আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীন কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্প : পরিদর্শনে চলে গেছে ৮ বছর
---
সন্তোষ সূত্রধর, আশুগঞ্জ থেকে॥ কোন প্রকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া কেবল অত্যাধুনিক অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) নির্মানের নাম করে-ই আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার কয়েক দফা চলে গেল ভারতীয় পণ্যের অননিুষ্ঠানিক ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমে›ন্ট। গত বছর দু‘দেশের উচ্চ পর্যায়ের রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হলেও নানা জটিলতায় আলোর মুখ দেখেনি আইসিটি প্রকল্পের। ফলে আইসিটি প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত সম্ভাব্য ভূমি মালিকেরা সরকারি এ সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছে গ্যাড়াকলে। তারা এব্যাপারে সরকারের তড়িৎ পদক্ষেপ কামনা করে বিষয়টি সুরাহার দাবী জানান। তবে নানা জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্পটি শীঘ্রই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে এমনটি জানান সম্প্রতি দেশের নেতৃত্বদানকারী অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইউব্লিউটিএ)।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সনে সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর আশুগঞ্জ নদীবন্দরকে পোর্ট অব কল ঘোষনা করে আর্ন্তদেশীয় নৌবাণিজ্য সম্প্রসারণে আশুগঞ্জ নদীবন্দরে আর্ন্তজাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বা নৌবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়াই নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় অনানুষ্ঠানিক ভাবে বেশ কয়েক দফা ভারতীয় ভারী যন্ত্রপাতি ও খাদ্যপণ্য পরিবহন করা হয়। অবশেষে গত বছরের ১৬ জুন বাংলাদেশ ভারতের মন্ত্রী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে দু‘দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমর উদ্বোধন করেন। এসবের পরও আশুগঞ্জ নৌবন্দরে প্রস্তাবিত অত্যাধুনিক অভ্যন্তরীরণ কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। তবে একের পর এক মন্ত্রী, সচিব, হাই কমিশনারসহ জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক একাধিক বিশেষজ্ঞদলের সম্ভাব্যস্থান (সরকারি-বেসরকারি) সরেজমিনে পরিদর্শন, একাধিক বিভিন্ন সংস্থা কয়েক দফা জরিপ ও জেলা প্রশাসন থেকে কয়েক দফা প্রস্তাবিত জমিত সম্ভাব্য মুল্য প্রেরণ। জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে অর্থের সংস্থান না হওয়ায় এবং প্রথমে প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত প্রায় ২৬ একর জমির মধ্যে সরকারি দপ্তরের বেশ অংশে জমিতে অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আবারও প্রকেল্পর জন্য সম্ভাব্য ভূমির প্রস্তাবনা (প্রকল্পের প্রস্তাবনা রিভিউ) করতে হচ্ছে। যাতে যোগ হবে অনেক ব্যাক্তিমালিকানা ভুমি, নৌবন্দর হতে সংযোগ সড়ক ও একটি ওভারব্রিজ। নতুন এ প্রস্তাবনা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাশ হলেই ভূমি অধিগ্রহনসহ অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। এসব বিষয় সরেজমিনে পরিদর্শনের লক্ষ্যে এদিকে, বাংলাদেশ ভারতের একটি যৌথ প্রতিনিধিদল নতুন ভাবে প্রস্তাবিত আইসিটি প্রকল্পের ভুমি পরিদর্শন করেন। যৌথ প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেন নৌমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম ও ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ওয়াপকস (WAPCOS) এর মুখ্য প্রকৌশলী জে কুমার। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের যুগ্ম্ মহাপরিচালক ডি, এন মজুমদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সামছুল হক,আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদ, আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিরুর কায়সার,বিআইডব্লিউটিএ‘র প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মহিদুল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান, ভারতীয় ওয়াপকস‘এর বিশেষজ্ঞ বিনয় কুমারসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে এরকম সিদ্ধান্তহীনতা বা দীর্ঘ সুত্রিতা ও মাঝে মাঝে জরিপ-পরিদর্শনের ফলে ভুমি মালিকদের হতাশায় ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের জমিও সরকার কবে নিবে বা আদৌ নিবে কিনা তাও যেমন স্পষ্ট করে জানাতে পারছেনা না তেমনি সাহস পাচ্ছেনা জমিতে কোন স্থায়ী অবকাঠামো করতে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের জিজ্ঞাসা কবে আলোর মুখ দেখবে এ প্রকল্প, কবে আমরা দোটানা থেকে উদ্ধার হবে?
এব্যাপারে ভুমি মালিক জামাল মিয়া, জাকির হোসেন ও মহিউদ্দিন মোল্লাসহ অনেকে জানান, সরকারের যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আইসিটি প্রকল্পে দীর্ঘসুত্রিতা আমাদের আর্থিক ক্ষতিতে ফেলেছে। তারা দ্রুত এব্যাপারে সরকারের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তের দাবী জানান।
এব্যাপারে পরিদর্শনে আসা নৌমন্ত্রণালয়ের অতিঃ সচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বিদ্যমান জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্পটি শিগ্রই বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে। আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও অর্থের সংস্থান না হওয়ায় তা বাতিল করা হয়। এদিকে খাদ্য বিভাগের জায়গাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন করে প্রকল্পের জন্য নতুন করে প্রস্তাবনা পাস করতে হবে। আশা করি এ বছরের মধ্যেই জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং জমির মালিকেরা বর্তমান হারে জমির মুল্য পাবে।
উল্লেখ্য, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দেশের দ্বিতীয় অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রায় ৩০ একর জমির উপর অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নৌবন্দর স্থাপন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আশুগঞ্জ বন্দরে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল জেটি, কাস্টমস অফিস, বিআইডবি¬উটিএ অফিস, স্থল বন্দরের অফিস, ক্রেন ইয়ার্ড, ওয়্যার হাউজ, ইলেক্ট্রিক সাবস্টেশন, ট্রাক ইয়ার্ড, রেস্ট হাউজসহ অন্যান্য আবশ্যিক স্থাপনা নির্মাণের করার কথা রয়েছে।