পিছিয়ে গেল ‘চিনাম্মা’র শপথ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভি কে শশীকলা নটরাজনের শপথের অনুষ্ঠান পিছিয়েছে। তামিলনাড়ুতে তিনি ‘চিনাম্মা’ (ছোট মা) হিসেবে পরিচিত।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকালে রাজ্যপালের দপ্তরে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল এআইএডিএমকের মনোনীত হিসেবে শশীকলার শপথ গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় সময় সোমবার রাতেই রাজ্যপালের দপ্তর এআইএডিএমকের সাধারণ সম্পাদক শশীকলা নটরাজনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেয়।
গত বছর ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম জয়ললিতার মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে শশীকলার নাম শোনা যাচ্ছিল। আর সেই কানাঘুষাকেই সত্যি প্রমাণ করে গত সপ্তাহে এআইএডিএমকের মুখপাত্র সি আর সারওয়ার্থী বলেন, ‘তিনিই (শশীকলা) তামিলনাড়ুর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী। জনগণের সেবার জন্য আমরা ‘আম্মা’র (জয়ললিতা) মতো শক্তিশালী নারী নেত্রী চাই।’
এরপর স্থানীয় সময় রোববার তামিলনাড়ুর বর্তমান ক্ষমতাসীন দল এআইএডিএমকের পক্ষে থেকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শশীকলার নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর দলটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শশীকলার নাম ঘোষণা করা হয়।
এর আগেও তামিল জনগণের প্রিয় ‘আম্মার’ দেখানো পথে এআইএডিএমকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শশীকলার উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছিলেন এআইএডিএমকের জ্যেষ্ঠ নেতারা। এআইএডিএমকে নেতা ও ভারতের লোকসভার ডেপুটি স্পিকার থামবিদুরাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আম্মার পর সেই জায়গা নিতে পারেন একমাত্র চিনাম্মা।
থামবিদুরাই আরো বলেন, ‘জয়া আম্মার পর দলে চিনাম্মার নামই উঠে আসছে ওই জায়গায়। তাই তাঁকে পার্টির জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
থামবিদুরাই জানান, দল চায় নেতৃত্বে আসুন শশীকলা। এতে সম্মতি রয়েছে দলের সদস্য থেকে শুরু করে বিধায়ক, সংসদ সদস্যদেরও। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় আর কারো নামই ভাবছেন না তাঁরা।
থামবিদুরাই বলেন, ‘এআইএডিএমকে মানুষের পার্টি। আর শশীকলা মানুষের নাড়ি খুব ভালোই বোঝেন।’
এ ছাড়া দলটির মুখপাত্র ও তামিলনাড়ুর স্পিকার সি পোন্নাইয়ান বলেন, ‘পুরো দলের চাওয়া ছিল এটিই যে, আম্মার পর চিনাম্মা আসুন। আম্মার মতো করে ক্ষমতার দায়িত্বভার সামলানোর ক্ষমতা আছে একমাত্র তাঁরই।’
তামিলনাড়ুর প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সঙ্গে শশীকলার বন্ধুত্বটাও ছিল গভীর। অনেকের ধারণা, এই বন্ধুত্বের টানেই রাজনীতির মাঠে নামেন শশীকলা। ১৯৮০ সালে উঠতি রাজনীতিক ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী জয়ললিতার সঙ্গে দেখা হয় শশীকলার। সেসময় ভিডিও ক্যাসেট বিক্রির দোকান ছিল তাঁর।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত তামিলনাড়ুর দুই লাখ সন্তানের মা বলে পরিচিত জয়ললিতার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। তিনি ছিলেন অবিবাহিত।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যঅনুযায়ী, জয়ললিতার প্রতি তামিলনাড়ুবাসীর নিষ্ঠা ছিল ‘ধর্মবিশ্বাসের সমপর্যায়ের’। মৃত্যুর আগপর্যন্ত চেন্নাইয়ে জয়ললিতার বিশাল বাংলো ‘পোয়েস গার্ডেনে’ তাঁর সঙ্গেই ছিলেন চিনাম্মা শশীকলা।
এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে জয়ললিতার দলে অনেক চাটুকার ছিলেন, যাদের কখনো নিরুৎসাহিত করেননি আম্মা। এমনটি জয়ললিতা কোনো জনসমাবেশে গেলে মন্ত্রীসহ দলের নেতাকর্মীরা তাঁকে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর দলে আম্মার অনুগত ও পান্নেরসেলভাম তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন।
৬৫ বছর বয়সী পান্নেরসেলভামও আম্মাকে প্রচণ্ড সম্মান করতেন। বিভিন্ন সময়ে জয়ললিতার সরকারের আটটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এমনকি সব সময় নিজের শার্টের পকেটে আম্মার একটি ছবি রাখতেন পান্নেরসেলভাম।