যেসব কারণে লন্ডনে বাতিল হলো উবারের লাইসেন্স
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবারের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। কর্পোরেট দায়িত্বে ঘাটতি থাকায় লন্ডনের ট্রান্সপোর্টেশন রেগুলেটর উবারের লাইসেন্স বাতিল করল। রেগুলেটর এক বিবৃতিতে লাইসেন্স বাতিলের প্রধান চারটি কারণ উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো: ট্যাক্সিতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে উবারের গাফিলতি, উবারের আওতায় থাকা গাড়ি চালকদের ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট, গাড়ি চালকের যথাযথ তথ্যে ঘাটতি এবং উবার অ্যাপে রেগুলেটরি অ্যাকসেস ব্লক করার জন্য বিতর্কিত গ্রেবল সফটওয়্যার ব্যবহার।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে কর্পোরেট কেলেঙ্কারিতে পড়ে উবার। ওই ঘটনার জের ধরে এ বছরের জুন মাসে পদত্যাগ করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ট্রাভিস কালানিক।
সারা বিশ্বজুড়ে উবারের সার্ভিসে এই সমস্যাটি লক্ষণীয়। গাড়িতে যাত্রীদের উপর প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানি করে যাচ্ছে উবারের অধীনে থাকা চালকরা। সংবাদমাধ্যম দ্য সানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনে ২০১৫ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত মেট্রোপলিটন পুলিশ গাড়িতে ৩২জন যাত্রীকে ড্রাইভার কর্তৃক যৌন হয়রানি/ধর্ষণ হওয়ার অভিযোগ পেয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশ ইন্সপেক্টর নিল বিলানী টিএফএলকে (ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন) এক চিঠিতে এ উদ্বেগের কথা জানায়। তিনি চিঠিতে লেখেন, উবার তার ড্রাইভারদের উপর আনা অভিযোগগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জানান, যৌন হয়রানির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সেই একই গাড়িচালককে আবারও নিয়োগ দিয়েছিল উবার। ইন্সপেক্টর বিলানীর তথ্যানুসারে, ওই একই গাড়িচালক আবারও অন্য এক নারী যাত্রীকে যৌন হয়রানি করেন এবং তাকে চাকরিচ্যূত করা হয়। চিঠিতে বলা হয়, পুলিশকে না জানিয়ে অপরাধীদের নিয়োগ দিয়ে জনসাধারণের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে উবার।
গ্রেবল
উবার লন্ডনে বিতর্কিত গ্রেবল সফটওয়্যার ব্যবহার করে। পরবর্তীতে উবারকে এই সফটওয়্যার ব্যবহারের যথাযথ কারণ দর্শাতে বললেও সঠিক কারণ দেখাতে পারেনি উবার। লন্ডনের ট্রান্সপোর্ট পরিষদ এ ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ বছরের মার্চ মাসে উবারের গ্রেবল ব্যবহারের কারণ জনসমক্ষে আসে। জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রদেশের পরিবহন আইনকে অবজ্ঞা করে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের চোখে ধূলো দিতে গোপনে গ্রেবল সফটওয়্যার ব্যবহার করছে উবার। স্থানীয় সরকারের সাথে যুক্ত যাত্রীদের তথ্যাদি গ্রেবল ব্যবহার করে থাকে। পরবর্তীতে এসব যাত্রী উবার অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ির জন্য অনুরোধ করলেও গাড়িচালকরা তাতে সাড়া দেবে না। এই সফটওয়্যার পোর্টল্যান্ড, ওরেগন, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, লাস ভেগাসসহ ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইতালিতে ব্যবহার করেছে উবার। তবে গ্রেবল সফটওয়্যারটি যুক্তরাজ্যে ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে উবার।
ডিবিএস খতিয়ে দেখা এবং মেডিকেল রেকর্ড
উবারের কয়েক হাজার গাড়িচালকের তথ্যাদি ঠিক নয় বলে এ মাসেই প্রতিষ্ঠানটিকে জানিয়েছিল উবার। গাড়ি চালকদের ২৮দিনের মধ্যে সঠিক তথ্য দিয়ে পুনরায় আবেদন করতে বলা হয়। অন্যথায় তাদের লাইসেন্স ঝুঁকিতে থাকবে বলেও জানানো হয়। সংবাদমাধ্যম দ্য সান আরেক প্রতিবেদনে জানায়, উবারের গাড়িচালকদের মধ্যে অনেকের মেডিকেল সার্টিফিকেট ভুয়া।
কর্মস্থলের পরিবেশ
উবারের অফিসের উচ্চ স্তরেও যৌন হয়রানি এবং নারীদের অসম্মান করার তো সিরিজ ঘটনা ঘটেছে। সুসান ফ্লাওয়ার নামে উবারের এক সাবেক প্রকৌশলী ফেব্রুয়ারি মাসে এর সিলিকন ভ্যালে অফিসের বিষাক্ত পরিবেশ নিয়ে ৩ হাজার শব্দের ব্লগ পোস্ট লিখেছিল। উবারের বিভিন্ন অফিসজুড়ে যৌন হয়রানি এবং কর্মক্ষেত্রের বিষাক্ত পরিবেশ নিয়ে ২১৫টি ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ হয়েছে। ফলশ্রুতিতে উবার ২০জন কর্মীকে চাকরিচ্যূতও করে। এসব অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরই পদত্যাগ করেন উবারের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ট্রাভিস কালানিক।
সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট