g আরব আমিরাতে ৭০ ভাগ মুয়াজ্জিন বাংলাদেশি | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

সোমবার, ১৪ই আগস্ট, ২০১৭ ইং ৩০শে শ্রাবণ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

আরব আমিরাতে ৭০ ভাগ মুয়াজ্জিন বাংলাদেশি

AmaderBrahmanbaria.COM
আগস্ট ১১, ২০১৭

---

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রাচীনতম ফুজাইরা আল বিদিয়া মাটির মসজিদ ও আবুধাবীতে নির্মিত বৃহত্তম শেখ জায়েদ মসজিদ ছাড়াও আবুধাবী, দুবাই, শারজাহ, আল আইন, ফুজাইরা, আজমান ও রাস আল খাইমা প্রদেশে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার মসজিদ রয়েছে। নান্দনিক কারুকাজে নির্মিত মসজিদগুলোর সৌন্দর্য্য যেমন মুগ্ধ করে মুসল্লিদের তেমনি সুনিপূণ মায়ায় প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে পর্যটকদের।

এসব মসজিদে প্রতিদিন লাখো মুসল্লিকে নামাজ পড়ান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে আসা হাফেজ-ইমামগণ। প্রতিটি মসজিদে আবার ইমামের সহযোগী হিসেবে রয়েছেন একজন করে মুয়াজ্জিন।
আর এই ইমামদের তালিকায় বাংলাদেশিদের অবস্থান কম হলেও মুয়াজ্জিন হিসেবে আমিরাতের প্রায় ৭০ ভাগ মসজিদে দায়িত্ব পালন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মুয়াজ্জিন হলেও তারা পান ইমামের মর্যাদা। এমনকি ইমাম পেশা রেখেই ভিসা ইস্যু করা হয় তাদের। এমনটাই জানান স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদে দায়িত্বরত বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনরা।

তবে এ পেশায় আসতে হলে স্থানীয় ইসলামিক সোসাইটি ওয়কাফে জমা করতে হয় শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ, দিতে হয় দক্ষতা ও পারদর্শীতার পরীক্ষা।

আবুধাবীস্থ সাইফ বিন দরবেশ মসজিদের মুয়াজ্জিন ফেনী জেলার হাফেজ আবদুল হাই জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জমা করতে হয় স্থানীয় ওয়কাফে। সনদ যাচাই-বাছাই করে তারা পরীক্ষার জন্যে ডাকেন। সেখানে নেয়া হয় সুরা, কেরআত ও হেফজের উপর নানান পরীক্ষা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মিলে চাকরি। বেতন ধরা হয় বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এছাড়া পাওয়া যায় উন্নত থাকার ব্যবস্থা। সন্তানদের পড়ালেখার ক্ষেত্রেও দেয়া হয় সুযোগ-সুবিধা।

দুবাই নাদ রাশেদ মসজিদের ইমাম জয়নুল আবেদিন জানান, মূলত সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি সহি শুদ্ধ পাঠ ও সঠিক উচ্চরণের কারণে স্থানীয়দের কাছে বেশ কদর রয়েছে বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের। এছাড়া ওয়কাফ থেকে পাশ করলে ইমামরা ফাইভ গ্রেডের মর্যাদা প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। পাশাপাশি পরিবার নিয়ে আসার সকল ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে বেতন কম হলেও তেমন বেগ পেতে হয় না। তবে কম বেতনধারীরা কিছু কিছু ছাত্র পড়িয়ে আয় করতে পারেন বাড়তি টাকা।

আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশ ঘুরে জানা গেছে, ছোট-বড় প্রায় মসজিদে এ পেশায় এশিয়ানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কদর বাংলাদেশিদের। এজন্যে সরকারি ওয়কাফের ইমাম-মুয়াজ্জিন ছাড়াও অনেক মসজিদে স্থানীয় আরবীদের অধীনে কাজ করেন বাংলাদেশি ইমাম-মুয়াজ্জিনরা। এদের সম্পূর্ণ খরচ ও সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় প্রাইভেট সেক্টর থেকেই। শুধু প্রার্থনা-ইবাদত নয় আমিরাতের কিছু কিছু মসজিদে দিনভর ভিড়ও করেন দর্শনার্থীরা।

দুবাইয়ের আল ফারুক মসজিদ, জুমেইরা মসজিদ, ফুজাইরার প্রাচীনতম আল বিদিয়া মাটির মসজিদ, শারজা আল নূর মসজিদ ও আবুধাবীর শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ অমুসলিমদের জন্যেও থাকে উন্মুক্ত। দর্শনার্থীদের ভিড় থাকা ৫০০ বছরের প্রাচীন আল বিদিয়া মাটির মসজিদেও দীর্ঘ দিন যাবত দায়িত্ব পালন করছেন হাটহাজারী উপজেলার ইমাম হাফেজ আহাম্মদ।

সম্মানজনক এ পেশায় নিয়োজিত থেকে নিজেদের স্বাচ্ছন্দবোধের কথা জানালেও ভিসা জটিলতায় দীর্ঘদিন ইমাম-মুয়াজ্জিন হিসেবে সরাসরি দেশ হতে কেউ আসতে পারছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আল আইন মোহাম্মদ সাঈদ সোহাই আল মাজরুয়ী মসজিদের ইমাম সোনাগাজী উপজেলার হাফেজ আবদুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ওয়কাফের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হওয়া ইমাম-মুয়াজ্জিনরা বাংলাদেশি টাকায় মাসিক বেতন পান প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। সম্মানজনক পেশা ও সুযোগ-সুবিধা থাকায় যেমন নিজেরা স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তেমনি দেশের জন্যেও এটি গর্বের। তবে দীর্ঘ পাঁচ বছর ভিসা জটিলতা থাকায় নতুন করে দেশ হতে কোনো ইমাম-মুয়াজ্জিন আসার সুযোগ পাচ্ছে না। ’

স্থানীয় ওয়কাফের প্রধানদের সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হলে আরও অসংখ্য ইমাম-মুয়াজ্জিন আমিরাতে আসার সুযোগ পেতে পারেন বলেও জানান তিনি।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়কাফ ছাড়াও অনেক বাংলাদেশি ইমাম মুয়াজ্জিন আমিরাতের বিভিন্ন মসজিদে প্রাইভেটভাবে কাজ করারও দারুণ সুযোগ রয়েছে। দ্রুত ভিসা জটিলতা অবসান হলে এ পেশায় আরও অনেক দক্ষ হাফেজ-আলেম সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবার সুযোগ পাবেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এতে করে একদিকে বাড়বে দেশের সম্মান, অন্যদিকে বাড়বে রেমিটেন্স।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ জাতীয় আরও খবর