প্রধানমন্ত্রীর ডাকের অপেক্ষায় চিত্রনায়ক ফারুক
গাজীপুর ৫ আসন থেকে এমপি নির্বাচন করতে চান ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ফারুক। চিত্রনায়ক হওয়ার আগে থেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এর আগে নিজে নির্বাচন না করলেও দল আওয়ামী লীগেল সঙ্গে ছিলেন সবসময়। বর্তমানে ‘মিঞাভাই’খ্যাত কিংবদন্তি এই নায়কের এলাকার সাধারণ মানুষ তাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায় বলেই মনে করেন তিনি। আর এই কারণেই এমপি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মনোনয়ন পেতে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার ডাকের অপেক্ষায় আছেন এখন।
বুধবার দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে এ বিষয়ে ফারুক বলেন, ‘৫৭ বছর ধরে একটা দলের সঙ্গে আছি, তার আদর্শকে লালন করছি। তাই কনফিডেন্স আছে, আমি নমিনেশন পাব। আমার একটা অধিকার কাছে। আমার মাথার উপর পা দিয়ে অনেকেই তরী পার হয়েছেন এতদিন। আমি কেন পারব না! আমার এলাকার মানুষ আমাকে চায়। তারা বলে আপনি আসেন। আপনি শুধু একেকজনের তরী পার করে দেন। তাছাড়া এই দলের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। সেই আত্মার সম্পর্ক থেকে আমি মনে করি এবার আমাকে নমিনেশন দেওয়া হবে।’
ফারুক আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কখন ডাকবেন আমি জানি না। এটা তার পলিসির ব্যাপার। এবার আসন দরকার। যে যেখান থেকে পাশ করে আসতে পারবে তাকেই দরকার। শতভাগ গ্যারেন্টি দিতে পারি আমি জিতব, ইনশাআল্লাহ। কালিগঞ্জে আমাদের চারশ বছরের বসতি। ভাওয়াল ছাড়া এতো পুরোনো লোক নেই ওখানে। ঈশা খাঁ, ভাওয়াল এবং পাঠান এই তিন বংশ থেকে বেরিয়ে এসেছি আমি ফারুক পাঠান। সুতরাং এখানে আমাদের একটা ঐতিহ্য আছে। ওখানে যা করেছি আমরাই করেছি। এখন জনগণ আমাকে চাচ্ছে। আমিও আমার একটা দায়িত্ব মনে করি নির্বাচনে আসাকে।
আমি বহু জায়গায় গিয়ে গত দুই বছর ধরে নৌকার জন্য ভোট চাওয়া শুরু করেছি। দেশের উন্নয়ন ঠিক রাখতে হলে নৌকাকেই ভোট দিতে হবে। আমি কিন্তু আমার ভোট চাই না। আমি নৌকার ভোট চাই। আমি মনে করি আমাকে নমিনেশন দেওয়া উচিৎ। এই আসন নিয়ে কিছু সমস্যা আছে, এটা দূর করতে পারেন যিনি তার নাম ফারুক। ফারুককে সবাই চায়।’
চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণসোম গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। কিন্তু ফারুক নামে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তার। শৈশব-কৈশোর ও যৌবন কেটেছে গ্রামের বাড়ি ও পুরান ঢাকায়। এখন তিনি থাকেন উত্তরায় নিজ বাড়িতে।
চিত্রনায়ক ফারুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামনের ডাকে সারা দিয়ে দেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানিদের উপর ঝাপিয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’-তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে ফারুকের অত্মপ্রকাশ। প্রথম ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ -এ দুটি চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৭৫ সালে তার অভিনীত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ ছবি দুটি ব্যাপক ব্যবসা সফল হয়। ওই বছর লাঠিয়াল’র জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ ও ‘নয়নমনি’, ১৯৭৮ সালে শহীদুল্লাহ কায়সারের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’সহ বেশকিছু ছবিতে চিত্রনায়ক ফারুকের অভিনয়ন প্রশংসিত হয়।
চলচ্চিত্রের বাইরে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। গাজীপুরে অবস্থিত নিজ শিল্প প্রতিষ্ঠান ফারুক নিটিং ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।