বুধবার, ২৪শে অক্টোবর, ২০১৮ ইং ৯ই কার্তিক, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

অাধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

বিশেষ প্রতিনিধি,  ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সময়ের ব্যবধানে আজ ঐতিহ্যবাহী সেই মৃৎশিল্প, সিলভার ও প্লাস্টিক শিল্পের আগ্রাসনে সাথে পাল্লা দিতে না পেরে ক্রমান্বয়ে  হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরী মাটির জিনিসপত্রে কদর ছিল অনেটাই বেশি। পরিবেশ বান্ধব এ শিল্প শোভা পেত প্রতিটি গ্রামের সবার বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং সময়ের বির্তনের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর  উপজেলার মৃৎশিল্প গুলো আজ যেন অনেকটাই বিলুপ্তি পথে।
এই মাটির তৈরী শিল্পগুলো অনেক কিছুই এখন শোভা পাচ্ছে বিও শালীদের
 বাড়ি ঘরের সামনে, বিল্ডিংয়ের ছাদে, আর ব্যালকোনিতে। এছাড়া  বিভিন্ন অফিস আদালতের সামনে সৌন্দর্য্য বাড়াতে ।   তবে মৃৎ শিল্পিরা হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাচ্ছে না তারা ন্যায্যা মূল্য। অপর দিকে আধুনিক  জিনিসপত্রের ব্যবহারের ফলে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে মাটির তৈরী তৈজসপত্র। তাই ক্রমাগত ভাবে বিজয়নগর উপজেলার মৃৎ শিল্পপল্লী (কুমারপাড়া) গুলো হয়ে পড়ছে নীরব ও নিঃশব্দ।  হয়তো আর শোনা যাবে না  কুমার পাড়া গুলোর টাকুর টুকুর শব্দ। চোখে পড়বে না আর ঐতিহ্য চাকি ঘুরানোর সেই দৃশ্য।
এ প্রসঙ্গে, উপজেলার হরষপুর নোয়াহাটি এলাকার কুমার পাড়া লোকজন বলেন, আগের মতো মাটির তৈরী তৈজসপত্র আর বিক্রি হয় না। অভাবের তাড়নায় অনেকেই পৈত্রিক এই কারুকার্যগুলো ছেড়ে অন্যান্য পেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে।  যারা শুধু হতদরিদ্র তারাই শুধু পড়ে রয়েছে এই পেশায়। পুরো বছরের মধ্যে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসে মাটির তৈরী জিনিসপত্র একটু বেশি বিক্রিয় হয়। তাছাড়া অন্যান্য সময় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে লোকসান গুনতে হয়।
মাটির জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রির বিষয়ে তারা বলেন, বর্তমান সময়ে অল্প কিছু জিনিসপত্র তৈরী করে বিক্রি করি। আগে অনেক রকমারী জিনিসপত্র তৈরী করতাম। এরই মধ্যে বাহারী রং এর থালা. বাসন, নকঁশি করা রকমারী ফুলদানি, ফুলের টপ, শুটকির বড় বড়  মঠকা, সড়া, মালা, পাতিল, রসের হাঁড়ি, দইয়ের পাত্র, পিঠা বানানোর সাজ, মুড়ি ভাজার পাতিল, ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলনা, পুতুল, কইনা, গাড়ি, কলস, পয়সা রাখার মাটির তৈরী ব্যাংক সহ নানা রকম তৈজসপত্রাদি।
হরষপুর   পাল পাড়া কুমারী কাজে ব্যস্ত এরকম কয়েকজন মহিলা বলেন,
 কাঁদা মাটি দিয়ে হাড়ি পাতিল তৈরীতে ব্যস্থ সময় পার করছেন। তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জানা গেছে,  তার পিতার বাড়ী কিশোরগঞ্জে বিবাহ বন্ধনের পর স্বামীর বাড়িতে আসার পর স্বামীর বাড়ির পৈত্তিক পেশাকে সম্মান দেখিয়ে এবং ঐ পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য পাশাপাশি  সাংসারিক কাজের ফাকেঁ এ কাজ করছেন তিনি।  অর্থের অভাবে  মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে তারা।  যদি কোনো দাতা সংস্থা  বা সরকারী ভাবে  আমদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের এই শিল্প আরো উন্নতি হতো।

এ বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, মাটির তৈরী এ ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প যেন আধুনিকতার ছোঁয়ায় না  হারিয়ে যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয় এবং যে সকল শ্রমিকরা মৃৎশিল্পের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের  মাধ্যমে দেশের মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে।