সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড় পাঙ্গাসী ইউপির খাদুলী গ্রামের রাজাকার মৃত সাইফুল ইসলামের ছেলের হুমকিতে গ্রাম ছাড়া আওয়ামী লীগের ৪৫ পরিবার। তারা গ্রামে ফিরে যেতে নয় মাস যাবত প্রশাসনসহ বিভিন্ন দ্বারে ঘুরছে।
দীর্ঘ নয়মাস ধরে পরিবারগুলো শিশু সন্তান নিয়ে বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবারের ৫২ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় রাজাকার পরিবারের সদস্যরা কিভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারকে গ্রামছাড়া করে এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চল বড়পাঙ্গাসী ইউপির খাদুলী গ্রাম। এ গ্রামে প্রায় আটশ’ পরিবার রয়েছে। এদের মধ্যে রাজাকার সাইফুল ইসলাম পরিবারটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী। জীবিত অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে রাজাকার সাইফুল ইসলাম খাদুলী গ্রামের প্রায় ৫৪ একর সরকার সম্পত্তি আর.এস খতিয়ানে টেম্পারিং সিল প্যাডের মাধ্যমে জাল দলিল করে দখল করে নেন। কিন্তু সম্পত্তি গুলো লিজ থাকায় লিজধারীদের সাথে দ্বন্দ্ব হয়। এর মধ্যে ১১শ’ ৮০ শতক জমি বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রিও করেছে। এ নিয়ে সরকার পক্ষে জেলা প্রশাসক বাদি হয়ে দুটি মামলাও দায়ের করেছেন। পরে গ্রাম্যভাবে শালিস বৈঠকে সাইফুল রাজাকার পরিবার দোষী সাব্যস্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
২০১২ সালে সাইফুল রাজাকার মারা গেলে তার ছেলে সৈয়দ আলী, শহিদুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন, নবীর উদ্দিন ও ভাই আবু সিদ্দিক ওরফে হুকুম আলীরা নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করে। ২০১৬ সালে রাজাকার পরিবার আওয়ামী লীগে যোগদান করে। যোগদানের পরই গ্রামে ঢুকেই পুলিশের সহযোগিতায় লিজধারীদের কাছ থেকে সরকারী সম্পত্তি দখল করে নেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সৈয়দ বাহিনী এলাকার নান্নু ও জাহাঙ্গীরসহ মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামলীগের ৪৫ পরিবার তাদের রোষানলে পড়েন। একপর্যায়ে সৈয়দ বাহিনী ৪৫ পরিবারের বসতবাড়ীতে হামলা চালিয়ে মারপিট-ভাংচুর-পুকরের মাছ মেরে নিয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা লুটপাট করে নেয়। হত্যার হুমকি দিয়ে ৪৫ পরিবারকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেন।
এ অবস্থায় গত নয়মাস যাবত ৪৫টি পরিবার ১৭জন নাবালক শিশু এবং ৫২জন শিক্ষার্থী নিয়ে নিজ জন্মভূমি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ৫২জন ছাত্র-ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামছাড়া পরিবারগুলো তাদের পৌত্রিক সম্পত্তি প্রায় ২ শতাধিক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না। এমনকি বর্গার মাধ্যমে অন্যস্বজনদের দিয়ে চাষাবাদ করাতে চাইলেও সন্ত্রাসী বাহিনী তাতেও বাঁধা দিচ্ছে।
রাজাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আলী-শহিদুল-নবীর-আবু সিদ্দিক-রজব ও জেন্দার-জব্বার সরকার বাহিনীর অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পরিবারগুলো আইজিপি বরাবর লিখিত আবেদনও করেছিলেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে শাহজাদপুর সার্কেলের এএসপি আবুল হাসনাত সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করলেও উল্লাপাড়া থানা পুলিশ এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগের ৪৫ পরিবার গ্রামে ফিরে যেতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছে।
বিডি-প্রতিদিন