কিমের আমন্ত্রণ, ট্রাম্পের সাড়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করার আমন্ত্রণে সায় জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দুই নেতা ’যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহও দেখিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ট্রাম্পের হাতে কিম জং উনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন বলে খবর বিবিসির। ট্রাম্প তা সাদরে গ্রহণ করেছেন বলে পরে সাংবাদিকদের জানান প্রতিনিধিরা।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চলা উত্তেজনা ও কথার লড়াইয়ের পর দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের এ দেখা করার সম্ভাবনাকে ‘ব্রেকথ্রু’ হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
কিম পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছেন এবং ‘পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন বলেও দাবি দক্ষিণ কোরীয় প্রতিনিধিদের।
দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচ্যাংয়ে গত মাসে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিককে ঘিরে দুই কোরিয়ার সম্পর্কের বরফ গলে; তারই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে সিউলের প্রতিনিধিরা পিয়ংইয়ংয়ে উত্তরের শীর্ষ নেতার সঙ্গে এক অভূতপূর্ব বৈঠকে অংশ নেন।
সেখান থেকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে কিমের আমন্ত্রণ পৌঁছে দেন।
ট্রাম্প এর আগে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার ‘কোনো সম্ভাবনা’ নেই বললেও কিমের আমন্ত্রণকে ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তবে সুনির্দিষ্ট কোনো চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত পিয়ংইয়ংয়ের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চুং ইয়ো ইয়ং উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার পথে নিয়ে আসায় ট্রাম্পের ‘ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার’ নীতির প্রশংসা করেন।
নিষেধাজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক সংহতি পিয়ংইয়ংকে আগের অবস্থান থেকে সরে আসতে বাধ্য করেছে বলেও ধারণা চুংয়ের।
“কিম পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বন্ধে কথা দিয়েছেন, বৈঠকে তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে আমরা জানিয়েছি। ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষা থেকে সংযত থাকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে স্বাগত জানিয়েছেন; স্থায়ী পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিতে তিনি মে মাসের মধ্যে কিমের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন,” বলেন দক্ষিণের এ নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
ক্ষমতায় থাকা কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগে কখনোই উত্তর কোরিয়ার কোনো শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেননি; ট্রাম্প ও কিম জং উনের মধ্যে এ বৈঠকের সম্ভাবনা কূটনীতিক অঙ্গনে ঝড় বইয়ে দিতে পারে বলেই মনে করছে বিবিসি।
ট্রাম্প মে মাসের মধ্যে উত্তরের নেতার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ দেখালেও মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি।
“চাইলে কয়েকমাসের মধ্যেই এটি (বৈঠক) হতে পারে, তবে কখন এবং কোথায়, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি,” রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন ওই কর্মকর্তা।
আলোচনায় বসার বিনিময়ে উত্তর কোরিয়ার প্রত্যাশা কী তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মানবাধিকার লংঘন ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির কারণে কয়েক দশক ধরেই পিয়ংইয়ং আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। দেশটি ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক আইনের অবজ্ঞা করে আসছে বলেও অভিযোগ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি জোরদার করেছে, বাড়িয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার হার; যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের কথার লড়াই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত বছর ধারাবাহিকভাবে ট্রাম্প ও কিম একে অপরকে কটাক্ষ করেছেন। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র, কিমের এমন ভাষ্যের জবাবে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে ‘আগুনে ঝলসে’ দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন।
বিবিসি বলছে, শীতকালীন অলিম্পিক থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানো, প্রতিটি পদক্ষেপে প্রচারের আলো নিজের দিকে টেনে নিতে সক্ষম হয়েছেন কিম জং উন; অন্যদিকে পিয়ংইয়ংকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসার কৃতিত্ব যেতে পারে ট্রাম্পের ঘরেও।
উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি বাতিলের ঘোষণা না দেওয়ায় দুই নেতার আলোচনা শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, এবং হলেও তা কার্যকর কোনো ফল বয়ে আনবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরাও।