সরাইলে ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে দিনভর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। তাদের সাথে ছিল ৩ থানার পুলিশ। অভিযানকালে তারা ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। আচমকা এ অভিযানে আপাতত দখলমুক্ত হয়েছে সরকারি জায়গা। তবে ২-৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েও উচ্ছেদ না করায় সমালোচনার সূত্রপাত হয়েছে। ছোট ও মাঝারী ব্যবসায়িরা তাদের মালামাল ও দোকান তড়িগড়ি করে সরিয়ে নিলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দখলদার চাঁদাবাজদের মুখে ছিল বিষাদের চাপ। আর পথচারীরা স্বস্থ্যির নিঃশ্বাস ফেলেছে। সরজমিনে সওজ ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের বিশ্বরোড মোড়ের পূর্ব পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশে সওজের জায়গা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের দোকানপাট বসিয়ে ইচ্ছেমত চাঁদা আদায় করছে ৪-৫ সদস্যের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এরা মাঝারি থেকে শুরু করে একজন ডিম বিক্রেতার কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। এমনকি সরকারি লাখ লাখ টাকা খরচ করে সড়কের পূর্ব পাশে বেশ কয়েক বছর আগে সিএনজি চালিত অটোরিকশার জন্য একটি ষ্ট্যান্ড চলাচলের রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। দখলদাররা সেই ষ্ট্যান্ডটি দখল তরে দেড় শতাধিক দোকান বসিয়ে বাজার বানিয়ে ফেলেছে। বাধ্য হয়ে সিএনজি গুলো মহাসড়কের উপর দাড়িয়ে থাকে। ফলে নিয়মিতই ঘটছে দূর্ঘটনা। ঘটছে প্রানহানী। দখলদার বাহিনী দোকানদারদের কাছ থেকে দৈনিক ৫০- ৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে থাকেন।
তাদের ভাষায় এটা জমা। জায়গা সওজের আর চাঁদা উত্তোলন করেন উনারা। চাঁদা নেয়ার কথা প্রশাসন বা কারো কাছে বলা যাবে না। এ শর্ত না মানলে দোকান ঘর করতে দেয়া হয় না। যিনি সরকারি জায়গা দেখিয়ে দিবেন তিনিই মালিক। নিজের টাকায় দোকানঘর উঠিয়ে ওই মালিক প্রথমে জামানত ও পরে দৈনিক বা সাপ্তাহিক ভাড়া দিতে হবে। এ ভাবেই অবৈধ দখল চাঁদাবাজী ও লুটপাটের মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্বরোড মোড়। আর ওই সব দোকানপাটে চলে নানা অসামাজিক কাজ ও মাদকের ব্যবসা। আধিপত্য বিস্তার অবৈধ দখল ও চাঁদাবাজীর ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নিয়মিতই এখানে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ থাকে মহাসড়ক। এ ছাড়া ঘটছে হামলা মামলা আহত ও নিহতের ঘটনা। গতকাল বুধবার সকালে জেলা সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আমির হোসেন ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ সোহেল রানার নেতৃত্বে আচমকা শুরু হয়ে যায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান। অভিযানে জেলা সদর থানা, সরাইল থানা, আশুগঞ্জ থানা ও বিশ্বরোড হাইওয়ে থানার পুলিশ অংশ গ্রহন করেন। ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা দ্রুত তাদের দোকানপাট ও মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা যায়। তবে মাঝারি ও কয়েকটি বড় দোকানের মালামাল টানাটানি করার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উচ্ছেদকারীরা বোল্ডডোজার দিয়ে স্থাপনা ভাঙ্গার পাশাপাশি দখলদারদের জায়গার মাটি উলট পালট করে দিয়েছেন। একাধিক ব্যবসায়ি বলেন, প্রত্যেক ২০০ টাকা দিয়েও যদি এভাবে দৌড়ান লাগে আমরা যাব কোথায়? তারা টাকা নেয়ার সময় বলে কোন চিন্তা নেই আমরা আছি। আবার কারো কাছে বলতেও নিষেধ করেন। এখন তো কেউ আসছেন না! নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্বরোড মোড় দোকান মালিক ও ব্যবসায়িক কল্যাণ সমিতি পরিচালনা কমিটির দায়িত্বশীল জনৈক ব্যক্তি ক্ষোভের সাথে বলেন, তিন ব্যক্তিই এখানে গরীব অসহায় লোকদের কাছ থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। তাদের কাছে সকলেই জিম্মি হয়ে আছে। প্রত্যেকে দৈনিক ১০ সহ¯্রাধিক টাকা ভাগে পান। এ টাকা উত্তোলনের জন্য কিছু লাঠিয়ালকে ভাড়ায় রেখেছেন তারা। আর জন্যই এখানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। সড়কেও যাজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে জন দূর্ভোগ। আগামী কাল (আজ) সকালেই তো তারা দোকান মেরামত করতে বলবে। আর টাকা উঠানো শুরু করবে। জেলা সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আমির হোসেন বলেন, অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার সরাইল সার্কেল মোঃ মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, সরকারি জায়গা থেকে অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি রোধেই তিন থানার পুলিশের যৌথ অভিযান চলছে।