এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফিরে : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ফলে বাগেরহাট সহ ১০ জেলার ঘূর্ণিঝড় নাডার প্রভাবে হঠাৎ বৃষ্টিতে ইটভাটার প্রায় ১শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দুই দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পর শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। কার্তিকের শেষ দিকে এ বৃষ্টিতে ৯৫০টি ইটভাটার কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আমাদের বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবিরের পাঠানো তথ্যর ভিতিতে জানা যায় শুক্রবার থেকে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। শনিবার সকাল থেকে বৃষ্টি বেড়ে যায়। বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কার্তিকের শেষ দিকে এমন ভারী বর্ষণ হবে এমনটি না ভাবায় ইটভাটা মালিকেরা তার খেসারতও দিচ্ছেন। ইট-ভাটাগুলোতে কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভাটা মালিকরা বলছেন কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে ইট উৎপাদন। এতে তাদের প্রায় ১শ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।
বাগেরহাট ইট ভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট মোট ২৩০টি ইটভাটা রয়েছে। হঠাৎ করে শনিবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতিটি ইটভাটার গড়ে ২০ থেকে ২১ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠে শুকাতে দেওয়া ওইসব ইটগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে পুনরায় সেগুলোকে মাঠ থেকে তুলে জমা করতে হবে। পরে মাঠ পুরোপুরি শুকিয়ে পুনরায় ইট তৈরী করতে হবে। এতে করে লাগবে বাড়তি শ্রমিক খরচ। ইটগুলো তৈরী, ভিজে যাওয়ায় মাঠ থেকে অপসারন ও নতুন করে ইট তৈরীর কারনে প্রতিটি ইটভাটায় গড়ে প্রায় ২১ লাখ টাকার ক্ষতি হবে। এই হিসেবে বাগেরহাট জেলায় ৯৫০টি ইটভাটায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১শ কোটি টাকা।
ভাটা মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক হাজার ইট তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৪৫০ টাকা এবং এক লাখ ইট তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ৪৫ হাজার টাকা। বেশ কয়েক দিন ধরে ভাটা মালিকেরা কাঁচা ইট তৈরি করে রোদে শুকিয়ে তা পুড়িয়ে পাকা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
কিন্তু শুক্রবার ও শনিবার দুই দিনের বৃষ্টির কারণে পানিতে ভিজে সদ্য তৈরি কাঁচা ইট ভেঙে নষ্ট হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। এতে ৯৫০টি ইটভাটা মালিকের প্রায় ৩শ কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে।
রবিন দত জানান, বৃষ্টির আগে এখানে প্রায় ১০ লাখ কাচা ইট ছিল। হঠাৎ করে বৃষ্টিপাতের ফলে এই ভাটার সব ইটই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ইট মাঠ থেকে অপসারন করে পুনরায় ইট তৈরী করতে হবে। এতে এই ভাটার প্রায় ২০ লাখ টাকার মত লোকসান গুনতে হবে।
শুধু তাই নয় বৃষ্টির কারনে নতুন করে ইটভাটাগুলোকে উৎপাদনে যেতে লাগবে আরও এক সপ্তাহের অধিক সময়। ফলে ওই সময়টিতে যে পরিমাণ ইট উৎপাদিত হতো সেটিও এখন লোকসানের খাতায় যোগ করতে হবে বলে তিনি জানান। জুলফিকার জানালেন, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে যে ইটগুলো তৈরী করা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। কাজ বন্ধ থাকায় শুক্রবার কোন বেতন পাননি তারা। মাঠের পানি শুকালে ভিজে যাওয়া ইটগুলো মাঠ থেকে অপসারন করা হবে। এই নষ্ট ইট গুলো সরাতে যতদিন সময় লাগবে ততদিন পর্যন্ত তারা কোন বেতন পাবেন না। কাজ করতে হবে পেটে-ভাতে।
শ্রমিক হামিদুল ইসলাম জানান, পেটে ভাতেই কাজ করতে হবে। তাছাড়া কোন উপায় নেই। আমাদের যেমন ক্ষতি ঠিক তেমনি ক্ষতি মালিকদেরও। মাটি অপসারন না করানো হলে তোন উৎপাদন শুরু হবে না আর আমাদের কাজও শুরু হবে না। তিনি জানান, দিন হাজিরা ভিত্তিতে প্রতিজন শ্রমিক ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা করে উপার্জন করেন।