g সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন? | AmaderBrahmanbaria.Com – আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া

শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ইং ৭ই আশ্বিন, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ

সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন?

AmaderBrahmanbaria.COM
সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
news-image

---

লাইফস্টাইল ডেস্ক : মানুষের বয়স বাড়লে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। বয়স চল্লিশের কোঠা পেরোলে অনেকেরই স্মরণশক্তি কমে যেতে শুরু করে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সব কিছু ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। এই ধরনের বুদ্ধিবৈকল্য বা স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার কারণ যেসব রোগ, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে আলঝেইমার রোগ। এ বিষয়ে জানিয়েছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ আর এম সাইফুদ্দিন একরাম।

আদ্যোপান্ত
১৯০৬ সালে জার্মানীর একজন মনোচিকিৎসক অ. অষুযবরসবৎ সর্বপ্রথম এ রোগটির বর্ণনা দেন। তার নাম অনুসারেই এ রোগের নাম রাখা হয়। এ রোগের সঠিক কারণ কী তা কিন্তু এখন ও জানা যায়নি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো দাবি করছে, যেসব উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটারের আদান-প্রদানের মাধ্যমে মস্তিষ্ক তাদের কার্য সম্পাদন করে তাদের সমস্যার কারণেই এই রোগটি হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শতকরা ১৫ ভাগ রোগীই এ রোগে আক্রান্ত হন। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে আর শতকরা ১ থেকে ৫ শতাংশ রোগের কারণ হলো জেনেটিক। এ রোগ হলে মস্তিষ্কের আয়তন সংকুচিত হয়ে আসতে থাকে, বিশেষ করে সেরিব্রাল কর্টেক্স এবং হিপোক্যাম্পাস উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে থাকে।

কমে আসে স্মৃতিশক্তি
আগেই বলেছিম আলঝেইমার রোগ হলে রোগীর স্মৃতিশক্তি কমে যেতে শুরু করে। রোগী সাম্প্রতিক এবং অতীত দুই ধরনের স্মৃতিই হারিয়ে ফেলেন। যদিও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ভুলে যাওয়ার হারটাই অধিক। এ ছাড়া এসব রোগীর মাঝে বিভ্রান্তি, খিটখিটে স্বভাব, আক্রমণাত্মক মনোভাব, বিষণ্নতা-অবসাদ, বাকশক্তিহীনতা বা অন্যের কথা বোঝার ক্ষমতা লোপ পাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি তার এই সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন না। এমনকি তার মনে এ বিশ্বাস জন্মায়, তার এ ধরনের কোনো সমস্যাই নেই। এর ফলে অনেক সময়ই ব্যক্তিটি পারিবারিক ভুল বোঝাবুঝির শিকার হন এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার একটি বৈরী সম্পর্ক তৈরি হয়। ফলে তিনি চরম একাকিত্বে ভুগতে থাকেন। এমন রোগ হলে পরিবারের প্রবীণ সদস্যটিকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। সাধারণত চিকিৎসক রোগীর ইতিহাস জেনে এবং তার আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলেই রোগটি নিশ্চিত করতে পারেন। তবে আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থায় নানাবিধ ল্যাব পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- এমআরআই, স্পেক্ট, পেট স্ক্যান ইত্যাদি।

চিকিৎসা
দুর্ভাগ্যজনক হলো, আলঝেইমার রোগের এখনও সঠিক কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে পরিবারের আপনজনরা সহানুভূতিশীল হলে এবং সহমর্মিতাসহ ব্যক্তিটিকে একটি সঠিক স্নেহময় পরিবেশ তৈরি করে দিলে তার জন্য একটি অর্থবহ জীবনযাপন সম্ভবপর হয়ে উঠতে পারে।

তাহলে?
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, যেসব ব্যক্তি মধ্যবয়সে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ (যেমন লেখালেখি, বইপড়া, যন্ত্রসঙ্গীত বাজানো), বিভিন্ন সামাজিক গঠন বা সেবামূলক কাজ, বুদ্ধির খেলা যেমন- দাবা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন এবং ফল ও বাদাম জাতীয় স্বাস্থ্যকর খাবার খান তাদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা কম। অন্যদিকে যারা অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ রোগে ভোগেন বা ধূমপায়ী তাদের মধ্যে এ রোগ হওয়ার প্রবণতা অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি।

সহানুভূতিশীল হোন
সম্প্রতি আলঝেইমার রোগের উপশমে নতুন কিছু ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের কার্যকারিতা শতভাগ না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই এরা রোগ উপশমে ভূমিকা রেখেছে। তবে বাস্তবতা হলো, বার্ধক্যে উপনীত হলে আমরা যে কেউই এমন একটি রোগের শিকার হয়ে উঠতে পারি। তাই আমাদের সবার উচিত এমন রোগীদের সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা এবং আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটা সুন্দর পৃথিবীর পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস অব্যাহত রাখা।

এ জাতীয় আরও খবর