শনিবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং ১৪ই আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মাইনাস হচ্ছেন রাজনীতি থেকে খালেদা

ডেস্ক রির্পোট সরকার রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে সম্ভবত: সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহন করতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা- পেট্রোল বোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে খালেদা জিয়ার বিচার হবে। সরকারের তথ্যমন্ত্রীসহ নীতি নির্ধারকরা জনসভা-আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্য মামলাগুলিও এখন সচল এবং বিচারে দ্রুতগতি পাচ্ছে। দেখে-শুনে মনে হচ্ছে, আইনী কাঠামোর মধ্যে খালেদা জিয়াকে দন্ড প্রদান করা হলে সরকার নিশ্চিন্ত হবে একটি দুর্বল-অথর্ব বিএনপির মোকাবেলায়। দাতাদের চাপে সরকারকে একটি নির্বাচন দিতে হবে, এটি তাদের ভেতরের এজেন্ডা। যদিও তারা প্রকাশ্যে বলছে ২০১৯ সালের আগে কোন নির্বাচন নয়।
 
আমাদের নেতা-নেত্রীরা প্রতিবছর সৌদী আরবে ওমরাহ্ পালন করতে গিয়ে থাকেন। রাজনৈতিক নেতাদের বাইরে সম্পন্ন অনেক মানুষও ধর্মীয় এই আচরনটি পালন করে থাকেন। গত কয়েক দশকে এটি একটি রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। ওমরাহ্ পালনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দ্বিবিধ কারন থাকে। মুসলিম দেশ হিসেবে সৌদী রাজতন্ত্রের একটি প্রবল প্রভাব রয়েছে অপরাপর মুসলিম দেশের ওপর এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় মুসলিম উম্মাহ্র স্বার্থের বিষয়টি আমাদের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রাজকীয় মেহমান হিসেবে প্রায় প্রতি বছরই সৌদী আরবে ওমরাহ্ পালন করতে যান। সাম্প্রতিককালে তাঁর জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল এ কারনে যে, তারেক জিয়াও এ সময়ে ওমরাহ্ পালনে সৌদীতে আসেন। মাতা-পুত্রের মিলনকেন্দ্র তো বটেই, রাজনৈতিক বিষয়ে মতবিনিময় ও সিদ্ধান্ত গ্রহনে এই সফর দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
 
খালেদা জিয়া হঠাৎ করেই চলতি বছরে ওমরাহ্ পালন স্থগিত করেছেন। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে এটি বেশ কৌতুহলোদ্দীপক এবং দলের জন্য অপ্রত্যাশিত। দলের নেতারাও এ বিষয়ে প্রায় কিছুই জানেন না। বেগম জিয়ার মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন সংবাদ সম্মেলনে একটি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করলেও তার মধ্যে রয়েছে যদি, কিন্তু, হয়তো ইত্যাদি। রিপন সংবাদ সম্মেলনে তার অনুমানের কথা জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ নেতাদের কারাগারে অসুস্থ হওয়া, দ্বিতীয়বারের মত স্থানীয় এক নেতার কারাগার থেকে মৃত বেরিয়ে আসা, অনেক নেতা, কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা, সব মিলিয়ে চেয়ারপার্সন সংবেদনশীল ছিলেন। এসব অবস্থা দেখে তাঁর মানসিক অবস্থা ভাল ছিল না। রোজার শুরু থেকেই চেয়ারপার্সনের শরীর ভাল যাচ্ছিল না। সে কারনে হয়তো তিনি ওমরাহ্ পালনে যাচ্ছেন না’।
 
আসাদুজ্জামান রিপনের অনুমান কতটা সত্যি তা যাচাই করার সুযোগ নেই। তবে সত্তর পেরোনো খালেদা জিয়া রাজনীতির বাইরে একজন মা ও আত্মীয়-স্বজন পরিবৃত সংবেদনশীল মানুষ। ছোট ছেলে আরাফাতের অকাল মুত্যু, তার আগে ভাই সাঈদ ইসকান্দারের মৃত্যু, বড় ছেলে তারেকের প্রলম্বিত প্রবাস জীবন, ২০০৭ সাল থেকে প্রতিদিনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, পুত্রের কোটারি রাজনীতি ও একের পর এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত, আন্দোলনে ধারাবাহিক ব্যর্থতা, মামলা-মোকদ্দমা-মানুষ হিসেবে এসব ঘটনায় খালেদা জিয়া শারীরিক-মানসিক উভয়বিধ অসুস্থ হতে পারেন। সাম্প্রতিককালে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় তিনি এতই উত্তেজিত ছিলেন যে, নেতাদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন, কি মনে করেন আপনারা? এটি জিয়ার বিএনপি নাতো হাসিনার বিএনপি? এই বক্তব্যর মধ্য দিয়ে তাঁর অন্তর্নিহিত অসহায়ত্ব প্রকাশ হয়ে পড়ে যে, এই মূহুর্তে তিনি দলের অনেক নেতার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না।
 
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার বিষয়টি না থাকলে সংকটকালে সৃষ্টি হয় ধারাবাহিক অবিশ্বাস, সন্দেহ ও অনাস্থা। বিএনপি এখন এ বিষয়ে রয়েছে চূড়ান্ত অবস্থায়। ক্রমাগত ব্যর্থতা সন্দেহকে পরিনত করেছে অবিশ্বাসে। ২০০৬ সালের পর থেকে ক্ষমতার ক্ষাইরে বিএনপিকে ঘিরে ফেলছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বেগম জিয়ার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রাখলে দলে তারেকের একচ্ছত্র আধিপত্য মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন না। ক্ষমতায় থাকাকালে সেটি প্রকাশ্য না হয়ে উঠলেও এখন তা অনেকটাই খোলাখুলি। বেগম জিয়া রুষ্ট হতে পারেন এজন্য সামনে তারা এটি প্রকাশ করেন না। কিন্তু বর্তমান সংকটের মূলে যে তারেকের অদুরদর্শী ও কোটারি রাজনীতি, তা অনেকে মনে-প্রানে বিশ্বাস করেন।
 
৫ জানুয়ারির পর থেকে নিস্ফল আন্দোলন বিএনপির নেতৃত্বকে নির্জলা বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। দলে সামান্যতম গণতন্ত্র চর্চা থাকলে এর দায় অবশ্যই বিএনপি নেতৃত্বকে নিতে হত। কিন্তু নিস্ফল এই কর্মসূচির দায় কেউ নিতে চান না। জ্যেষ্ঠ নেতারা দাবি করছেন, কর্মসূচি দেয়া হয়েছিল আচমকা, দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়াই। এমনকি সবশেষ গত এপ্রিলে খালেদা জিয়া হরতাল কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন, অবরোধ চলবে। আজ অবধি এ ব্যাপারে আর কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ প্রত্যাহারের বিষয়ও দলীয়ভাবে কিছু বলা হয়নি। প্রশ্নটি থেকেই যাবে, যদি দলীয় ফোরামে ‘সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে’-এ সিদ্ধান্ত না নেয়া হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটি কে দিয়েছিল?
 
বিএনপির রাজনীতিতে পরিবারের রয়েছে একক প্রভাব। নেতারা জিয়া পরিবার বলতে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যান। ক্ষমতার বিএনপিতে রাজনীতির জন্য নয়, পরিবারের প্রতি সীমাহীন আনুগত্য ও সেবাদান করে পদ-পদবী, আখের সবই গুছিয়েছেন অনেকে। যারা না পেরেছেন মূলধারার বাইরে ছিটকে গেছেন। ক্ষমতার বাইরে ক্রান্তিকালের বিএনপির অনেকেই সরকারের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখছেন। এইসব নেতাদের ব্যাপারে সন্দেহ-অবিশ্বাস থেকেই আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে বেগম জিয়া থেকেছেন তারেক নির্ভর, আর থেকেছেন তাঁর কার্যালয়ের অতি উৎসাহী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর। উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবারতন্ত্রের বিষয়টি ক্ষমতায় থাকাকালে বোঝা যায় না। বোঝা যায় ক্ষমতা হারানোর পরে। সামগ্রিকভাবে বিএনপির চেহারায় এখন সেটিই পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে।
 
পারিবারিক উত্তরাধিকারে বিএনপির ক্রাউন প্রিন্স তারেক জিয়া সংকটকালে দলের হাল ধরার উপযুক্ত ছিলেন না। তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, চিন্তা ও রাজনৈতিক ভাবনা ক্রান্তিকালে দলের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াচ্ছে, দলকে ঠেলে দিচ্ছে আরো সংকেটের মাঝে। এজন্য একটি প্রশ্ন এখন বারবার উচ্চারিত হচ্ছে। রাজনীতি থেকে বিএনপি কি অপসৃত হতে চলেছে? দলের নেতৃত্ব কি তারেকের হাত থেকে চলে যাচ্ছে? একক সারথী হিসেবে খালেদা জিয়া কি সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে আস্থায় এনে দলকে গতিময়তা দিতে সক্ষম হবেন, যেটি তিনি পেরেছিলেন ১৯৮৩ সালের পরে। কতগুলি কার্যকারণ ও ফলাফল দিয়েই রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করে এবং বিষয়গুলি রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও প্রভাবিত করে। ২০০১-০৬ মেয়াদে ক্ষমতাকালীন সময়ে, ক্ষমতার বাইরে ২০০৭-০৮ এবং ২০০৯-১৫ মেয়াদে রাজনীতির এই কার্যকারণ বিএনপির মুল নেতৃত্ব, বিশেষ করে তারেক জিয়া বুঝতে সক্ষম হননি। ফলে তার সৃষ্ট রাজনৈতিক অভিঘাত দলকে বর্তমান বিপর্যয়ের মুখোমুখি করে দিয়েছে।
 
হালে জিয়ার আদর্শে ফিরে আসার কথা বিএনপিতে জোরে-শোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এটি বলা হচ্ছে, কারন অনেকেই মনে করছেন তারেকের নেতৃত্বে বিএনপির রাজনৈতিক দুর্দিন আরো প্রলম্বিত হবে। জিয়াউর রহমানের রাজনীতির একটি বৈশিষ্ট্য অনুকরণীয় হতে পারে। সেটি হচ্ছে, আত্মীয়-স্বজনকে দল ও সরকার থেকে দুরে রাখা। জিয়া পরবর্তী বিএনপিতে এর বৈপরীত্য দেখা গেছে। বেগম জিয়া পুত্র, ভাই-বোন, ভাগ্নে-ভাগ্নি ও মাতৃকূলের আত্মীয়দের দলের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসেন। এই ক্ষতিকর প্রভাব বলয় থেকে তিনি এখনও বের হয়ে আসতে পারেননি। বরং ছেলের উত্তরাধিকার হিসেবে পুত্রবধুকে দায়িত্ব দেবার কথা ভাবছেন। এজন্যই প্রশ্ন উঠেছে, দলের ক্রাইসিস মোকাবেলায় বেগম জিয়া কি পুরোনো নীতিকে আঁকড়ে থাকবেন, নাকি জিয়ার বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন?
 
 
এই নির্বাচনটি ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আভাস মিলতে শুরু করেছে। ক্ষমতাসীনদের জন্য এখন হিসেব-কিতেবের বিষয় হচ্ছে, আগে নির্বাচন নাকি খালেদা জিয়ার বিচার? জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিচারের বিষয়ে বেশি আগ্রহী। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আগামী রাজনীতি বিএনপির জন্য আরো সংকটপূর্ণ হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এটি মোকাবেলায় বিএনপি কি ধরনের লক্ষ্যভেদী কৌশল গ্রহন করে, সেটিই আগামীতে পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে উঠবে। অন্যথায় ইতিহাসের অনিবার্যতায় রাজনীতি থেকে বিএনপি অপসৃত হবে, যা গণতন্ত্রের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

এ জাতীয় আরও খবর

সিনহার বইয়ে কোনো সংবাদপত্র জড়িত কিনা, খুঁজে বের করুন: প্রধানমন্ত্রী

দুঃখ নেই টাইগারদের, কথা রেখেছেন মাশরাফি!

ফেসবুক আইডি বাতিল ভুল সিদ্ধান্ত দেয়া সেই আম্পায়ারের!

আবারও একটি স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

যে কারণে ফেরানো যাচ্ছে না ভারতের কারাগারে থাকা বাংলাদেশি জঙ্গিদের

আপাতত রক্ষা পেয়েছেন সাকিব

‘হাসিনা: অ্যা ডটার্স টেল’

লিটন কি সত্যি আউট ছিলেন?

প্রেমিকের জন্মদিনে পরা আলিয়ার পোশাকের দাম কত?