শিশুদের মানসিক বিকাশে বড় বাধা ফাস্টফুড
---
লাইফস্টাইল ডেস্ক : ছুটির ঘণ্টা বাজতেই ব্যাগ কাঁধে দৌড়ে বাইরে এলো সাকিব। স্কুল গেটে অপেক্ষমান মায়ের কাছে আবদার, ‘ আম্মু বার্গার কিনে দাও’। সাকিবের মা ইয়াসমিন হাসানের সাথে কথা বলে জানা গেল, প্রতিদিনই স্কুল ছুটির পর হয় বার্গার, নয়তো স্যান্ডউইচের বায়না ধরে সে। বাসা থেকে যে টিফিন তাকে দেওয়া হয় তার অর্ধেকটাও খায় না। ‘দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছে ছেলেটা’, বলার সময় ইয়াসমিন হাসানের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেল।
দশক দুয়েক আগেও শিশুদের প্রিয় খাবার ছিল পিঠা। বাড়িতে তৈরি মায়ের হাতের পিঠায় অমৃত খুঁজত তখনকার শিশুরা। স্কুল থেকে ফিরে খেলার মাঠ দাপিয়ে বেড়াত তারা। এখন দিন বদলেছে। বিকেলে মাঠে খেলার বদলে শিশুরা এখন কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে গেম খেলতে অভ্যস্ত। অন্য দিকে প্রিয় খাবার পিঠার স্থান দখল করেছে বার্গার, স্যান্ডউইচ, পিৎজার মতো নানান পদের ফাস্টফুড আইটেম। আর এসব খাবার গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। মুটিয়ে যাওয়া, বুদ্ধি লোপ, মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বয়স বৃদ্ধির সাথে আরও জটিল সব সমস্যার জন্য ফাস্টফুডকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম ও মুখোরোচক খাবারের বদলে শিশুদের বাসায় তৈরি খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে তাদের খাদ্যাভ্যাসে। তাহলেই শিশুদের মানসিক বিকাশ হবে। এতে করে একদিকে যেমন পুষ্টিকর খাদ্যে তারা অভ্যস্ত হবে, অন্যদিকে মেধা ও বুদ্ধিমত্তায় দিক থেকেও এগিয়ে যাবে কয়েকগুণ।
ফাস্টফুডগুলো সাধারণত ‘প্রসেস ফুড’ হয়ে থাকে। কিছুটা তৈরি করা থাকে। তাই এসব খাদ্যে ফ্যাট, প্রোটিন অধিক পারিমাণে থাকে। সেইসঙ্গে ক্যালরির পরিমাণ থাকে মাত্রাতিরিক্ত। এছাড়া এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণের ফলে এর প্রতি শিশুদের আসক্তির জন্ম নেয়। যার ফলে দ্রুত মুটিয়ে যাচ্ছে শিশুরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘সাধারণ খাদ্য গ্রহণে কারও আসক্তির সৃষ্টি হয় না। কিন্তু ফাস্ট ফুড তৈরিতে এমন কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়, যার মাধ্যমে এর প্রতি শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ে।’
অতিরিক্ত ফাস্টফুড গ্রহণের ফলে অস্থিরতা বৃদ্ধি, শিশুদের চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাসসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এ ছাড়া বয়স বাড়ার সাথে মস্তিস্কের সমস্যা, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায় বলেও জানান তিনি।
ডা. কানিজ ফাতেমা জানান, ফাস্টফুড গ্রহণের ফলে শিশুদের সামাজিক যোগাযোগের প্রতি অনীহার জন্ম হয়। এতে করে তারা অন্যদের সাথে মিশতে চায় না। অংশ নিতে চায় না কোনো আউটডোর গেমসে। ফলে কম্পিউটার কিংবা ইনডোর গেমসের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এতে করে তাদের ওজন অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পায়।
ফাস্টফুডকে অধিক মুখোরোচক করতে ব্যবহার করা হয় টেস্টিং সল্ট ও সস। এতে ক্ষতিকারক উপাদান থাকে। যা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পড়াশোনায় অমনোযোগিতা এবং স্মৃতি শক্তি লোপের জন্যও ফাস্টফুডকে দায়ী করেন তিনি।
ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালের মা ও শিশু খাদ্য বিশেষজ্ঞ মাহমুদা নাজনীন জানান, ‘ফাস্টফুড একটি শিশুর মানসিক বিকাশ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাধাগ্রস্ত করে। যদি শিশুদের ফাস্ট ফুড থেকে বিরত করা যায়, তাহলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।’
সন্তানদের বাইরের খাবারের পরিবর্তে বাড়ির তৈরি খাবার দিতে সবার প্রতি আহবান জানান মাহমুদা নাজনীন।