বন্যার জন্য বাড়ছে না ঈদের ছুটি
---
ঈদুল আজহার ছুটি বাড়ানোর নথি এক মাসের বেশি সময় ধরে চালাচালি হলেও বন্যার কারণ দেখিয়ে এবার ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিভাগীয় কমিশনারদের ঈদের ছুটিও বাতিল করা হচ্ছে। রোববার বিভাগীয় কমিশনারদের এক সভায় এ বিষয়ে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে দেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান যায়যায়দিনকে বলেন, সারাদেশে যেহেতু বন্যার ফলে (জরুরি অবস্থা) সৃষ্টি হয়েছে। তাই বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি ও ইউএনওসহ যেন কোনো সরকারি কর্মকর্তা ঈদের ছুটিতে স্টেশন (অফিস) ত্যাগ না করেন সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রোববার বিভাগীয় কমিশনারদের বৈঠকে এ বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি
কর্মকর্তারা যেন সবসময় সতর্ক থাকেন। তিনি বলেন, চিঠি দিয়ে সব কাজ করা লাগে না। মৌখিকভাবেও কিছু কাজ করতে হয়।
চিঠি দিয়ে নির্দেশনা না দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা নেতিবাচক দিক খোঁজেন তারা এটা নেগেটিভভাবে প্রচার করতেন। তারা বলতেন, দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ যে ডিসি, এসপি, ইউএনও ও বিভাগীয় কমিশনারদের ঈদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করত। মানুষ মনে করত যে দেশের সড়ক অবস্থা মনে হয় খুবই খারাপ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বলছেন, যেন ভালোভাবে কাজ করা হয়। জনপ্রশাসন থেকেও বলা হচ্ছে। প্রতি মাসে তারা বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন, সেখানে বলা হচ্ছে।
ঈদুল আজহার ছুটির বিষয়ে ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, রোববার পর্যন্ত জানেন এবারে ঈদের ছুটি বাড়ানো হচ্ছে না। তবে সোমবার কী হবে তা জানেন না। এটার সাথেও বন্যার সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, তারা ঈদের ছুটি বাড়াতে বলেছেন অন্য কারণে। মানুষ যেন ছুটি ভোগ করতে পারেন। গ্রামেগঞ্জে যারা যাবেন তারা যেন ভালোভাবে যেতে পারেন। তিনদিন ছুটি থাকলে একদিন যেতে, একদিন আসতে চলে যায়। ফলে ঈদের আনন্দ হয় না। তারা মনে করেছিলেন নৈমিত্তিক ছুটি কমিয়ে দিয়ে ঈদের ছুটি বাড়ানো যায়। এতে সরকারের সেবা পাওয়াটাও যেন ঠিক থাকে। এ সময়ে এটা বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ সারাদেশে বন্যা হচ্ছে।
জানা যায়, ঈদের ছুটি বাড়িয়ে ছয় দিন করার জন্য গত ২৫ জুলাই প্রস্তাব দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চারটি সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে ঈদের ছুটি বাড়ানোর ওই প্রস্তাব করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় গণপরিবহনের ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপকে। দীর্ঘ যানজটের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ কমানোর জন্য ঈদের ছুটি বাড়ানো দরকার বলে মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় আরও মনে করে, ঈদের আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব প্রাণহানি হয় তা লাঘব করা এবং ঈদের পরে অফিস খোলা হলেও কর্মচারীদের অনুপস্থিতি রোধ করার জন্য ঈদের ছুটি বাড়ানো প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ছুটির প্রস্তাবেও ওই চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার যায়যায়দিনকে বলেন, সারাদেশে বন্যার কারণে ঈদুল আজহার ছুটি বাড়ানো হচ্ছে না। তবে ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব দিয়েছে সেটা এই ঈদের পরে বিবেচনা করা হবে।
জানা যায়, জনপ্রশাসনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ইনোভেশন টিম নৈমিত্তিক ছুটি ২০ দিন থেকে কমিয়ে ১৪ দিন নির্ধারণ করে বাকি ছয় দিন দুই ঈদের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করা এবং ঈদের ছুটির সঙ্গে ঐচ্ছিক ছুটি বাতিল করার প্রস্তাব দেয়। অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবেও সরকারি ছুটির সঙ্গে দুই দিন করে চার দিন ঐচ্ছিক ছুটির প্রস্তাব করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কালাম আজাদ যায়যায়দিনকে বলেন, ঈদের ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে ২৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফাইল পাঠানোর পর তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে ঈদের আগের দিনও ছুটি বাড়াতে পারেন।
এর আগেও ঈদের ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত ঈদুল ফিতরের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছিল, শুধু ঈদের ছুটি বাড়ানো নয়, অন্য প্রধান ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসবের ছুটিও বাড়ানো দরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই অভিমত পাওয়ার পর বিষয়টি ইতিবাচক ধরে নিয়েই সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের আগে আর ছুটি বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেননি প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় ছুটি না বাড়ানোর কারণ হিসেবে অর্থবছর শেষ এবং সংসদে বাজেট পাস করার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বন্যাকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে_ দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, কুমিল্লা, শেরপুর, নাটোর ও ঢাকা জেলার আশপাশের এলাকা।
আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহা। তাই ঈদের ছুটি থাকছে ১, ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর।