বুধবার, ২৩শে মে, ২০১৮ ইং ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৫ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ার দেনা ১ লাখ কোটি রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে: মাহাথির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালয়েশিয়ার সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জানিয়েছেন, দেশটির দেনার পরিমাণ ১ লাখ কোটি রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে, যা আড়াই ২৫০ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি। মাহাথির ওই পরিমাণ রাষ্ট্রীয় ঋণের জন্য পরাজিত নাজিব রাজাক সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়ী করেছেন। সোমবার মাহাথিরের দেওয়া তথ্যের কথা জানিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স লিখেছে, বিগত সরকারের প্রধান নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত চলমান। রাষ্ট্রীয় দেনার পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ করলেও মাহাথির ভর্তুকি দেওয়া ও জিএসটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

নিজের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সামনে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বলেছেন, ‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি রিঙ্গিত ছাড়িয়ে গেছে। আমাদের আগে কখনও এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়নি। এর আগে ঋণের সীমা কখনও ৩০ হাজার রিঙ্গিত ছাড়ায়নি।’

ঋণের কথা স্বীকার করলেও নির্বাচনি ওয়াদা অনুযায়ী মাহাথির বিশাল সংখ্যক পণ্যের ওপর থেকে ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ (জিএসটি) বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী জুন থেকে অনেকগুলো পণ্য ও সেবার জিএসটি শূন্য করে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মাহাথির জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দেওয়ার ওয়াদা করেছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্স লিখেছে, নিজের নির্বাচনি জোট ছাড়াও নাগরিকদের মধ্য থেকে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির যে অভিযোগ রয়েছে তার সমাধানে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে মাহাথিরকে।

২২ বছর মালয়েশিয়ার নেতৃত্ব দেওয়া মাহাথির মোহাম্মদ দেশের ঋণ নিয়ে বিগত সরকারকে দায়ী করলেও, তার বর্তমান অর্থনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে সতর্ক মত দিয়েছে ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি মুডি’স। তারা মনে করে উপযুক্ত নীতির সঙ্গে সমন্বয় না করলে বরং মাহাথিরের সিদ্ধান্ত রাজস্ব ঘাটতি বাড়াবে। বিগত নাজিব রাজাকের সরকার জিএসটি থেকে ২০১৮ সালে ৪ হাজার ৩৮০ কোটি রিঙ্গিত (১ হাজার ১০৫ কোটি ডলার) আয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা মোট রাজস্বের ১৮ শতাংশ। মাহাথির সেটা বাতিল করে দিয়েছেন। আবার জীবন যাপনের ব্যয়বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে তেলের ওপর যে ভর্তুকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি তাতেও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপ বাড়বে সরকারের ওপর।

গত সপ্তাহেই মাহাথির মন্তব্য করেছিলেন, দেশের অর্থনীতির বিষয়ে দেওয়া বহু তথ্যই খুব সম্ভব অসত্য। উল্লেখ্য, নাজিব ক্ষমতায় থাকা অবস্থাতেই সরকারের ঋণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তখন নাজিব জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৫০.৯ শতাংশ, যা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চসীমা ৫৫ শতাংশের চেয়ে কম। জিএসটি বাতিল করে দিলেও তার স্থানে ‘সেলস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স’ (এসএসটি) পুনর্বহাল করার কথা মাহাথির সরকারের।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মাহাথিরের দেওয়া ভাষণ উদ্ধৃত করেছে, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী, আমরা এই বিপর্যয় মোকাবেলা করতে পারব। কিন্তু সেজন্য দরকার দক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য সরকারি কর্মকর্তা। প্রশাসক হিসেবে আইনের শাসনকে সবার আগে স্থান দিতে হবে এবং যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অবশ্যই কর্তব্য পালন করতে হবে যাতে মালয়েশিয়া এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। দেশের সবাই এক সঙ্গে কাজ করলে মালয়েশিয়ার মুক্তি পাওয়া ও আবার সমীহের সঙ্গে গণ্য হওয়ার জন্য খুব বেশি দিন লাগবে না।’

Print Friendly, PDF & Email