মুক্তামণির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন
---
রক্তনালী টিউমারে আক্রান্ত সাতক্ষীরার মুক্তামণির অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।
শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে মুক্তাকে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পৌনে ৯টার দিকে তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপারেশন শেষে তাকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে থিয়েটার থেকে বের করে বেডে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অপারেশন কাজে যুক্ত ছিলেন ২০ সদস্যের বেশি চিকিৎসকদের একটি দল।
এর আগে শুক্রবার ডা. সামন্ত লাল জানান, সাত থেকে আট ব্যাগ রক্ত লাগতে পারে। রক্ত সংগ্রহে আছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচারে দুই ঘণ্টা লাগতে পারে।
মুক্তামণি (১২) সাতক্ষীরার সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারপাশা গ্রামের মো. ইব্রাহিম হোসেন ও আসমা খাতুনের সন্তান। মুক্তামণির বাবা-মা মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘সবার দোয়া ও ওপরওয়ালা চাইলে আমার মেয়েকে সুস্থ করে দিতে পারেন। সবার কাছে আমার অনুরোধ, সবাই যেন আল্লাহর কাছে আমার মেয়ের সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।’
মুক্তামণির ডান হাতটি শরীরের চেয়ে মোটা। হাতে যন্ত্রণা হয়, চুলকায়। হাতের ভারে সোজা হয়ে দাঁড়তে পারে না। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে চলাফেরা করতে হয়। মুক্তামণির দুই বছর বয়সে রোগের সূত্রপাত হলেও হাত অস্বাভাবিকভাবে মোটা হয়েছে গত আড়াই বছর আগে।
গত ৮ আগস্ট পর্যন্ত মুক্তামণির রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। গত ৮ আগস্ট বায়োপসি রিপোর্ট পাওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মুক্তামণির শরীরে ক্যান্সার ছড়ায়নি। সে বিরল রোগেও আক্রান্ত নয়। মুক্তামণি রক্তনালী টিউমারে আক্রান্ত।
মুক্তামণিকে গত ১১ জুলাই ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় এটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। গত ২৫ জুলাই ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লালকে খবর দিয়ে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তামণির সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চান। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী মুক্তামণিকে প্রয়োজনে বিদেশ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে ওই দিনই ঢামেকের পক্ষ থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ই-মেইল করে মুক্তার বিষয়টি জানানো হয়।
২৭ জুলাই প্রায় এক ঘণ্টার ভিডিও কনফারেন্সে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকেরা মুক্তামণিকে দেখেন। তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলোও দেখানো হয়। সব কিছু দেখে তারা পরে আলোচনা করে জানানোর কথা বলেন। এরপর তারা ই-মেইল করে জানিয়েছেন, মুক্তামণির রোগ আরোগ্যযোগ্য বা দেহে অস্ত্রোপচার করার মতো নয়।
৩ আগস্ট ঢামেক পরিচালকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, ঝুঁকি হলেও সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করে মুক্তামণিকে সুস্থ করার জন্য ঢামেকের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। ৫ আগস্ট বায়োপসি করা হয়। ৮ আগস্ট বায়োপসির রিপোর্ট পাওয়ার পর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।