চাল আমদানি করা যাবে না। অতিরিক্ত চাল আমদানি করা হলে দেশীয় কৃষকরা ফসলের দাম পাবেন না। কৃষকরা আমন চাষ করছেন। যদি অতিরিক্ত চাল আমদানি করা হয় তাহলে তারা আমনের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবেন। এ কারণে যতটুকু প্রয়োজন তা যাচাই করেই যেন চাল আমদানি করা হয়।
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, ৩১ জানুয়ারির মধ্যে দেশের খাদ্য ঘাটতি মেটাতে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে ১৫ লাখ টন চাল এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী।
বন্যাকবলিত এলাকায় অস্থায়ী বাঁধ অপসারণের নির্দেশ : গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আলোচনার একপর্যায়ে বৈঠকে জানানো হয়, বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় পানি নামতে পারছে না। বিভিন্ন ব্রিজ-কালভার্টের নিচে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে অনেকে মাছ চাষ করছে। এতে করে বন্যার পানি নামতে পারছে না। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদসচিবকে ওই সব অস্থায়ী বাঁধ অপসারণের জন্য ডিসিদের চিঠি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
সিডিএ কেডিএ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এবং খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, আইনে বড় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। খসড়ায় যা এসেছিল তাই রাখা হয়েছে, শুধু ‘সচিব’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। এখন দুই কর্তৃপক্ষেই একজন করে মেম্বার সেক্রেটারি থাকবেন। আইন দুটি সামরিক শাসনামলে প্রণয়ন করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে এসব আইন পরিমার্জন করে বাংলায় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় বৈঠকে। পাশাপাশি যশোর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতান এবং জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলটের বাবা সাবেক ফুটবলার শামসুল আলমের মৃত্যুতেও শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।
এমডি/মানিক