ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর অঞ্চলে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসব
রিয়াসাদ আজিম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য। পলো উৎসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ। আগেকার দিনে বছরে একবার এই উৎসবটি পালন করতেন হাওর পাড়ের লোকজন। উৎসবের দিন সকালে নিজ নিজ পলো, হাতাজাল, উড়ালজাল ও লাঠিজালসহ নানা ধরণের মাছ ধরার জিনিসপত্র নিয়ে হাওর পাড়ে গিয়ে সমবেত হতেন।
ঘড়ির কাটায় নির্ধারিত সময় বেজে ওঠলেই সবাই মিলে এক সঙ্গে পলো নিয়ে পানিতে ঝাপিয়ে পড়তেন। বর্তমান যুগে কালের গর্বে সেই উৎসবটি বিলিন হতে চলেছে। নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলেরা পলো উৎসব কি সেটা জানে না। কালের পরিক্রমায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল আর নালা। শত প্রতিকূলতার মাঝেও বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য ধরে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর অঞ্চলে শুরু হয়েছে পলো উৎসব।
মঙ্গলবার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের মলাইশ এলাকার বালিয়া ঝুড়ি বিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে পলো উৎসব। এই পলো উৎসবকে কেন্দ্র করে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শৌখিন ও মৌসুমি মৎস্য শিকারীরা পলো নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।
জানাগেছে, মাছ ধরার উপকরণ পলো দিয়ে এই মাছ ধরা হয় বলে এটির নাম পলো উৎসব দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক প্রস্তুতি না থাকলেও শৌখিন মাছ শিকারিরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পলো বাওয়ার দিনক্ষণ নির্ধারণের পর সবাইকে জানিয়ে দেন। এ ঘোষণার পর আগ্রহীরা পলো উৎসবে অংশ নেয়। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবারে পর্যায়ক্রমে একেক নদীতে বা জলাশয়ে একেক দিন এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর ৬টা থেকে মলাইশ শশ্মান ঘাটের সামনের তিতাস নদী পার পলো নিয়ে এসে জমাট হতে থাকে মৎস্য শিকারীরা। পরে সম্মেলিত হয়ে শুরু করে মাছ শিকার। ভোর ৭টা থেকে শুরু করে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এই উৎসব। উৎসবে শৈল, বোয়াল, আইড়, বাইম, কালীবাউস, কৈই, কালনা ও টাকিসহ নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরা পড়েছে। একেকজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও আনন্দে মেতে ওঠে। উৎসবে বৃদ্ধ, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের প্রায় পাচঁ শতাদিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
পলো উৎসবে অংশগ্রহণকারী দেওড়া গ্রামের জাফর ভূইঁয়া বলেন, সকলে মিলে এক সাথে মাছা শিকার করার আনন্দ উপভোগ করতে প্রতি বছর আসেন এই উৎসবে। তিনি জানান, প্রতি বছরের কার্তিক মাসে বর্ষার পানি শুকিয়ে গেলে পলো উৎসব শুরু হয়।
হারিয়ে যাওয়া বাঙালির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতেই যেন ঐতিহ্যবাহী পলো উৎসবের আয়োজন করা হয় এমন দাবী জানিয়েছেন মৎস্যশীকারীরা।