অর্ধশত বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে বিপাকে ঢাকা ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল
---
অর্ধশত বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে বিপাকে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গ কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মেডিকেল মর্গ থেকে প্রায় ১৫ দিন এবং সলিমুল্লাহ মেডিকেল মর্গ থেকে প্রায় ৩০ দিন ধরে দাফনের জন্য কোনো লাশ নিচ্ছে না আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম।
আঞ্জুমান মুফিদুল বেওয়ারিশ লাশগুলো ঢাকার জুরাইন কবরস্থানে দাফন করে থাকে। সেখানে পানি উঠেছে বলে লাশ দাফন করা যাচ্ছে না বলে কারণ দেখিয়েছে তারা।
ফলে মর্গে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বেওয়ারিশ মৃতদেহ মেঝেতে রাখতে হচ্ছে, আর লাশের গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে দেখা যায়, দুটি কক্ষের মেঝেতে প্রায় ৪৪টি লাশ।
একটি কক্ষের দরজা খুলতে দুর্গন্ধে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা। মর্গের এক কর্মচারী বলেন, “আরেকটি কক্ষে ঢুকতে পারবেন না, এত দুর্গন্ধ!”
মর্গের ইনচার্জ মো. সেকান্দার বলেন, পাঁচটি মরচুয়ারি রয়েছে। কিন্তু তিনটি মরচুয়ারি প্রায় চার মাস ধরে নষ্ট। বাকি দুটি মরচুয়ারিতে আটটি মৃতদেহ রাখা যায়। সেখানে চার জঙ্গিসহ মোট নয়টি মৃতদেহ কোনো রকমে রাখা গেছে।
দুটি কক্ষের মেঝেতে ২০টি মৃতদেহ পুরুষের, চারটি নারীর এবং ২০টি নবজাতকের লাশ।
বেওয়ারিশ লাশগুলো দাফনের দায়িত্ব পালন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম (ফাইল ছবি)
এদের কারও পরিচয় জানা যায়নি বলে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফনের জন্য আঞ্জুমানের অপেক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু ২৫ জুন থেকে আঞ্জুমান কোনো লাশ নিচ্ছে না বলে মর্গের কর্মচারীরা জানান।
সেকান্দার বলেন, “আগে আজিমপুর কবরস্থানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হত। কিন্তু এখন জুরাইন কবরস্থানে হয়। সেখানে পানি উঠেছে বলে কোনো মৃতদেহ নিচ্ছে না তারা।”
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গের ইনচার্জ শ্যামল লাল বলেন, জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আঞ্জুমান বেওয়ারিশ লাশ নিচ্ছে না।
তার মর্গে ১০টি বেওয়ারিশ লাশ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটি মাত্র মরচুয়ারি রয়েছে। একটিতে কয়টি মৃতদেহ রাখা যায় বলুন? মেঝেতে মৃতদেহ রাখতে গেলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে।”
মর্গের ঠিক পেছনে বাবু বাজার বাসস্ট্যান্ড আর দক্ষিণ পাশে সড়ক। অনেক মানুষ এসব রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে।
ইমাম হোসেন নামে একজন ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, “প্রচণ্ড দুর্গন্ধের কারণে আমি রোজা দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ওই রাস্তা দিয়ে যাই না।”
আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মুগদায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, “আজিমপুর কবরস্থানে আমাদের জমি শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানে আর কোনো বেওয়ারিশ লাশ দাফন করতে পারছি না। আর জুরাইন কবরস্থান থেকে আমাদের জানানো হয়, আমাদের জমিতে অনেক পানি।”
বেওয়ারিশ লাশের ঠিকানা জুরাইন কবরস্থান
গত এক মাস আঞ্জুমান কি কোনো মৃতদেহ দাফন করেনি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তা নয়, একটি-একটি করে দাফন করেছে। কিন্তু কবরস্থান কর্তৃপক্ষ মর্গ থেকে এক সাথে অনেক মৃতদেহ পাঠাতে নিষেধ করেছে।”
জুরাইন কবরস্থানে খোঁজ নেওয়া হলে তার দায়িত্বে থাকা মাওলানা শোয়াইবুর রহমান সোমবার বলেন, আঞ্জুমানের জন্য সাড়ে ৭ একর জমি নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু ওই জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় দাফন করা যাচ্ছে না।
পানি জমার কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, “সুয়ারেজ ব্যবস্থাও ভালো নয়, আর রাস্তা থেকে কবরস্থান নিচু।”
“তবে আঞ্জুমানকে আজ ফোন দিয়েছি কিছু বেওয়ারিশ লাশ পাঠাতে। এখনও কবরস্থানে পানি আছে, তবু দুই-একটা করে দাফন করার ব্যবস্থা করা যাবে,” বলেন তিনি।
শোয়াইবুরের টেলিফোন পেয়েছেন জানিয়ে হাসান দুপুরে বলেন, “একটি-দুটি করে মৃতদেহ পাঠাতে বলেছে। দেখি আজ বিকালে বা আগামীকাল দুই মর্গ থেকে আস্তে আস্তে মৃতদেহ জুরাইনে দাফনের জন্য পাঠাব।
“তবে আবার বৃষ্টি হলে শোয়াইবুর রহমান আবার ফোন করে বলবে যে ‘আর লাশ পাঠাবেন না’।”