মার্কিন নির্বাচন: বাংলাদেশে এত আগ্রহ কেন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কয়েক ঘণ্টা পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হোয়াইট হাউজে কে আসবেন – হিলারি ক্লিনটন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প? পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশও এ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।
কিন্তু আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে এতটা আগ্রহ কেন?
চায়ের দোকান, পাবলিক বাস কিংবা সাধারণ রেস্টুরেন্ট – সব জায়গাতেই আলোচনার বিষয় এখন আমেরিকার নির্বাচন।
হিলারি ক্লিনটন বাংলাদেশে একটি পুরনো নাম। গত কয়েক মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প নামটিও বাংলাদেশে অনেকের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে।
সাধারণ মানুষের মাঝে এখন বাংলাদেশের ইস্যু নিয়ে যতটা না আলাপ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি স্থান পাচ্ছে আমেরিকার নির্বাচন। কেন তারা বিষয়টিকে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন ?
বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের মাঝে হিলারি ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প – উভয়ের সমর্থন আছে। কোন প্রার্থী জিতলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে, সে বিষয়ে তাদের পরিষ্কার কোন ধারণা নেই।
তবে অনেকে মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়লাভ করলে সেটি সে দেশের মুসলমানদের জন্য খুব একটা ভালো হবে না। নির্বাচনী প্রচারণায় উভয় প্রার্থীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে তাদের এ ধারণা জন্মেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা আক্তার বলেন, “মুসলমানদের বিষয়ে ট্রাম্পের যে বিদ্বেষমূলক মনোভাব সেটা আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হবে সেটার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও এখন আমেরিকার নির্বাচনের খবর। সংবাদপত্রেও আমেরিকার নির্বাচনের খবর গুরুত্ব পাচ্ছে। যে কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহও বেড়েছে।
ঢাকার রাস্তায় আইসক্রিম বিক্রি করেন আফজাল হোসেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তারও বেশ আগ্রহ। তিনিও মনে করেন আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট কে হবে তার উপর বাংলাদেশের ভালো-মন্দ নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, “আমেরিকা যে কথা বলতেছে, সে কথাই পুরা বিশ্ব শুনতেছে। যে প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হবে সে যদি বাংলাদেশের লগে যোগাযোগটা ভালো রাখে তাহলে আমাদের লাভ।”
বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা মনে করেন আমিরেকার এ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য রাজনীতি এবং অর্থনীতি – এ দু’টো ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকে মনে করছেন, কে প্রেসিডেন্ট হবে তার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কি রকম হবে তা নির্ভর করবে। হিলারি ক্নিনটন ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে সম্পর্ক কেমন হবে সেটি নিয়েও বিশ্লেষকদের মাঝে নানা মত আছে।
কিন্তু সাবেক কূটনীতিক এবং আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করেছেন ডঃ এম এ মোমেন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠ। তিনি মনে করেন, হিলারি কিংবা ট্রাম্প – যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হোক না কেন, তাতে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার নীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না।
ডঃ মোমেন বলেন, “আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারিত হয় সে দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে। কোন ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে তাদের ফরেন পলিসি নির্ধারিত হয় না।”
তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আমেরিকার যে স্বার্থ জড়িত আছে সেখানে বাংলাদেশকে তারা গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ মনে করছে। দক্ষিণ চীন সাগরে আমেরিকার ক্রমবর্ধমান স্বার্থের কারণে তারা ভারতকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মনে করে।
তিনি বলেন, আমেরিকায় যিনি ক্ষমতায় আসুক না কেন, বাংলাদেশের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে তারা ভারতের সাথে পরামর্শ করবে। আমেরিকা একা কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় দেখা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অভিবাসন বিরোধী এবং সেখানে বসবাসরত মুসলমান জনগোষ্ঠির বিপক্ষে। বাংলাদেশে বসবাসকারী যাদের স্বজনরা আমেরিকায় আছে তারা বিষয়টির দিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে।
রাজনীতি, অভিবাসন ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্কটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। টাকার অংকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রফতানি করে আমেরিকায়।
যদিও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন আমেরিকার কাছ থেকে বাড়তি কোন সুবিধা পাচ্ছে না।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ডঃ আহসান মনসুর মনে করেন, কে প্রেসিডেন্ট হবেন তার উপর আমেরিকার বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্ভর করবে বলে তার ধারণা।
আহসান মনসুর মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি সংরক্ষণবাদী। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে আমেরিকা হয়তো তার উন্মুক্ত বাণিজ্য নীতি থেকে ধীরে-ধীরে সরে আসবে।
সেটা করতে গিয়ে আমেরিকা যদি তাদের ট্যারিফ বা শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আহসান মনসুর উল্লেখ করেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন কে প্রেসিডেন্ট হলে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে – সেটি পুরোটাই এখনও পর্যন্ত অনুমান নির্ভর।
নির্বাচনী প্রচারণার দুই প্রার্থীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করেই এ ধারণা করা হচ্ছে।
তবে যিনি প্রেসিডেন্ট হোক না কেন, আমেরিকার নীতির যে দ্রুত পরিবর্তন হবে সেটির প্রভাব যে তাৎক্ষণিক পড়বে তা বলা যায় না।
সূত্র : বিবিসি