শনিবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০১৮ ইং ২৮শে আশ্বিন, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

যে ১৩টি লক্ষণে বুঝবেন ভেঙ্গে যাচ্ছে আপনার ভালোবাসার সম্পর্ক

প্রেমে পড়তে কারো কারো সময় লাগে এক মুহূর্তেরও কম সময়। কিন্তু ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যেতে পারে তেমনি কম সময়ের মাঝে।

সম্পর্কের শুরুতে শিহরণ খেলে যায় অনেকের মনে, নতুন একটা অ্যাভেঞ্চার মনে হয় জীবনটাকে। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস আছে যা আপনার সম্পর্কের ইতি টানতে পারে, এসব সুন্দর মুহূর্তকেও করে তুলতে পারে বিষাক্ত।

হ্যাঁ, ব্রেকআপ ব্যাপারটা অনেক কষ্টের। কিন্তু অনেক সময়ে সেটাই হতে পারে আপনার জন্য খুব ভালো একটি সিদ্ধান্ত। পেশাদার হেলথ কোচ ইসাডরা বম জানান, তিনি ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন যে, যখন সম্পর্কটি বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে তখন বুঝে নিতে হবে তা টিকবে না।

আপনি যদি সঙ্গীর সাথে আগের মত সুখী না থাকেন, অথবা এই সম্পর্কের কারণে চিড় ধরছে আপনার আত্মবিশ্বাসে, তাহলে হয়তো সময় এসেছে সম্পর্কের ইতি টানার। বেশিদিন একটি অসুস্থ সম্পর্কে থাকা মানে আপনার শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।

আপনাদের সম্পর্কটা যত নতুন বা পুরনো হোক না কেন, ব্রেকআপে কষ্ট হবেই। আর এরপরে নিজেকে সারিয়ে তোলার ভারটাও আপনাকেই নিতে হবে। সম্পর্কে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন এত কষ্ট সহ্য করেও ব্রেকআপ করাটাই হবে ভালো সিদ্ধান্ত। দেখে নিন এমনই ছোট্ট ছোট্ট ১৩টি লক্ষণ-

১) আপনি মন খুলে কথা বলতে পারেন না

লাইফ অ্যান্ড ওয়েলনেস কোচ ডানা পিটার্স কাজ করেন এমন অনেক নারীর সাথে যাদের আছে ইটিং ডিজঅর্ডার, বডি ইমেজে সমস্যা এবং খুবই কম আত্মবিশ্বাস। অনেকেই এসব সমস্যা লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। আপনি যদি নিজের এসব সমস্যা প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে আপনি সুস্থতা পাবেন না। সম্পর্কে থাকা অবস্থায় সঙ্গীর সাথে এসব সমস্যার ব্যাপারে কথা বলতে পারলে সম্পর্ক শক্তিশালী হয় এবং ভবিষ্যতেও সুস্থ একটি সম্পর্ক ধরে রাখা যায়। আর তা করতে না পারলে সম্পর্কটি হয়ে যেতে পারে ঠুনকো।

২) পারিবারিক সমস্যা

হ্যাঁ, কোনো পরিবারই একদম নিখুঁত নয়। কিন্তু কিছু কিছু পরিবার খুবই জটিল, আর সে কারণে আপনার ও আপনার সঙ্গীর মাঝে যদি সমস্যা তৈরি হয় তবে সে সম্পর্কের ইতি টানাই ভালো। কারণ একে তো পরিবারের থেকে কোনো কিছু গোপন রাখা ভালো নয়, আর এই টানাপোড়েনের প্রভাব একটা সময়ে আপনাদের মাঝে দুরত্ব তৈরি করবেই।

৩) আর্থিক ব্যাপারে মতবিরোধ

ডিভোর্স অ্যাটর্নি মিশেল সিঙ্কোভিৎজ ফার্গুসনের মতে, আর্থিক ব্যাপারে একমত না হওয়া এবং ভুল বোঝাবুঝি খুব বেশি সমস্যা তৈরি করে এবং সে সম্পর্কের ভবিষ্যতটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

৪) অতীতের সম্পর্ক নিয়ে হিংসা

প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ে হিংসা খুব সুন্দর একটি সম্পর্কের ভিতটাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি আগের মানুষটির সাথে কেমন সম্পর্ক রাখতেন, এটা নিয়ে যদি কারো মাঝে বিদ্বেষ তৈরি হয়, তবে সে মানুষটি আসলে আপনার ভালোবাসার যোগ্য নন। আপনার আগের সম্পর্কের ব্যাপারে কোন লুকোছাপা রাখবেন না ঠিকই, কিন্তু সেটা নিয়ে কোনো হিংসা-বিদ্বেষও বরদাশত করবেন না।

৫) সন্তান পালনে মতবিরোধ

বিবাহিত দম্পতির ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা জরুরী যে, সন্তানকে কীভাবে বড় করে তুলবেন তার ব্যাপারে একমত থাকা। কবে সন্তান নেবেন বা আদৌ নেবেন কিনা, কয়টি সন্তান হবে, সন্তানকে কীভাবে শাসন করবেন এসব ব্যাপারে আলোচন করে একমত হতে না পারলে আপনাদের সম্পর্ক বেশিদিন না টানাই ভালো।

৬) ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ দেওয়া

ফার্গুসন এটাও বলেন, যে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ রাখা, নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক বজায় রাখা খুবই দরকারি। যোগাযোগের অভাবে হতে পারে ভুল বোঝাবুঝি। এছাড়াও ঝগড়া করে দিনের পর দিন কথা না বলা, সমস্যার সমাধান না করা এটাও সম্পর্ক নড়বড়ে করে দ্যে।

৭) সম্পর্ক একঘেয়ে হয়ে যাওয়া

সম্পর্ক বজায় রাখতে গিয়ে যদি আপনি ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে অনেক সময়েই দেখা যায় এই সম্পর্কের শেষ ঘণ্টা বেজে গেছে। অনেক সময়ে অবশ্য কিছু পরিবর্তন এনে (যেমন একসাথে কোথাও বেড়াতে যাওয়া বা সেকেন্ড হানিমুন) সম্পর্কে নতুন প্রাণ এনে দেয় কিন্তু তা সবসময় হয় না। দেখা যায় ব্রেকআপ করাটাই ভালো হয়।

৮) সবসময় ঝগড়া করা

ঘরে ফিরে যদি শান্তির বদলে আপনার মনে হয় যুদ্ধের ময়দানে যাচ্ছেন, তাহলে কেমন সেই দাম্পত্য? কেমন সেই সম্পর্ক? তাকে টেনে নেওয়ার বদলে শেষ করে দেওয়াই কী ভালো নয়? হ্যাঁ, দুটি মানুষের মাঝে বাদানুবাদ হতেই পারে। কিন্তু সবসময় ঝগড়া কখনোই ভালো হতে পারেনা।

৯) তৃতীয় কোন ব্যক্তির ব্যাপারে ভাবা

আপনি সম্পর্কে আছে “ক” এর সাথে, কিন্তু মনে মনে ভাবছেন “খ” এর সাথে প্রেম করলে কেমন হতো? এমনটা কী হয়? তাহলে হয়তো এই সম্পর্ক থেকে আপনার আর পাওয়ার কিছুই নেই, আর আপনারা দুজন একে অপরের জন্য আর ভালো নন। এক্ষেত্রে আপনার ভাবা জরুরী যে কী করলে সম্পর্ক বাঁচাতে পারবেন, অথবা আদৌ বাঁচাতে পারবেন কিনা।

১০) একে অপরকে এড়িয়ে চলা

আপনারা ইচ্ছে করেই একে অপরের সাথে দেখা করছেন না, যোগাযোগ রাখছেন না, তাহলে হয়তো একে অপরের মাঝে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, আর এখন সম্পর্ক ভেঙ্গে দেওয়াই ভালো হবে। আপনি যদি সম্পর্কে সুখী থাকতেন, একে অপরকে ভালোবাসতেন, তাহলে কি এভাবে দূরে দূরে থাকতে পারতেন?

১১) আপনার সঙ্গীকে “ঠিক” করার মনোভাব

আপনি যদি অনবরত আপনার সঙ্গীকে “ঠিক” করার চেষ্টা করেন, আশা করতে থাকেন সে পাল্টে যাবে, তাহলে কী আসলেই এই সম্পর্ক আপনার জন্য ভালো? সঙ্গী যেমন, সেভাবেই তাকে গ্রহণ করুন, তার দোষগুণ দুটো মিলিয়েই। তাকে নিয়ে যদি আপনি অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে কেন তার সাথে প্রেম করছেন আপনি?

১২) অত্যাচার

সম্পর্কে যদি শারীরিক বা মানসিক যে কোনো ধরণের অত্যাচার থাকে তাহলে দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে তা থেকে বের হয় আসুন। কখনোই একে প্রশ্রয় দেবেন না। অত্যাচারিত হওয়ার মানে এই সম্পর্ক কোনোভাবেই আপনার জন্য ভালো হতে পারে না।

১৩) ভুলের জন্য অনুতপ্ত না হওয়া

আপনি একটি ভুল করেছেন, তার জন্য সরি বলছেন ঠিকই কিন্তু তা মন থেকে নয়। শুধুই সঙ্গীর মাথা ঠাণ্ডা করার জন্য সরি বলছেন- তার কোনো মানে হয় না। সম্পর্ক আরো ভালো করে তুলতে আপনাকে মন থেকে অনুতপ্ত হতে হবে ভুলের জন্য। তা করতে না পারলে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কোথায়?

সূত্র: Business Insider