উত্তর কোরিয়ার টার্গেট কেন গুয়াম ?
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এত বড় যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড ছেড়ে প্রশান্ত মহাসাগরে তাদের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গুয়ামে কেন হামলা চালাতে চায় উত্তর কোরিয়া ? বিশ্ববাসীর কাছে এটি এখন মহামূল্যবান প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। তবে এর উত্তর সোজা।
এক. গুয়াম দ্বীপে গড়ে তোলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটি। মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর পর্যাপ্ত যুদ্ধরসদ রয়েছে এখানে। রয়েছে সর্বাধুনিক বি-১বি বোমারু বিমানের মজুত। কয়েক হাজার সামরিক কর্মকর্তা গুয়াম দ্বীপ থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ জারি রেখেছে। কিন্তু এটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে। উত্তর কোরিয়া চাইছে এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গুয়ামের আশপাশে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলে যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে রাখতে।
উত্তর কোরিয়া কখনোই বলেনি, তারা সরাসরি গুয়ামের মাটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলবে, তারা বলছে, দ্বীপের ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরের কোনো স্থানে পড়বে তাদের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র। এ থেকে বোঝাই যাচ্ছে, উত্তর কোরিয়া সরাসরি যুদ্ধ চাইছে না, আবার যুদ্ধের আশঙ্কা ত্যাগও করছে না। কিন্তু মুখে বলছে, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে উড়িয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এসব মূলত হুমকিমূলক কথা। যা অনেক আগে থেকেই বলে আসছে পিয়ংইয়ং। তবে এতদিন শুধু উত্তর কোরিয়া এমন হুমকি দিয়ে এলেও এবার পাল্টা হুমকি আসছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে। ভয়ের বিষয় এখানেই। কিম জং-উন বিশ্ববখাটে হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বক্ষ্যাপাটে শাসক। ফলে উত্তর কোরিয়া চাইছে, ট্রাম্পকে চাপে রাখতে এবং তা সফল হলে অন্য কোনো প্রতিবেশী তাদের বিরুদ্ধে আস্ফালন করার সুযোগ পাবে না।
দুই. যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত করা মানে উত্তর কোরিয়ার জন্য আত্মহত্যার শামিল। কোনো মানদণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সমান নয় তারা। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের হাতে রয়েছে সবচেয়ে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। গুয়াম ঘাঁটিতে আগে থেকেই থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রয়েছে। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায়ও থাড মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। থাডের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো কঠিন হবে উত্তর কোরিয়ার জন্য। ফলে পিয়ংইয়ং এমন কোনো চমক দেখাতে চাইছে, যাতে ‘সাপও মরবে না, লাঠিও ভাঙবে না’।
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই থেকে ৪ হাজার মাইল পশ্চিমে এবং উত্তর কোরিয়া থেকে ২ হাজার ২০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম অঞ্চল গুয়াম দ্বীপ। নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বিত শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। পরমাণু সাবমেরিনের বন্দর রয়েছে এখানে। স্পেশাল অপারেশন ফোর্সেসের ঘাঁটিও আছে এখানে। জাপান সাগর ও কোরীয় উপদ্বীপে যেকোনো সময় বোমারু বিমান উড়ে আসতে পারে গুয়াম থেকে।
ভূভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও অনেক আগ থেকে গুয়াম দ্বীপটি বিশ্বশক্তির কাছে লোভনীয় স্থান। ১৮৯৮ সালের আগ পর্যন্ত এটির মালিকানা ছিল স্পেনের। ওই বছর স্পেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে পর এর নিয়ন্ত্রণ পায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে পার্ল হারবারে আক্রমণের পর জাপানি বাহিনী গুয়ামের দিকে অগ্রসর হয় এবং দ্বীপটি দখল করে নেয়। ওই সময় গুয়ামের ১০ শতাংশ মানুষ জাপানিদের হাতে নিহত হয়।
৭৬ বছর আগে জাপান হানা দিয়েছিল গুয়ামে। এবার সেখানে পরমাণু হামলা চালাতে চায় উত্তর কোরিয়া। এ নিয়ে গুয়ামবাসীর মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও গুয়াম প্রশাসন অভয় দিয়ে বলেছে, গুয়ামে হামলা মানে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা। ফলে যেকোনো হামলা থেকে তাদের রক্ষা করা হবে।