ভাষার ক্ষেত্রে ভারতীয়রা ডাবল-স্ট্যান্ডার্ডের: নোরা ফাতেহি
ভাষার ক্ষেত্রে ভারতীয়রা ডাবল-স্ট্যান্ডার্ডের (দ্বৈতমুখী) অনুসারী। একথা বলেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় অভিনেত্রী নোরা ফাতেহি।
বাহুবলীর আলোচিত একটি নৃত্যদৃশ্যে নজরকাড়া পারফর্মেন্স ছাড়াও বিগ বস-৯ এ অংশ নেওয়া নোরা সম্প্রতি হিন্দি পত্রিকা নবভারতটাইম্স.কমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি আজকাল বেশ হিন্দি শিখে ফেলেছেন…কিন্তু ভারতের মতো হিন্দিভাষী দেশে থেকেও হিন্দি শেখাটা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।
কেন এমন মনে হচ্ছে নোরার কাছে? এর জবাবে তিনি বলেন- যখনি আমি ইন্ডাস্ট্রিতে কারো সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হিন্দি বলি তখন তারা জবাবটা দেয় ইংরেজিতে।
ঠিক এই প্রসঙ্গেই নোরা মনে করেন যে ভাষার মামলায় ভারতীয়রা ডাবল-স্টান্ডার্ডধারী, সেখানে মানুষজন ইংরেজি বলে নিজের সামাজিক মর্যাদার প্রদর্শন করতে চায়।
নোরা অভিনেতা সঞ্জয় সুরির সঙ্গে ‘মাই বার্থ ডে সং’-এ লিড রোলে অভিনয় করেছেন। তিনি বলেন, বলিউডে কাজ করছি চার বছর প্রায় হয়ে গেল। সে তুলনায় হিন্দি একটু বেশিই শিখে ফেলেছি। আমার জন্য হিন্দি শেখা সহজ কর্ম ছিল না। তবে আমি এটা বুঝি যে বলিউডে কাজ করতে হলে আমায় ভালোমতো হিন্দি জানতে হবে। আমি যে দেশে থাকছি আর যে দেশে কাজকর্ম করছি সেদেশের সভ্যতা আর ভাষাকে সম্মান দেখাতে হবে।
প্রথমদিকে গ্ল্যামার সর্বস্ব হিসেবে নিজেকে তুলে ধরলেও নোরা মনে করছেন, ‘মাই বার্থডে সং’-এ নজরকাড়া অভিনয় করেছেন
তিনি বলেন, এই দেশটিতে আপনি যখন হিন্দিতে কথা বলতে যাবেন তখন লোকজন ইংলিশে জবাব দেবে। এজন্য হিন্দি শিখতে গিয়ে আরো পেরেশানি বেড়ে যায়। যখন আমি কোনো সবজিওয়ালা, ট্যাক্সিওয়ালা কিংবা দোকানদারের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে যাই তখন তারা নিজেদের ইংরেজির ঠমক দেখাতে দিয়ে আমাকে ইংরেজিতে জবাব দেয়। ঘটনা এখানেই শেষ না, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও (বলিউড) লোকজন হিন্দিতে জিজ্ঞেস করা প্রশ্নের জবাব ইংরেজিতেই দেয়।
নোরার মতে, ভারতে আপনার ইংলিশ বোলচালই বলে দেবে আপনার সামাজিক মর্যাদা কোন পর্যন্ত। ইংরেজি বলনেওয়ালাদের সামাজিক মর্যাদা এমনি এমনি উচ্চস্তরে পৌঁছে যায়। তবে লোকজন আশা করে আমি হিন্দিতে কথা বলি। আর যদি আমি ইংরেজি বলি তো তাদের কাছে এটা বেঠিক মনে হয়।
নোরা আরো বলেন, এটা ভারতীয় সমাজের একটি ভুল রীতি। আমার মতে, এটা ভণ্ডামি আর দু-মুখো মনোভাব। আমি জানি বলিউড খুব বড় একটা হিন্দি ইন্ডাস্ট্রি, আর এখানে কাজ করতে হলে হিন্দি শিখতেই হবে না হলে হলিউডে গিয়ে কাজ করতে হবে আমাকে।
এখানে ভিনদেশী ভাষাপ্রীতি নিয়ে একজন অভিনেত্রী যা বললেন তা আসলে শুধু ভারতীয় মানদণ্ডেরই প্রকাশক তা কিন্তু নয়, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় অন্যান্য দেশগুলোতেও এমনি মনোভাবের প্রকাশ দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। একসময় অন্য কোনো দেশের উপনিবেশ ছিল- বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও লোকজনের মাঝে এমন মনোভাব দেখা যায়।
প্রস্ঙ্ত, অনাবাসী ভারতীয় বা জন্মসূত্রে ভারতীয় হয়েও বর্তমানে বিদেশি নাগরিক- বলিউডে আসা এমন অভিনয় শিল্পীদের সামনে বড় এক প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় হিন্দি বলতে পারাটা। হালের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা ক্যাটরিনা কাইফ ছাড়াও সানি লিওনদেরও হিন্দির ফাঁড়ায় পড়তে হয়েছে প্রথম দিকে।