‘কাউকে ঘুষ দেয়ার জন্য আমার পরিশ্রমের রোজগার না’
আসিফ আকবর : সকালে ঘুম থেকে উঠতে চাই না, দিন বড় হয়, ঝামেলাও বড় হয়। দুপুরের আগে আমাকে দেখতে আসলেন আগে থেকেই কারাবন্দী ভাই ব্রাদাররা, তাদের পেয়ে ভালো লাগলো। তারপর অফিস কলে চলে আসলাম, ঢাকা থেকে আমার বস শওকত আলী ইমন ভাই এসেছেন, প্রথম ভিসিটর, সঙ্গে স্বপ্ন প্রধান ভাই আর গীতিকার দ্বীপ। আলাপের ফাঁকে ইমন ভাই সমস্যা সমাধানে জোর দিচ্ছিলেন। উনার পরিকল্পনা শেয়ার করলেন। তারপর আসলো রণ রুদ্র আর বেগম। তাদের সঙ্গেও সময় কাটালাম, ছেলেদের মানসিকতা দৃঢ়। বেগমকে শুধু বলে দিলাম – কোন Deal এ যাওয়া যাবে না। কাউকে ঘুষ দেয়ার জন্য আমার পরিশ্রমের রোজগার না। প্রয়োজনে আমি আরো জেলে থাকবো, কারো কাছে মাথা নত করার সূযোগ নেই । সততাই আমার শক্তি, আইনী প্রক্রিয়ায়ই নিজেকে অভিযোগের খড়গমুক্ত করবো।
ফিরে এলাম কেবিনে, জমে গেল আড্ডা। সন্ধ্যায় ইফতারী আর রাতে খাবার একসাথে করলাম সবাই । একসাথে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম , তুমুল আড্ডা শুরু হল। একে একে সবাই নিজেদের পরিচয় এবং এখানে আসার বিবরন দেয়া শুরু করল। ছোট্ট সবুজ (ছদ্ম নাম) কিভাবে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হয়ে উঠলো।
আরও : আমার ঈদ কাটছে চিন্তা ও উত্তেজনায় : বুবলী
রাজনৈতিক গডফাদার, পরিবারের অসহায়ত্ব, নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কথা বলতে বলতে মানুষগুলো শিশু হয়ে গেলেন। তাদের কথা বার্তা হাসি ঠাট্টা, আবার ছোটবাচ্চা,মা স্ত্রীর জন্য হাহাকারের অনুভূতি আমাকে মুগ্ধ করেই যাচ্ছে। এরা আসলেই অপরাধী নয়, সমাজ এবং সিষ্টেম তাদের অপরাধী বানিয়েছে ।
তৃতীয় দিন সেলে সেলে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমি যেদিন গ্রেফতার হই, ঐদিন আমার বিদেশী বন্ধু আর বড় ভাইরা একসাথেই সেহরী করার কথা। তৃতীয় দিন আসলেন মালয়েশিয়ার আনিস ভাই আর কুমিল্লার জসিম ভাই। তারা এসে পিসি ( প্রিজনারস ক্যাফেটেরিয়া ) তে টাকা জমা দিলেন । অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শিখে গেলাম । প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে লিষ্ট বানিয়ে দিলাম । সাক্ষাৎ শেষে কারা কেবিনের পথে যেতে হাজারো কয়েদীর ভীড়ে পড়ে আমার সঙ্গে থাকা শাওন হারিয়ে গেল। কয়েদীদের উচ্ছ্বাস শ্লোগান আর সেলফিমুক্ত পরিবেশে কেবিনে ফিরলাম। এখন আর খারাপ লাগছে না ,মনে হচ্ছিল এই কারাগারের অনেক পুরনো বাসিন্দা আমি …
(কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের ফেসবুক থেকে নেওয়া)