৯৮ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে নেই ব্লাড ব্যাংক !
---
দেশের চার হাজার ৯০২টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক আছে মাত্র ৮৪টি প্রতিষ্ঠানে। এ ছাড়া সারা দেশে অনুমোদিত আরো ২৪টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা শুধুই ব্লাড ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। তবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই অবৈধভাবে চালাচ্ছে এ কার্যক্রম।
সারা দেশে এমন অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কোনো তালিকা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানেই আবার রয়েছে অনুমোদনহীন ব্লাড ব্যাংক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২২টি জেলার নিবন্ধিত দুই হাজার ৭৭৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে ৮৪টিতে অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক আছে। আর বাকি ৪২টি জেলার দুই হাজার ১২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের একটিতেও অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক নেই। তবে ২৪টি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান আছে, যারা সারা দেশে শুধুই ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্লাড ব্যাংক শাখার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শেখ দাউদ আদনান এনটিভি অনলাইনকে জানান, অবৈধ ওই সব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ব্লাড ব্যাংকের ব্যবসা লাভজনক না হওয়ায় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো এই ঝামেলা মাথায় নিতে চায় না। তাই রোগীর স্বজন অথবা বিভিন্ন ব্লাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত সংগ্রহ করে কার্যক্রম চালাচ্ছে এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ব্লাড ব্যাংক না থাকায় অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর স্বজনদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। প্রয়োজনের সময় রক্ত পেতে বেশ ঝামেলা হয়।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা জোৎস্না আক্তার নামের এক নারী গত বুধবার অভিযোগ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বিশেষ করে যারা গ্রাম থেকে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসেন তাদের জন্য বিষয়টা খুবই বিব্রতকর। ব্লাড ব্যাংকগুলোও কোথায় আছে, এসব ভালো করে না জানা বা সময়ের সমস্যাও থাকতে পারে।
জোৎস্না আক্তার বলেন, ‘ধরুন, আমার মেয়ের আজ অস্ত্রোপচার করবে। এখন এ জন্য দুই ব্যাগ রক্ত দরকার। আমার রক্তের সঙ্গে মিল নেই, আবার এমন স্বজন বা আমার আত্মীয়স্বজনও নেই ঢাকায়। তার মানে আমাকে রক্ত কিনতেই হবে। এখন যদি হাসপাতালে রক্তের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে আমাকে বাইরে গিয়ে রক্ত কিনতে হবে। আর কোথা থেকে রক্ত কিনব বা বাইরের রক্তের মান নিয়ে তো প্রশ্ন থাকেই। যা সব শুনি মাঝে মাঝে। মাদকসেবীর বা ভেজাল রক্তও বিক্রি করে ব্লাড ব্যাংকগুলো।’
রাজধানীর কলেজ গেট এলাকায় ক্রিসেন্ট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স সেন্টারে মামুন হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার যেটা মনে হয়, হাসপাতালগুলো রক্তের ব্যবসা করে খুব একটা লাভ করতে পারে না। আবার অনেক সময় রোগীর লোকেরা রক্ত দিয়ে থাকেন। রোগীর লোকেরা রক্ত দিলেও সেগুলো হাসপাতালকেই সকল প্রসেসিং করতে হয়। এসব ঝামেলা এড়াতেই বোধ হয় এরা ব্লাড ব্যাংক রাখতে চায় না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর বেশির ভাগ হাসপাতাল, ক্লিনিকে ব্লাড ব্যাংক নেই।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা শিশু হাসপাতালেও ব্লাড ব্যাংক নেই। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক মানজুর হুসাইন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হাসপাতালে যে ব্লাড ব্যাংক নেই, সেটা আমি জানি না। কাল খোঁজ নিয়ে দেখব। তবে আমরা রোগী এবং ডোনারদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্লাড ব্যাংক শাখার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, ‘দেশের যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক নেই, তারা অবৈধভাবে ব্যবসা চালাচ্ছে। আমরা চাচ্ছি বড় বড় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো ব্লাড ব্যাংকের আওতায় আসুক।’
ডা. আদনান আরো বলেন, ‘ভালো হাসপাতালগুলো ব্লাড ব্যাংক করলেই অবৈধ ব্লাড ব্যাংকগুলো দ্রুতই বন্ধ করা সম্ভব হবে। কারণ ভালো হাসপাতালগুলোতে ব্লাড ব্যাংক সেবা থাকলে মানুষ খারাপ জায়গায় যাবে না। ভালো ভালো ব্লাড ব্যাংকই রক্তের মান সম্পর্কে খুব সচেতন না। আর খারাপ বা অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মান রক্ষা করতে তা ভাবা একেবারেই বোকামি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘যেসব হাসপাতালে অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করা হয়, তাদের ব্লাড ব্যাংক অবশ্যই থাকতে হবে। আগামী মাসের ভেতরে আমরা ব্লাড ব্যাংক নেই এমন প্রতিষ্ঠানের তালিকা করব। পরে তাদের ব্লাড ব্যাংক সেবা নিশ্চিত করতে তাগাদা দেব।’