বুধবার, ১০ই মে, ২০১৭ ইং ২৭শে বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

শব্দদূষণে ৩০টি জটিল রোগ

AmaderBrahmanbaria.COM
মে ৬, ২০১৭

নিউজ ডেস্ক : সকাল ১০ টা। মানিকমিয়া এভিনিউ থেকে আসা প্রাইভেট ও গণপরিবহনগুলো দাঁড়িয়ে আছে ফার্মগেট সিগন্যালে। ১০ মিনিট পেরিয়ে গেলেও সিগন্যাল না ছাড়ায়; দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো ক্রমাগত হর্ন বাজাতে শুরু করে। তাতেই কর্তব্যরত ট্রাফিকের টনক নড়ে না। গণপরিবহনে জানালার পাশে বসা মাঝবয়সি একজন শ্বাসকষ্টের যাত্রী ক্রমাগত হাসপাস করতে থাকেন। একটা সময় তিনি অবচেতন হয়ে পড়েন। সিগন্যালে এমন অপ্রয়োজনে হর্নের শব্দে ওই যাত্রীর মতো দিনে কত শত যাত্রী যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তার খবর কে বা রাখে!

যানবাহনের হর্ন, সড়কের দ্রুতগতির যানবাহনের শব্দ, রাজধানীবাসীর নিত্যসঙ্গী। এর সঙ্গে আছে আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনার কাজে ব্যবহৃত মেশিনের শব্দ; যা ক্রমাগত অসুস্থ করে তুলছে বৃদ্ধ ও শিশুদের। একই সঙ্গে অসুস্থ মানুষরা ক্রমে ধাবিত হচ্ছে মৃত্যুর দিকে। নাগরিক হিসেবে এসব অসুবিধা থেকে রেহাই পাওয়ার অধিকারও যেন হারিয়ে ফেলেছে রাজধানীর বাসিন্দারা। উন্নত বিশ্বে যানবাহনের হর্ন বাজানো নিয়ে কড়াকড়ি আইন থাকলেও রাজধানী ঢাকায় এর কোনো প্রয়োগ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে হরদম গাড়ি চালিয়ে গেলেও তা দেখার কেউ নেই।

২০০৬ সালের শব্দদূষণ নীতিমালা অনুযায়ী ৫ ভাগে বিভক্ত এলাকায় সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হলেও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) গবেষণায় দেখা গেছে, সব এলাকায় শব্দ দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ সীমার থেকে দেড় থেকে দ্বিগুণ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ৩০টি জটিল রোগের অন্যতম উৎস শব্দ দূষণ। ক্রমাগত বাড়তে থাকা শব্দের মাত্রা আগামীতে অসুস্থ প্রজন্মের জন্ম দিবে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে ভয়াবহভাবে বেড়েছে শব্দ দূষণ। অনিয়ন্ত্রিত শব্দ দূষণে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি ভবিষ্যতে অসুস্থ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। সচেতনতাকেও দায়ী করেন তারা। তারা বলছেন, শব্দ দূষণ সম্পর্কে ধারণা নেই অধিকাংশ জনগণের। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধি-বিধান থাকলেও সেগুলোর কোনো প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে জনগণের অচেতনতা ও অবহেলাকেও দায়ী করেন তারা। আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং জনসচেতনতার অভাবই শব্দদূষণ মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জানান।

প্রাইভেট গাড়ির চালক রফিকুল মিয়া বলেন, দেশে ২৫ বছর ড্রাইভারি করি, আইনকানুন সব জানি কিন্তু এই দ্যাশে এসব নিয়ম চলবো না। হর্ন না দিলে অন্য ড্রাইভাররা শুনতে পাবে না। রাস্তায় অনেক বেশি শব্দের কারণে আমাদেরও জোরে হর্ন বাজাতে হয়। রাস্তায় শব্দ কম থাকলে আস্তে হর্ন বাজালেও পাবলিক শুনতো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পান্থপথ সিগন্যালে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ বলেন, বাসায় কথা বললে আমার স্ত্রী সন্তানরা বলে, ‘আমি নাকি বেশি জোরে কথা বলি, এদিকে লো সাউন্ডে কথা বললে আমার কানে পৌঁছায় না। এখন কি করবো? আমরা রাস্তায় কাজ করি, শব্দ থাকবেই, আর জনগণ সচেতন নয় বলে জানান তিনি।

শব্দদূষণের ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ঘটতে পারে। উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হূদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হূদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়াও শ্রবণশক্তি কমে আসে, বধির হওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হয়, মাথাব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রচণ্ড চাপ দেয়। এধরনের শব্দের প্রভাবে সাময়িকভাবে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়, রক্তনালি সংকুচিত হয়, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে যান চালাতে উত্সাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ক্রমাগত শব্দদূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। তখন সে আর স্বাভাবিক শব্দ কানে শুনতে পায় না। শব্দদূষণের কুফল বিষয়ে জনসচেতনতার অভাব এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারি ও পদক্ষেপের ঘাটতির কারণেই এমনটি হচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, তাই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।ইত্তেফাক

এ জাতীয় আরও খবর