৮০ হাজার নতুন কর্মীর চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া
---
জি-টু-জি প্লাস (সরকার থেকে সরকার) প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান ও কারখানায় লোক নিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করে ৮০ হাজার চাহিদাপত্র বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।
২০০৯ সালে শ্রম রফতানিতে ধস নামার পর ২০১৬ সালের ১০ মার্চ বাংলাদেশ থেকে ৯৮ যাত্রী নিয়ে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে প্রথম ফ্লাইট মালয়েশিয়ায় আসে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ কর্মীর মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে।
জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হলেও বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন গতি পরিলক্ষিত হয়নি। এমনটি মনে করছেন রিক্রুটিং এজেন্সি ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার একাধিক নেতা জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার শুরু হওয়ার পর ২০ মাসে মাত্র ৩২ হাজার ৫০০ শ্রমিক যেতে পেরেছেন।
সোমবার মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া সরকার এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। জি-টু-জি পদ্ধতিতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার পর হাইকমিশনে এক লাখ কর্মীর নামে ডিমান্ড চলে এসেছে (চাহিদাপত্র)।
‘এসব চাহিদাপত্রের বিপরীতে আমরা প্রতিটি কোম্পানিতে সরেজমিনে গিয়ে সুযোগ-সুবিধা দেখে ৮০ হাজারের মতো ডিমান্ড সত্যায়িত করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এর মধ্যে প্রসেসিং শেষে ঢাকা থেকে ৩২ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় এসেছে। তাদের কেউ হাইকমিশনে অভিযোগ করতে আসেনি। দিন যত যাবে এখানকার মানুষের মানসিকতাও তত পরিবর্তন হবে। শ্রমিক আসার গতিও বেড়ে যাবে’- যোগ করেন তিনি।

শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে আসার আগে সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। যখন আমি ওই দেশে ছিলাম তখন পর্যন্ত শ্রমবাজার চালু হয়নি। তবে শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে যত ধরনের প্রক্রিয়ার দরকার ছিল সেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দিয়ে এসেছি। এখন সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি লোক যাচ্ছে। তাও আবার কম টাকায়। ঠিক একইভাবে সৌদি আরব থেকে যখন আমাকে মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনার করে পাঠান হলো, তখন আমি এ দেশে এসে দেখলাম বৃহৎ শ্রমবাজারটি বন্ধ। চারদিকে শুধু সমস্যা আর সমস্যা।
তিনি বলেন, এরপরই আমি এ দেশের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতিক, কূটনীতিক ও সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাংলাদেশকে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে জোর দেই। তারা আমার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে তারা জি-টু-জি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে। এরপর নানা প্রক্রিয়া শেষে ২০১৬ সালের ১০ মার্চ বাংলাদেশ থেকে ৯৮ যাত্রী নিয়ে সোর্স কান্ট্রি হিসেবে প্রথম ফ্লাইট মালয়েশিয়ায় আসে।
হাইকমিশনার বলেন, দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি থেকে যেসব চাহিদাপত্র হাইকমিশনে জমা পড়েছে সেগুলোর বিষয়ে আমরা প্রথমেই যে বিষয়ে জোর দিয়েছি সেটি হচ্ছে থাকার জায়গা আছে কি না, মেডিকেলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিক আছে কি না, সেগুলো নিশ্চিত হওয়ার পরই হাইকমিশন থেকে প্রতিটি চাহিদার বিপরীতে সত্যায়িত করে ঢাকায় পাঠান হয়। এই সংখ্যা এখন ৮০ হাজার হবে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানির কাজ এখন খুব ভালোভাবে হচ্ছে। তবে শ্রমিক পাঠানোর কাজটি যদি সব রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক করতে পারতেন, তাহলে কর্মী যাওয়ার গতি আরও বাড়ত।

এদিকে চাহিদাপত্র বাংলাদেশে পাঠানোর আগে দূতাবাসের শ্রম শাখার কর্মকর্তারা সরেজমিন ফ্যাক্টরি ভিজিট করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা, কর্মীদের সাক্ষাৎকার, কর্মস্থল ও হোস্টেল পরিদর্শন এবং নতুন কর্মী নিয়োগ করার সুযোগ, থাকার সুব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবা, ওভার টাইম, বেতন ব্যাংকের মাধ্যমে দেয় কি না, ইত্যাদি যাচাই করা হচ্ছে বলে দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে।
এছাড়া বিদ্যমান কর্মীদের পে স্লিপ চেক করা, কোম্পানির আয়-ব্যয়, শেয়ার, লাইসেন্স, প্রোডাকশন, এক্সপোর্ট ইত্যাদিও দেখা হচ্ছে। এমনকী প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়ার অনুমতি আছে কি না- সেটিও দেখা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ১২৫০টি কারখানা ভিজিট করা হয়েছে। যা পূর্বে কখনই করা হয়নি বলে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মো. সায়েদুল ইসলাম জানান। তিনি আরও জানান, পূর্বে এভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোক এনে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল এবং এক ধরনের ‘হিউম্যান ট্রাফিকিং’ করা হয়েছিল। এখন কঠোরভাবে সবকিছু দেখা হচ্ছে, কারণ মালয়েশিয়ায় কর্মী ব্যবস্থাপনায় উন্নত বিশ্বের মান অর্জন করতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে।

জনশক্তি রফতানিকারকরা জানান, ২০০৮ সাল পর্যন্ত জনশক্তি রফতানির বড় বাজার ছিল মালয়েশিয়া। বেতন-ভাতা ভালো, মুসলিম দেশ ও পরিবেশ ভালো থাকায় বাংলাদেশের কর্মীদের মালয়েশিয়া যাওয়ার আগ্রহ ছিল শীর্ষে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন জটিলতায় এ বাজারে ধস নামে। ২০০৮ সালে দেশটিতে কর্মী গিয়েছিল এক লাখ ৩১ হাজার, সেখানে ২০১০ সালে ৯০০ জনে নেমে আসে। ২০১২ সালে আরও কমে ৮০০ জনে নেমে আসে।
আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার দুয়ার নতুন করে উন্মোচিত হয়। কিন্তু কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সিগুলোর প্রতারণার কারণে সুফল মেলেনি। এরপর সরকার আবারও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে সেটি চালুর উদ্যোগ নেয়।
২০১৫ সালে এক বছরে যেখানে কর্মী গিয়েছিল ৩০ হাজার ৫০০। ২০১৬ সালে সেটি বেড়ে ৪০ হাজারে উন্নীত হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মালয়েশিয়ায় কর্মী গেছে প্রায় ৩৭ হাজার যা মোট কর্মী রফতানির ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
 
         বাংলাদেশে ২ নদী ড্রেজিংয়ে ভারত, নেপথ্য কারণ কী !
বাংলাদেশে ২ নদী ড্রেজিংয়ে ভারত, নেপথ্য কারণ কী !
                 বৃষ্টি-বন্যায় বেহাল সড়কের হাল ফেরাতে চাই ‘২০০ কোটি টাকা’
বৃষ্টি-বন্যায় বেহাল সড়কের হাল ফেরাতে চাই ‘২০০ কোটি টাকা’
                
 মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবো : প্রধানমন্ত্রী
মিয়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবো : প্রধানমন্ত্রী
                 রোহিঙ্গাদের সাহায্যে শনিবার থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী
রোহিঙ্গাদের সাহায্যে শনিবার থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী
                





