এভ্রিল আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে : মনজুর (সাক্ষাৎকার)
---
জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। কয়েকদিনের জন্য হয়েছিলেন প্রথম ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’। চীনে অনুষ্ঠিতব্য মিস ওয়ার্ল্ডের মূল আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার কথা ছিল তার। কিন্তু বিতর্কে পড়ে সব ওলোটপালট হয়ে গেছে কয়েকদিনের মধ্যেই।
বিতর্কের একাধিক বিষয়ের প্রধানতম হলো এভ্রিলের বিয়ে। চার বছর আগে তিনি বিয়ে করেন, ছাড়াছাড়িও হয়, তবে তিনি সেই তথ্য গোপন করেন।
এ ছাড়াও অভিযোগ ওঠে, একাধিক বিচারকদের রায় পাল্টে ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিযোগিতার একজন বিচারক এমন অভিযোগ করেন।
বিয়ের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালেই সুন্দরী আমেনাকে (এভ্রিল) দেখে পছন্দ হয় সেখানকার এক যুবকের। পরীক্ষার পর বেশ ঘটা করেই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আমেনার। এসএসসি পরীক্ষায় আমেনা ৪.৪৪ পয়েন্ট পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
৮ লাখ টাকার কাবিননামায় উসুল ধরা হয় ৩ লাখ। বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষ খরচ করে ১৫ লাখ টাকা। চন্দনাইশ বড়মা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী জান্নাতুল নাঈম আমেনার স্বামী জামিয়াতুল আহম্মদিয়া সুন্নি আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র মনজুর উদ্দিন রানা। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তখন আমেনা দুই মাসের সন্তান-সম্ভবা ছিলেন বলে দাবি মনজুরের।
এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জান্নাতুল নাঈমের সাবেক স্বামী মনজুর উদ্দিন রানা।
আমিই ডিভোর্স দিয়েছি
প্রশ্ন : জান্নাতুল নাঈমের সঙ্গে জড়িয়ে আপনার নাম এখন বেশ আলোচিত …
রানা : জান্নাতুল নাঈম আমেনাকে চার বছর আগে আমি বিয়ে করেছিলাম। ও কি নিয়ে এখন জনপ্রিয় আমি জানি না! জানতে চাইও না। ওর বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ওকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। ওর এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিন। আমার সঙ্গে ওর এখন কোন সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন : নাঈমের সঙ্গে আপনার কীভাবে বিয়ে হয়?
রানা : তখন আমি তাকে সামাজিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। জোর করে বিয়ে করিনি। তাদের কিছুই নাই। খুবই দরিদ্র। আমি একটা কাজে পৌরসভায় যাচ্ছিলাম। চন্দনাইশের বরমা ত্রাহিমেনকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কেন্দ্র (ফাতেমা জিন্না বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে বের হতেই তাকে প্রথম দেখি। প্রথম দেখেই তাকে ভালো লেগে যায়। তখন ওর সঙ্গে কথা বলিনি। খোঁজ নিয়ে সামাজিকভাবেই তার পরিবারকে প্রস্তাব দিই। এর এক মাস পনের দিনের মধ্যে বিয়ে করি।
তার বাবা এলাকায় চাষবাষ করে। একটা সেচ পাম্প আছে। আমি যখন তাকে দেখতে গিয়েছি আমার বোনদের নিয়ে। আমার বোনরা নাকচ করে দেয়। তারা বলেছিল তুমি কি মেয়ে আনতে চাইছো। মেয়ে কি সুন্দর হলেই হলো। কিছুই তো নাই তার চেহারা ছাড়া। আমাদের এক রুম থেকে অন্য রুমে নিতে পারেনি। ছোট্ট একটা ঘর। তবে আমাদের অবস্থা দেখে ওর বাবা বিয়েতে রাজি হয়ে যায়। আমি তখন বলেছিলাম তাদের ঘর বেধে দিব। বিল্ডিং করে দেব। আমি চিন্তা করেছিলাম ফ্যামিলি নরমাল হলেও ভাইরা শিক্ষিত আছে। তাদের দশ বিশ লাখ টাকা দিয়ে লাইন করে দেব। সেও এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। তারা দুই ভাই দুই বোন। তার নাম জান্নাতুল নাঈম, তার মা বাবা আমেনা বলেই ডাকে। বিয়ের খরচ পুরোটা আমি দিয়েছি। ওকে দেখে পছন্দ হয়েছে বলে বিয়ে করেছি।
প্রশ্ন : বিয়ে কোথায় হয়েছিল?
রানা : ওর বাবা বলেছিল ছয়মাস পরে বিয়ে করার জন্য। এর আগেই করেছি। বরকল ব্রিজের পাশে সুনাইরা কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ে করতে চেয়েছিলাম আরো দুই মাস পরে। কিন্তু বিয়ের তারিখ ও নিজেই দিয়েছে।
কখনো ঝগড়া হয়নি
প্রশ্ন : আমেনা আপনাকে ছেড়ে কাউকে কিছু না বলে কেন, কীভাবে পালিয়ে গেল?
রানা : আমি জামেয়া আহলাদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি। দাখিল পরীক্ষা দিতে পারিনি। আমি যখন বিয়ে করি তখন সে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছিল। রেজাল্ট দেয়নি। বিয়ের পর রেজাল্ট দেয়। সে ৪.৪৪ পায়। আমি বলেছিলাম মহিলা কলেজে ভর্তি করে দেব। তার সঙ্গে আমার কখনো ঝগড়া হয়নি। বিয়ের দুই মাস পর। তার বাবাকে বলেছিলাম আমরা একশ মানুষ আসবো। ঘরবাড়ি সাজিয়ে ভালো করে রাখবেন। ওদের ভালোভাবে আপ্যায়ন করতে হবে। আমরা যাওয়ার তিনদিন আগে তার বাবা আমাকে ফোন দিয়ে জানালো আমেনাকে পাচ্ছি না। সে কী কারণে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে তা জানি না। তার কি কোনো মাথায় সমস্যা আছে? তাও বুঝতে পারছি না। এত ভালভাবে বাড়িতে থেকেও কেন চলে গেল। সে তো সাধারণ পরিবারের সন্তান। ওর চেহারা ছাড়া আর কিছুই নাই।
অবশ্য বিয়ের আগে আমাকে একটা লোক ফোন দিয়েছিল। সে বলেছিল তার সঙ্গে নাঈমের সম্পর্ক আছে। তখন আমি তাকে বলেছিলাম আপনি ফোন দিয়েছেন ভাল হয়েছে। আমি এখনও তাকে বিয়ে করিনি। কেবল আঙটি পরিয়েছি। যদি আপনার সঙ্গে সম্পর্ক থাকে আমি ওকে বিয়ে করবো না। তখন জান্নাতের ভাইয়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে জান্নাতের সঙ্গে কথা বলি, তাকে জিজ্ঞেস করি ওই ছেলের কথা, সে বলে, না সম্পর্ক নাই। আমাকে তো অনেকেই পছন্দ করে সেরকম। তখন আমি বলেছিলাম ওর সঙ্গে যদি তোমার সম্পর্ক থাকে তাহলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। ওকেই তুমি বিয়ে করো। আমি সহযোগিতা করবো
আমার জীবন নষ্ট করেছে
প্রশ্ন : চলে যাওয়ার পর আপনার সাথে আর যোগাযোগ হয়েছিল?
রানা : একবার সে আমার ফেসবুকে ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল, তাকে দেখে খারাপ লেগেছিল তাই তাকে ব্লক করে দিয়েছি। আমাদের টাকা পয়সার দরকার নাই। সাংসারিক সুখের জন্য তাকে এনেছিলাম। ও নরমাল ফ্যামিলির মেয়ে। ওর মা বাবা অনেক ভাল মানুষ। ও চলে যাওয়ার পর আমি আর বিয়ে করিনি। আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। আমার জন্য অনেক মানুষ কেঁদেছে।
এখনও ভালোবাসি
প্রশ্ন : জান্নাতুল নাঈম আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কী করলেন?
রানা : ও যাওয়ার পর আমি আফসোস করেছি, যাচাই-বাছাই না করে এ কী করলাম! তবে এখন আমি ভালো আছি। আমি আল্লাহর কাছে বলি ও যেখানে গেছে সুখে থাকুক শান্তিতে থাকুক। যেন কোনো খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত না থাকুক। তার বাবা মায়ের সঙ্গে থেকে যেন ভালো থাকে। সে তো আমার দুই মাসের জন্য হলেও স্ত্রী ছিল। এলাকায় এখনও মানুষ বলে ওটা মনজুরের বউ। ওর এলাকার মানুষও আমাকে অনেক সম্মান করে। সে আমার জীবন থেকে চলে গেছে তাকে নিয়ে এখন আর আমি ভাবি না। তবে তাকে আমি এখনও ভালোবাসি। তাই সে যেখানে গিয়ে সুখ পায়, শান্তি পায় সেখানে থাক। তবে তাকে নিয়ে আমি আর কখনো সংসার করবো না।
আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে
প্রশ্ন : জান্নাতুল নাঈম চলে গেলেও আপনাকে ডিভোর্স দেয়নি, আপনি ডিভোর্স দিলেন কেন?
রানা : ও পালিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে আমি ডিভোর্স দিয়েছি। চিটাগাং লালদীঘির পাড়ে ফৌজিয়া হোটেলের ওখানেই আমাদের ডিভোর্স হয়। ও একদিন ফোন দিয়ে বলে আমাকে ডিভোর্স দাও, নইলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দেব। ডিভোসের জন্য আমি এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেছি। পরে জান্নাতুলের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে দুই পক্ষের সমঝোতায় ২০১৩ সালের ১১ জুন কাজির উপস্থিতিতে জান্নাতুল এবং আমি সই করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটাই। আসলে জান্নাতুল আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার মতো অন্য ছেলে যেন তার প্রতারণার শিকার না হয়।