মাশরাফির পায়ে কী হয়েছে?
স্পোর্টস ডেস্ক : দুবাই থেকে ফিরে দুদিনের বিরতি। মাশরাফি বিন মুর্তজা আজ এলেন বিসিবিতে। সময় অবশ্য তাঁর কাটল বিসিবির চিকিৎসকের সঙ্গেই। চোটজর্জর বাংলাদেশ দল খেলেছে এবারের এশিয়া কাপে। চোটে পড়া সাকিব-তামিমকে ছাড়াই ফাইনালে লড়তে হয়েছে ভারতের বিপক্ষে। দলের বাইরে না যেতে হলেও চোটের মিছিলে আছেন অধিনায়ক মাশরাফি নিজেও।
ক্যারিয়ারের বড় অংশ তাঁর কেটেছে চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করে। সাত-সাতবার হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হওয়া মাশরাফির কাছে এখন টুকটাক চোটাঘাত কোনো ব্যাপারই না! এবার আঙুলের চোটকে তুচ্ছ ভেবেই খেলেছেন এশিয়া কাপের পুরোটা। মনে সাহস থাকতে পারে, কিন্তু চিকিৎসাবিদ্যাকে তো আর উপেক্ষা করার উপায় নেই। মাশরাফি তাই চিকিৎসকের কাছে এসেছেন চোটাঘাত দেখাতে। বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘মাশরাফির ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে আঘাত ছিল। এটা সারতে তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগে। এর মধ্যে কিছু সময় চলে গেছে। আমরা আশা করছি সপ্তাহ দু-একের মধ্যে ও খেলায় ফিরে আসতে পারে। এ ছাড়াও ওর ঊরুতেও চোট আছে। সেটিও আমরা দেখছি।’
আঙুলের চোট পাকিস্তান ম্যাচেই দেখা গেছে। কয়েক বলের বিরতিতে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে আবারও মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু পায়ে কী হয়েছে মাশরাফির? দেবাশীষ অবশ্য এখনই বলতে পারছেন না অধিনায়কের ঊরুর চোট কতটা গুরুতর, ‘ওর পায়ে বলের সরাসরি আঘাত লেগেছিল। এতে ঊরুতে রক্ত জমে যায়। স্ক্যান করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এটা রক্ত জমাট বেঁধে তৈরি হয়েছে। তবু এটা আমরা সুনিশ্চিত হতে কাল আরও একটা স্ক্যান করব। তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা জমাট বাঁধা রক্ত, নাকি অন্য কিছু। যদি জমাট বাঁধা রক্ত না হয়, তাহলে দুটি উপায়ে এগোনো যেতে পারে। একটা একটু রক্ষণশীল উপায়ে। সাধারণত দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে শরীরই এটা শুষে নেয়। সেটা না হলে অস্ত্রোপচার করে সরিয়ে ফেলতে হয়। তবে এটা খুবই কম করতে হয়।’
এশিয়া কাপ খেলার আগেই চোটাঘাত বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ দলে। সাকিব আঙুলের চোটটা নিয়ে ভুগছেন অনেক দিন। তামিমও ফিরেছেন হাতের চোট নিয়ে। টুর্নামেন্ট শুরুর পর চোটের মিছিল আরও বেড়েছে। তামিমকে ফিরতে হয়েছে একটা ম্যাচ খেলেই। সাকিব খেলতে পেরেছেন চারটা ম্যাচ। পাঁজরের চোট নিয়ে মুশফিক তবুও চালিয়ে গেলেন। সবশেষ জানা গেছে চোটমুক্ত নন মাহমুদউল্লাহও। তার মানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাঁচ স্তম্ভ এই মুহূর্তে চোটাক্রান্ত। তামিমের চোট নিয়ে দেবাশীষ বললেন, ‘১৮ দিনের মতো হয়ে গেছে। ওর হাতের সমস্যা নিয়ে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের হাতের শল্যবিদের (ডেভিড ওয়ারউইক) সঙ্গে দেখা করেছে, তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা পুনর্বাসন পরিকল্পনা ঠিক করেছি। এখন আমাদের ফিজিও থেরাপিস্টরাই কাজ করছে, সেই নির্দেশিকা অনুসরণ করছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত ওর পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি। এর মধ্যে কিছুদিন চলে গেছে। আগামী সপ্তাহ তিনেকের মতো এভাবেই চালানোর পরিকল্পনা করেছি। ২০ অথবা ২৫ তারিখের দিকে ওকে আমরা আবার পর্যবেক্ষণ করব। পর্যবেক্ষণের পরে যদি দেখা যায় ওর হাত স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরো ফিরে পেয়েছে, তাহলে ক্রিকেটীয় কাজগুলো শুরু করব। আর যদি দেখা যায় উন্নতি সন্তোষজনক নয়, তখন হয়তো আবার দেখতে হবে। আপাতত সপ্তাহ তিনেকের মতো সময় লাগবে প্রাথমিক পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া শেষ করতে।’
মুশফিকের পাঁজরের সমস্যাও ভাবাচ্ছে বিসিবিকে। দেবাশীষ বললেন, ‘মুশফিকের পাঁজরে চিড় আছে, মানসিকভাবে একটু ধাক্কা। কোনো হাড়ে যদি চিড় থাকে, তাহলে চার থেকে ছয় সপ্তাহ লাগে সুস্থ হতে। কিন্তু পাঁজরের ব্যাপারটা আলাদা। পাঁজরের কোনো বিশ্রাম থাকে না। সব সময়ই নড়াচড়ার মধ্যে থাকে। পাঁজরের চোট সারতে তাই সময় বেশি লাগে। এখানে ধারণা করছি সপ্তাহখানেক বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু মুশফিক এই সমস্যা নিয়েও ভালো খেলেছে। আপাতত তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে আমরা ওকে পর্যবেক্ষণ করব। যদি এতে কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে হয়তো ও অনুশীলন শুরু করতে পারবে। এটা আমরা সপ্তাহখানেক পরে বুঝতে পারব।’
মাহমুদউল্লাহর ব্যথাটাও পাঁজরে। কাল বিসিবিতে আসবেন বাংলাদেশ দলের এই ব্যাটিং ভরসা। দেবাশীষ জানালেন, কাল দেখার পর বুঝতে পারবেন মাহমুদউল্লাহর চোট কতটা গুরুতর।
এবং সাকিবের আঙুলের অস্ত্রোপচার
সব ঠিক থাকলে আগামী শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার উড়ান ধরতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান। উদ্দেশ্য, মেলবোর্নের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গ্রেগ হয়কে চোট পাওয়া বাঁ হাতটা দেখানো এবং অস্ত্রোপচার নিয়ে আলোচনা করা। বাঁ হাতের কড়ে আঙুলের গোড়ার চোট সারাতে সাকিবের অস্ত্রোপচারের বিকল্প নেই। তবে অস্ত্রোপচার বিলম্বিত হচ্ছে হাতে সংক্রমণ হওয়ায়। আপাতত সাকিব অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছেন হাতের সংক্রমণের ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ও অস্ত্রোপচারের সম্ভাব্য সময় ঠিক করতে। সব মিলে গেলে গ্রেগ হয়ের হাতেই হবে অস্ত্রোপচার। তবে বিসিবির চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী আজ জানালেন, সাকিবের অস্ত্রোপচারের আগে তাঁদের একটু ভাবতে হচ্ছে। কেন ভাবতে হচ্ছে, সেটি ব্যাখ্যা করলেন বিসিবির চিকিৎসক, ‘এ ধরনের চোটে আসলে নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে আসা খুব কঠিন। কনিষ্ঠ আঙুলের চোট নিয়েই খেলা চালিয়ে যাচ্ছিল। যদি অস্ত্রোপচার না করে একজন খেলোয়াড় খেলা চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে খেলোয়াড় বা ম্যানেজমেন্ট চায় অস্ত্রোপচার না করাতে। অনেক সময় অস্ত্রোপচার সমস্যা কিছু বাড়িয়েও দিতে পারে। যদি সংক্রমণ না হতো, তাহলে হয়তো বিষয়টার সমাধান অনেকটা হয়ে যেত। যদি কোনো রক্ষণশীল ব্যবস্থাপনা (কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্ট) ব্যর্থ হয়, তখন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’