স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে পদ্মা ও যমুনায় ধরা হচ্ছে মা ইলিশ
নিউজ ডেস্ক : সরকারি আদেশ অমান্য করে মানিকগঞ্জের পদ্মা ও যমুনা নদীতে মা ইলিশ ধরছে জেলেরা। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মদদে তারা মাছ ধরে কৌশলে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পর্যাপ্ত জনবল এবং অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ইলিশ মাছ ধরা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় গেল সাত অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত নদীতে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা ও পদ্মা নদী।
দৌলতপুর থেকে হরিরামপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বর্তমানে মা ইলিশের বিচরণক্ষেত্র। জাল ফেললেই উঠে আসছে মা ইলিশ।
এই তিনটি উপজেলার পদ্মা ও যমুনা নদীতে রয়েছে অসংখ্য চর। মূলত এই চর থেকেই জেলেরা ইলিশ ধরতে নৌকা নিয়ে নামছে নদীতে।
এলাকাবাসীদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই এলাকায় প্রায় সাতশ’ জেলে ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত। আর এদের মদদ দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা পাঁচ দিন আগে চর শিবালয়ের ২০ জন ইলিশ শিকারির কাছ থেকে চার লাখ টাকার বিনিময়ে তাদেরকে নির্বিঘ্নে ইলিশ ধরার অনুমতি দেন।
শর্ত অনুযায়ী, নদীতে অভিযান পরিচালনার আগেই ইলিশ শিকারিদের মোবাইল ফোনে সতর্ক করে দেয়া হবে। আরিচা ঘাট থেকে ভাড়ার স্পিডবোটে মূলত অভিযান পরিচালিত হয় বলে ওই নেতা আগেই অভিযানের খবর পেয়ে যায়।
এছাড়া ধরা পড়লেও ছোটখাটো জরিমানার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থারও আশ্বাস দেয়া হয়। তথ্য অনুযায়ী চার লাখ টাকা চুক্তির দুই লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। টাকা লেনদেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা শ্রমিকলীগ ও যুবলীগের প্রভাবশালী দুই নেতা।
মধ্যনগর চরের ৩০ জন ইলিশ শিকারির সঙ্গে প্রায় একই ধরনের চুক্তি হয়েছে শিবালয় উপজেলার এক যুবলীগের প্রভাবশালী নেতার। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিদিন প্রতিটি নৌকা এক হাজার টাকা দেবে ওই নেতাকে। বিনিময়ে সর্তক করে দেয়া এবং হঠাৎ ধরা পড়ে গেলেও কম সাজায় ছাড়িয়ে আনা হবে।
একইভাবে বিভিন্ন এলাকার ইলিশ শিকারি জেলেদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে স্ব-স্ব এলাকার প্রভাবশালী সরকার দলীয় নেতাদের।
এদিকে, দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা, বাঘুটিয়া ও চরকাটারি ইউনিয়নের তিনজন জনপ্রতিনিধির মদদে চলছে ইলিশ শিকার। তাদের মোটা অংকের চাঁদা দিয়ে ইলিশ শিকারিরা নদীতে নৌকা নামাচ্ছে। দুর্গম এই অঞ্চলে মূলত খোলামেলাভাবেই ইলিশ শিকার চলছে।
চরকাটারি ইউনিয়নে বাড়ি একজন মৎস্য কর্মকর্তাও নির্বিঘ্নে ইলিশ ধরার আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি এলাকায় বহুল আলোচিত এবং ওপেন সিক্রেট।
নদী তীরবর্তী ওইসব এলাকার জনগণ জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন থেকে (৯ অক্টোবর) থেকে জেলেরা মাছ ধরা শুরু করে। মাছ ধরে তারা বাজারে না নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের বাজারের ব্যাগে, স্কুল ব্যাগে, লাগেজে ও কার্টুনে করে জেলার বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে ইলিশ মাছ। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তিনশ’ টাকায়। আর আটশ’ থেকে নয়শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আড়াইশ টাকায়।
তবে যাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা অস্বীকার করলেন টাকার বিনিময়ে জেলেদের মাছ ধরতে সহযোগিতার কথা। বরং তারা বললেন, সরকারি কাজে সহযোগিতা করছেন তারা।
শিবালয় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল আলম জানান, গতকাল শুক্রবার অভিযানকালে প্রায় অর্ধশত নৌকা ধ্বংস ও দুলাখ ঘনমিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, যাত্রীবেশী ক্রেতারা ইলিশ কিনে অভিনব কায়দায় নেয়ার চেষ্টাকালে তা জব্দ করে স্থানীয় এতিমখানা ও মাদরাসায় বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, পর্যাপ্ত জনবল এবং অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ইলিশ মাছ ধরা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ইলিশ মাছ ধরা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চলমান অভিযানে আটক ৩৮ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তিনটি উপজেলার নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় নজরদারী করার মতো জনবল ও নৌযান নেই তার কার্যালয়ে। তাই মা ইলিশ নিধন সম্পন্নভাবে রোধ করতে পারছেন না তারা।আরটিভি অনলাইন