চমক আসতে পারে নির্বাচন কমিশনে: আলোচনায় নারী সিইসি!
নিউজ ডেস্ক : সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক ও সদস্যদের কারো কারো হতাশার মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে নারী নিয়োগের গুঞ্জন চলছে নাগরিক সমাজে। গতকাল সার্চ কমিটির বৈঠকটি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে। বৈঠক থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ৫ জন করে নাম পাঠাতে বলেছে। পাশাপাশি মতবিনিময়ের জন্য ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এখন দেশের মানুষের নানা প্রত্যাশা উঁকি দিচ্ছে রাষ্ট্রপতি এবং সার্চ কমিটির কাছে। কিন্তু গত তিনদিন নতুন ইসির জন্য সিইসি ও অন্য সদস্যদের খুঁজতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন সার্চ কমিটির কোনো কোনো সদস্য। তারা বলছেন, দলনিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ ব্যক্তি পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। যার নামই পাচ্ছেন, তাতেই গলদ দেখছেন। এই যখন অবস্থা তখন অনেকেই বলছেন, ক্লান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত নতুন কমিশনে একজন নারী সিইসিকে নিয়োগ দিয়ে চমক দেখাতে পারে সার্চ কমিটি। এই চমক দেখিয়ে সব বিতর্কের অবসান ঘটাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশিষ্ট নাগরিক আমার সংবাদকে বলেন, পুরুষ সিইসি পাওয়া যতটা কঠিন ততটাই সহজ একজন নারী সিইসি খুঁজে বের করা। দেশে পুরুষ সিইসির তুলনায় এমন অনেক নারী আছেন যারা দলমত নিরপেক্ষ এবং সততা, স্বচ্ছতা, শিক্ষা ও ক্ষমতার দিক থেকে অত্যন্ত জনপ্রিয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে ৫ জনের নাম চেয়েছে সার্চ কমিটি তাতে অন্তত একজন নারীকে সিইসি হিসেবে সুপারিশ করা উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর। নারী সিইসি হলে বিতর্ক কম থাকবে।
তারা বলছেন, বিতর্কিত রকীবউদ্দিন কমিশন যেন না হয় চেষ্টা করা উচিত সার্চ কমিটির। সার্চ কমিটির প্রস্তাবে এমন একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন যিনি কখনও কোনো রাজনৈতিক দলের হবেন না এবং সৎ, আদর্শবান ও সাহসী থাকবেন। একই প্রস্তাব থাকবে অন্য চার কমিশনারের ক্ষেত্রেও। নিয়ম অনুযায়ী সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে সিইসি ও অন্য চার কমিশনার পদের বিপরীতে দুজন করে নাম প্রস্তাব করা। তবে এবারই প্রথম প্রজ্ঞাপনে একজন নারীর নাম প্রস্তাবের জন্য আলাদাভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাহলে কি এবার রাষ্ট্রপতি একজন নারীকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেবেন- যিনি সৎ, সাহসী এবং দলমত নিরপেক্ষ হবেন। এটি হলে মন্দ হবে না বলে মনে করছেন অনেকেই। এর কারণ বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদসহ বেশ কয়েকটি পদে নারী নেতৃত্ব সাড়া জাগিয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনের নাম উল্লেখ করার মতো। একজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অপরজন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। এরকম আরেকজন নারী, যিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হতে পারেন। এ মুহূর্তে গুঞ্জন উঠেছে দুজন নারীর নাম। তাদের একজন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি একটি প্রতিষ্ঠিতি এনজিওর কর্ণধার এবং শিক্ষা আন্দোলন নিয়ে সরব। সততা-সাহসেও এগিয়ে।
অপরজন হচ্ছেন কবি সুফিয়া কামালের কন্যা ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন এবং আইন ও সালিসকেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক। তার সৎ সাহস ও কর্মদক্ষতায় পরপর দুবার টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারপারসন হয়েছেন। এ পদের মেয়াদ তিনবছর। এছাড়াও অত্যন্ত সৎ ও সাহসী এক নারী মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচয় আছে তার। অবশ্য সার্চ কমিটি যে ১২ জন বিশিষ্ট নাগরিককে মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে এর মধ্যে তিনিও আছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিশিষ্ট নাগরিক আমার সংবাদকে বলেন, এই দুই নারীর মধ্যে সুলতানা কামালই সিইসি হওয়ার জন্য বেশি উপযুক্ত। তিনি দলমত নিরপেক্ষ হওয়ায় আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ ক্ষেত্রে যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হয় তাহলেও খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। তিনি তার মতো করেই ভোট নিরপেক্ষ করে চমক দেখাবেন বলেই ভরসা করা যেতে পারে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও খুব একটা আপত্তি থাকার কথা নয়। সুলতানা কামাল ও রাশেদা কে চৌধুরী দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। দুজনের মধ্যে সুলতানা কামালের মুক্তিযুদ্ধেও বিশেষ অংশগ্রহণ রয়েছে।
স্পষ্টভাষী সুলতানা কামাল সত্য কথা বলতে পিছপা হন না। জানা গেছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন কমিশনের জন্য সিইসি ও অন্য কমিশনারদের খুঁজে বের করতে গত বুধবার ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই কমিটির প্রধান হলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি ২০১২ সালের প্রথম সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন। অপর ৫ সদস্য হচ্ছেন- হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মহাহিসাবরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ, পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার। তাদের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য সিইসি ও অন্য কমিশনার পদে একজন নারীসহ ১০ জনের নাম প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে। সেখান থেকে সিইসি ও অন্য চার কমিশনার ঠিক করবেন রাষ্ট্রপতি। আ.সং