g সাড়ে ৫ হাজার বয়লার পরীক্ষায় মাত্র ৮জন পরিদর্শক! | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বৃহস্পতিবার, ১২ই অক্টোবর, ২০১৭ ইং ২৭শে আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সাড়ে ৫ হাজার বয়লার পরীক্ষায় মাত্র ৮জন পরিদর্শক!

AmaderBrahmanbaria.COM
জুলাই ৫, ২০১৭

---
গাজীপুরের কাশিমপুরে মাল্টিফ্যাবস পোশাক কারখানার বিস্ফোরিত বয়লারটিতে অনুমোদিত চাপের অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছিল। অতিরিক্ত চাপজনিত কারণে সোমবারের ওই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১৩ জন, আহত অর্ধশতাধিক। গত এপ্রিলে দিনাজপুরের যমুনা অটোমেটিক রাইসমিলে বয়লার বিস্ফোরণে ২০ জন নিহত হন। গত ছয় মাসে এমন অন্তত তিনটি বয়লার দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৩ জন মারা যান। এর আগে ২০১৬ সালে ঝিনাইদহে একটি বয়লার বিস্ফোরণেও বহু হতাহত হয়।  বয়লার বিস্ফোরণে এমন মৃত্যুর মিছিল থামছে না। শিল্পকারখানার অন্যতম প্রধান যন্ত্রটির ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকিতে দুর্বলতার সুযোগে প্রতিবছরই দুর্ঘটনায় ঝরছে তাজা প্রাণ। জনবল সংকটে নামসর্বস্ব নিরাপত্তা সনদ দিয়ে দায় সারছে সরকারের বয়লার পরিদর্শন দপ্তর।
সারাদেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বর্তমানে অনুমোদিত সাড়ে ৫ হাজার বয়লার চলমান রয়েছে। প্রতি বছর কারখানা পরিদর্শন করে বয়লারের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বয়লার পরিদর্শন দপ্তরের। প্রতি পরিদর্শনে ৬ মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের নিরাপত্তা সনদ দেয় দপ্তরটি। অথচ প্রধান পরিদর্শকসহ সারাদেশে মাত্র ৮ জন বয়লার পরিদর্শক রয়েছে। প্রায় ৩ হাজার কারখানায় এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিপুলসংখ্যক বয়লার নিয়ম অনুযায়ী পরিদর্শন করা এই ক’জনের দ্বারা সম্ভব নয়। বয়লার আইন-১৯২৩ (সংশোধিত ২০০৭) অনুযায়ী, বয়লারের কার্যকারিতা পরীক্ষা, নিরাপদ ব্যবহার, মেয়াদ যাচাই, কারিগরি পরীক্ষণসহ মানসম্মত বয়লার ব্যবহার নিশ্চিত ও মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঝুঁকি কমানোর দায়িত্ব পালন করতে হয় পরিদর্শকদের। অননুমোদিত বয়লার অনুসন্ধান করে তার ব্যবহার বন্ধ করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়, তিতাস গ্যাস কোম্পানি, শিল্প ও কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং বয়লার অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিদ্যমান অবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী শুধু অনুমোদিত বয়লারগুলোর নিরাপত্তা যাচাইয়ে একজন পরিদর্শককে বছরে ৬৮৭টি বয়লার পরিদর্শন করতে হবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, দিনাজপুর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কারখানাগুলোতে বিদ্যমান জনবল দিয়ে এ পরিদর্শন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ সারাদেশে অনেক কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ বয়লার ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপ-প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মোহা. জিয়াউল হক বলেন, বছরে প্রতিটি বয়লার দুই-একবার পরিদর্শন করার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া অনুসন্ধান করে অননুমোদিত বয়লার চিহ্নিত করে তা বাতিল করার দায়িত্ব পালন করতে হয় পরিদর্শকদের। কিন্তু এ দায়িত্ব সেভাবে পালন করা সম্ভব নয়। তিনি ধারণা করেন, সারাদেশে অনুমোদিতগুলোর বাইরে আরো দুই থেকে আড়াই হাজার অননুমোদিত বয়লার ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অননুমোদিত বয়লারগুলোর অনেকগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বয়লার পরিদর্শক জানান, চাহিদার বিপরীতে ন্যূনতম জনবল নেই বয়লার পরিদর্শন দপ্তরের। তাই কারখানা মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিদর্শন ছাড়াই অধিকাংশ বয়লারের অনুমোদন বা বার্ষিক নিরাপত্তা সনদ জারি করা হয়। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতি মাসে খাতাকলমে ৬০ থেকে ৯০টি বয়লার পরিদর্শনের তথ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতপক্ষে তাও করা হয় না।
প্রধান বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, পরিদর্শন করেই কারখানাগুলোর অনুকূলে বয়লার অনুমোদন দেয়া হয়। তবে জনবল সংকটে অনেক সময় যথাযথভাবে পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না।
প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্র জানায়, বয়লার হচ্ছে নানা যন্ত্রসমৃদ্ধ একটি বদ্ধ পাত্র যার ভেতরে চাপের মাধ্যমে পানিকে বাষ্পে পরিণত করা হয়। পোশাক কারখানা, রঙ করার কারখানা, হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, চালের মিলসহ বিভিন্ন কারখানায় বয়লার ব্যবহৃত হয়। বয়লারে একটি সেফটি ভালব থাকে যা একটি নির্দিষ্ট চাপে বা প্রেশারে সেট করা থাকে। উৎপাদন লক্ষ্য ও বয়লারের ক্ষমতা অনুযায়ী ওই চাপ নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত চাপের বেশি হলে সেফটি ভালব স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হওয়ার ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু চাপ বেশি হওয়ার পরও সেফটি ভালব চালু না হলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ময়লা জমে ভালবটি বন্ধ হয়ে গেলেও বয়লার বিস্ফোরিত হতে পারে। এছাড়া বয়লারের বিভিন্ন ডিভাইস-যন্ত্র ঠিকঠাক না চললে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
মাল্টিফ্যাবস পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণের পর গতকাল মঙ্গলবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বয়লার পরিদর্শক প্রকৌশলী মো. হানিফ হোসেন। তদন্তের প্রাথমিক ফলাফল সম্পর্কে প্রধান বয়লার পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, বয়লারটিতে অনুমোদিত চাপের চেয়ে অতিরিক্ত চাপ ব্যবহার করায় কারিগরি ত্রুটি দেখা দেয়। ওই ত্রুটি সারাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।