জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারে ৪০ গ্রাম প্লাবিত

---
নিউজ ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কক্সবাজারে ৪০ গ্রামের কয়েক শ ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে হাজারো মানুষ।
পাউবো সূত্র মতে, জেলার টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া ও কক্সবাজার সদর উপজেলার পাউবোর ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে আড়াই কিলোমিটার, মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নে দেড় কিলোমিটার, মাতারবাড়ি ইউনিয়নে ১০০ মিটার ও কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীতে ৮০ মিটারসহ পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে। এছাড়া জেলার পেকুয়া, কুতুবদিয়া উপজেলায় আরও সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে এসব অর্ধভাঙা ও নড়বড়ে বেড়িবাঁধ বিলীন হতে পারে।
পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে আজ সোমবার সকাল থেকে বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। বিশেষ করে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে আজ কয়েকটি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আরও বেড়িবাঁধ বিলীন হলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যাও বাড়বে। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, মোরার প্রভাবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম অংশের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়েছে আটটির বেশি গ্রাম। আড়াই বছর ধরে এখানে কোনো প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ নেই। এ এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার গত বছর ১০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও এ পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। অন্যদিকে জোয়ারের ধাক্কায় উপজেলার খুরেরমুখ, সাবরাং, আছারবনিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এতে উপকূলের হাজার হাজার মানুষ উদ্বিগ্ন।
শাহপরীর দ্বীপের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা জসীম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আজ দুপুরে জোয়ারের ধাক্কায় দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়ার শতাধিক বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এতে লোকজনের দুর্ভোগ বেড়েছে।
মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন, জোয়ারের প্লাবনে এই ধলঘাটা ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় তিন কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে। নিম্নমানের (বালুর বাঁধ) কাজ করায় বেড়িবাঁধ টেকসই হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ নিয়ে উপকূলের লাখো মানুষ আতঙ্কে আছেন। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় মোরা এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে আনা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রমতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে জেলায় ২৪টি উপকূলীয় ইউনিয়নকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, সেন্ট মার্টিন, বাহারছড়া, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী, পোকখালী ও খুরুশকুল, কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কুতুবজোম, মাতারবাড়ি, কুতুবদিয়া উপজেলার আলীআকবরডেইল, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া উল্লেখযোগ্য।