g নাসিরনগরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার এক বছর : জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শনিবার, ১১ই নভেম্বর, ২০১৭ ইং ২৭শে কার্তিক, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

নাসিরনগরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার এক বছর : জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

AmaderBrahmanbaria.COM
অক্টোবর ৩০, ২০১৭
news-image

---

আকতার হোসেন ভুইয়া,নাসিরনগর : আজ সোমবার ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে সাম্প্রদায়িক হামলার ১ বছর পূর্ণ হল। এ উপলক্ষে স্থানীয় গৌর মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা ও ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান। গত এক বছর আগের ওই হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক কেটে গেছে। সকলের সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন।মন্দির গুলো সংস্কার করা হয়েছে। হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় নাসিরনগর থানায় আড়াই হাজারেরও বেশি অজ্ঞাত লোকজনকে আসামি করে ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে হামলা ও মামলার এক বছর পেরিয়ে গেলেও আদালতে এখানো অভিযোগপত্র জমা দেয়নি পুলিশ। অভিযোগপত্র না দেয়ায় মামলার বাদীরা ক্ষোভ জানিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে মামলার তদন্ত কাজ শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়া হবে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিনবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাসের ছেলে রসরাজ দাস(৩০)নামক এক হিন্দু যুবক তার ফেসবুক আইডি থেকে পবিত্র কাবাশরিফের উপর শিবমন্দিরের ছবি পোস্ট করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উক্ত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা ঐ যুবককে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপরও তীব্র প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। কয়েকটি ইসলামী সংগঠন পরের দিন ৩০ অক্টোবর প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দেয়। পৃথক দুটি প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হাজার হাজার লোক অংশ নেয়। প্রতিবাদ কর্মসূচি চলাকালীন একদল লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর-মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করে।এরপর ৪ নভেম্বর আবারো হিন্দু পরিবারের একটি মন্দিরসহ ৫টি বাড়ির রান্নাঘর, গোয়াল ঘর, ১৩ নভেম্বর সকালে হিন্দু পরিবারের একটি পরিত্যক্ত ঘরে ও ১৬ তারিখ রাতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব এর একটি গোয়াল ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সারা দেশে তখন এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা ঝড় উঠে। ঘটনার পর নাসিরনগর থানার ওসি আবদুল কাদেরকে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া বিতর্কিত ভূমিকার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগের তিন নেতাকে বহিস্কার করা হয়। হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন সরকারের একাধিক মন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ,বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় পৃথক মোট ৮টি মামলা হয়। বিভিন্ন সময়ে মামলায় ভিডিও ফুটেজ দেখে ১২৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । এদিকে রসরাজের মোবাইল থেকে পোস্টটি করা হয়নি এমন পুলিশের প্রতিবদনে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে রসরাজ দাস। এছাড়াও মামলার অন্যতম আসামী হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আখিঁ ছাড়া আটক প্রায় সকলেই জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরে এসেছেন।
তবে নাসিরনগর থানায় হওয়া ৮টি মামলা ও হামলার এক বছরেও পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি । ক্ষতিগ্রস্থরা ঘুরে দাঁড়ালেও তাদের দাবি দ্রুত মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতির পাশাপাশি হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। এদিকে হামলার এক বছর পর নাসিরনগরের চিত্র এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘদিনের সেই সম্প্রীতির বন্ধন এখনো অটুট রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ভাংচুরের শিকার মন্দিরগুলোতে এখন পূর্বের মতোই চলছে পূজা-অর্চনা। এবছরও মহা ধুমধামে এ উপজেলায় ১৩২টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নাসিরনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব ও নাসিরনগরের দত্তবাড়ি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া মামলার বাদী কাজল জ্যোতি দত্ত বলেন সাম্প্রদায়িক সংঘাত কিংবা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও কখনো শুভ হতে পারে না। নাসিরনগর হিন্দু-মুসলমানরা দীর্ঘদিন যাবত একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে । আমরা চাই নাসিরনগরে হিন্দু
ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হোক। প্রশাসনের কাছে আমাদের এটাই দাবি।
নাসিরনরগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোঃ আবু জাফর বলেন,নাসিরনগর থানায় দায়ের হওয়া ৮টি মামলায় তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পযার্য়ে। খুব শীঘ্রেই মামলার অভিযোগপত্রগুলি পর্যায়ক্রমে আদালতে দাখিল করা হবে।

এদিকে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও পুলিশী রিপোর্ট দাখিল করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে নাসিরনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব,আদেশ চন্দ্র দেব ও সুজিত কুমার চক্রবর্তীর নের্তৃত্বে হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে
আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী ও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)মোঃ আবু জাফরের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ।

 

 

 

 

এ জাতীয় আরও খবর