অন্য রকম লড়াইয়ের প্রস্তুতি
ক্রীড়া ডেস্ক :জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডেতে টেস্টের চেয়ে ভালো দল ধরে নিয়েও এই সিরিজে বাংলাদেশ দল বড় প্রতিপক্ষ মনে করছে শিশিরকে। বাংলাদেশের মূল বোলিং শক্তি স্পিনাররা, আর শিশির হলো স্পিনারদের বড় শত্রু
প্রস্তুতি ম্যাচ শেষ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ততক্ষণে নেমে এসেছে সন্ধ্যার অন্ধকার। অথচ জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটারদের মাঠ ছাড়ার নামগন্ধ নেই! খেলা শেষে নেট প্র্যাকটিসে নেমে পড়লেন ম্যাচের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররা। কেউ কেউ করছেন কুলডাউন।
এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। বরং ক্রিকেট ম্যাচের পরের পরিচিত এক দৃশ্যই। কিন্তু মাঠ ছাড়তে জিম্বাবুয়ে দলের ওই বিলম্ব যে বিপাকে ফেলে দিচ্ছিল বাংলাদেশ দলকে! বাংলাদেশ দলের কাল অনুশীলন ছিল ফ্লাডলাইটের নিচে। সূচি অনুযায়ী জিম্বাবুয়েও সে সুযোগ পাবে আজ। কিন্তু জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়েরা মাঠে থাকা অবস্থায় আলো জ্বেলে দিলে তারা কালই সুবিধাটুকু পেয়ে যেত বলে জ্বালানো হচ্ছিল না ফ্লাডলাইট। অনুশীলনে নামার আগে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীর গরমের পর্বটা তাই হলো সাঁঝের অন্ধকারে। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা। জিম্বাবুয়ে কখন মাঠ ছাড়বে, কখন জ্বলবে ফ্লাডলাইট?
জিম্বাবুয়ে দল মাঠ ছাড়ায় সমস্যার সমাধান হয়ে গেল সন্ধ্যার পর পরই। ফ্লাডলাইট জ্বলে উঠল। শুরু হয়ে গেল কৃত্রিম আলোর নিচে আসল অনুশীলন। শুরুটা হলো ফিল্ডিং দিয়ে। এরপর ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন এবং সেটা মাঝমাঠের ২ উইকেটে। সিরিজ শুরু হয়ে যাওয়ার পর মাঝ উইকেটে প্র্যাকটিস না করাটা নিয়ম হলেও স্বাগতিক হিসেবে এটুকু সুবিধা সব দলই নেয়। বাংলাদেশই বা নেবে না কেন!
কাল থেকে শুরু ওয়ানডে সিরিজের পাঁচটা ম্যাচই দিবারাত্রির। জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডেতে টেস্টের চেয়ে ভালো দল ধরে নিয়েও এই সিরিজে বাংলাদেশ দল বড় প্রতিপক্ষ মনে করছে শিশিরকে। বাংলাদেশের মূল বোলিং শক্তি স্পিনাররা, আর শিশির হলো স্পিনারদের বড় শত্রু। শিশিরভেজা বলে আঙুল জড়ানোটাই যে একটা সমস্যা! শুধু স্পিনার কেন, ফিল্ডারদের হাত পিচ্ছিল করে দিতেও এই বলের জুড়ি নেই। কাল সন্ধ্যায় গ্রাউন্ড ফিল্ডিং করাতে গিয়ে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাই চিৎকার করে খেলোয়াড়দের সতর্ক করে দিচ্ছিলেন, ‘মাঠ শিশিরে ভেজা। ম্যাচের সময়ও কিন্তু এভাবেই বল আসবে…।’
ওয়ানডে সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচটা দিবারাত্রির না হলেও বিসিবি একাদশের অধিনায়ক এনামুল হকের কাছ থেকে কন্ডিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে পারে বাংলাদেশ দল। কাল ম্যাচ শেষে এনামুল বলছিলেন, ‘উইকেটটা আজ (গতকাল) পেস বোলার সহায়ক ছিল। পেস বোলাররা ভালো বোলিং করেছে। স্পিনাররা খুব বেশি বল করেনি। তবে আমার মনে হয় স্পিনারদের জন্যও অনেক সাহায্য থাকতে পারে উইকেটে।’ যদিও সেটা পুরোপুরিই নির্ভর করছে শিশিরের ওপর। আর প্রস্তুতি ম্যাচের উইকেট পেসারদের বন্ধু ছিল মূলত উইকেটে কিছু ঘাস থাকায়। শিশিরভেজা রাতের খেলায় ওয়ানডে সিরিজের উইকেট যে সে রকম হবে না, তা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যাচ্ছে এখনই।
ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যতটা না লড়াই, স্পিননির্ভর বাংলাদেশ দলকে তার চেয়ে বেশি লড়তে হবে তাই কন্ডিশনের সঙ্গেই। আজ দিনে অনুশীলন বলে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগটা বাংলাদেশ দলের জন্য শেষ হয়ে গেছে কালই। অবশ্য কালকের অনুশীলনে যে দলের সবাই উপস্থিত ছিলেন, তা নয়। কোচ বিশ্রাম দেওয়ায় অনুশীলনে আসেননি সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল।
গা-গরমের পর আসল অনুশীলনে নামার আগে কিছুটা সময় ড্রেসিংরুমে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবেই জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়দের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাঁদের দেখাচ্ছিলেন কম্পিউটার বিশ্লেষক নাসির আহমেদ। কিছু ফুটেজ তো আগে থেকেই ছিল, কিছু যোগ হলো কালকের প্রস্তুতি ম্যাচ থেকে। ফুটেজ দেখার আগে এনামুলও বলছিলেন, ‘ওদের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে হয়তো আগেও কাজ করা হয়েছে। আজকের (গতকাল) ম্যাচের ভিডিওটাও আমরা একসঙ্গে দেখব, কার কোথায় দুর্বলতা আছে তখন ভালোভাবে দেখতে পারব।’
৩-০-তে টেস্ট সিরিজ হারা জিম্বাবুয়ে কাল এক দিনের প্রস্তুতি ম্যাচটিও হারায় ওয়ানডে সিরিজে তাদের আত্মবিশ্বাস থাকবে তলানিতে। বাংলাদেশের জন্য এটি একটা সুযোগ। তবে জিম্বাবুয়েকে হারানোর আগে যে হারাতে হবে শিশিরকেও!