সোমবার, ২১শে মে, ২০১৮ ইং ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

উপ-নির্বাচনে প্রচার প্রচারণায় সরব নাসিরনগর

তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে উপ-নির্বাচন প্রয়াত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে আগামী ১৩ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে সরব আলোচনা এখন নাসিরনগরে। উপ-নির্বাচনে কারা হচ্ছেন প্রার্থী।
কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন। আর দলের হাল এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখতে দলীয় সভানেত্রী কাকে নৌকার  প্রার্থী মনোনীত করবেন এমন নানা আলোচনা চলছে উপজেলার সর্বত্রই। অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাটে, হোটেল-চায়ের দোকানসহ নানা জায়গায় এমনকি ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও, নেতাদের ছবি ও দোয়া চেয়ে চালানো হচ্ছে ব্যাপক প্রচারণা। শোভা পাচ্ছে জনবহুল স্থানে রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার ও বিলবোর্ড।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন আগামী ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন কমিশনের এমন ঘোষণার পর থেকে বসে নেই সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা। নিজ বলয়ের পছন্দের নেতার জনসমর্থন আদায়ে কৌশলে অনেকে  চালাচ্ছেন  প্রচারণা।  আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে এই আসন জুড়ে মাঠপর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা আর হিসাব-নিকাশ। জনকল্যাণে মানুষের পাশে থেকে কোনো নেতা কাজ করতে পারবেন নিজ যোগ্যতায় দলীয় নেতাকর্মী ও মানুষের আস্থাভাজন হবেন এমন নেতার সন্ধান করছেন তৃণমূলের কর্মীরা। আলোচনায় উঠে আসা নেতাদের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠছে কর্মীদের মূল্যায়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে। আলোচনা থেকে বাদ যাচ্ছেন না সচেতন ভোটররাও।
মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুর পর থেকে শোকাহত তার ভক্ত, সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষী, শুভানুধ্যায়ীসহ দলীয় নেতাকর্মীরাও তাদের প্রিয় নেতার স্থলাভিষিক্ত যোগ্য একজন কাণ্ডারি মনে করছেন মন্ত্রীর সহধর্মিণী দিলশাদ আরা বেগম মিনুকে।
তিনিও ইতিমর্ধ্যে নির্বাচন প্রার্থী হবার ঘোষণা দিয়েছেন নাসিরনগরে মাটিতে বিরাট এক জনসভা করে।  তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা কাজ করার জন্য প্রয়াত মন্ত্রীর  অনুসারী হাজার হাজার নেতা-কর্মী সে জনসভায় অংশ নিয়েছিল। এই জনসভার দিলশাদ আরা মিনু বলেন, তাঁর স্বামীর স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে তিনি উপজেলার অসাপ্ত কাজ গুলো সমাপ্ত করতে চান। সে ক্ষেএে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়া মাঠে রয়েছেন, সাবেক সংসদ সদস্য সাফি মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা এমএ করিম, কেন্দ্রীয় আওয়াম লীগ নেতা বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি সৈয়দ এহছানুল হক।
বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট রাখেশ চন্দ্র সরকারও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় জাতীয় কৃষক পার্টির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহানুল করিম (গরীবুল্লাহ সেলিম) মাঠ চষে বেড়ালেও জেলা জাতীয় পার্টি সেলিমের বড়ভাই কেন্দ্রীয় নেতা রেজোয়ান আহমেদকে ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। ইসলামী ফ্রন্ট ও জাতীয় সম্মিলিত জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইসলামউদ্দিন দুলাল।
দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তারা তাদের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে যে যার মত করে। তবে উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদের ২৪৩নং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ সংসদীয় আসনে ভোটার দুই লাখ সাত হাজার ৯৯৭ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ছয় হাজার ৮৮৭ জন ও মহিলা ভোটার এক লাখ এক হাজার ১১০ জন। প্রয়াত অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পঞ্চমবারের মত এ আসনে জয়ী হন।
২০০১-এর নির্বাচনে চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের ফল বিপর্যয়ের মধ্যেও জয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছিলেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর এই নেতাকে মৎস্য  ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা মন্ত্রী অ্যাডভোকেট ছায়েদুল হক শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
Print Friendly, PDF & Email