মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি মিজানুর রহমান
---
বিশেষ প্রতিনিধি : গেল সপ্তাহে দেশেব্যাপী আলোচিত ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসী হাবিবা আক্তারের সঙ্গে পুলিশ কনস্টেবল মো. জাকারিয়া আলমের রাজকীয় বিয়ে। আর হাবিবার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তার বিয়ের আয়োজন করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমানও ছিলেন আলোচিত। বাবার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে মেয়ের বিয়ের সব দায়িত্বই পালন করেছেন তিনি। মেয়ের নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য বর জাকারিয়া আলমকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থাও করেছেন এসপি মিজানুর রহমান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এসপি মিজানুর রহমানকে স্যালুট জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। মানুষের ভালোবাসার পোস্টে ভরে গেছে এসপি মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত ও এসপি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফেসবুক পেজ। তবে হাবিবা আক্তারের রাজকীয় বিয়ে শুধুমাত্র দৃষ্টান্ত নয় বরং দেশের সামর্থবান মানুষের কাছে একটি বার্তা বলে জানিয়েছেন এসপি মিজানুর রহমান।
মিজানুর রহমান বলেন, আমার চেষ্টা ছিল হাবিবার বিয়েতে সবাইকে সম্পৃক্ত করা। ঘটা করে হাবিবার বিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য হলো সবাই যেন জানতে পারেন যে, অসহায় হাবিবার পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবাই দাঁড়িয়েছে। হাবিবার বিয়েটা মূলত হাবিবার মতো আরও যারা অসহায় মেয়ে আছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সামর্থবানদের কাছে একটি বার্তা। হাবিবার বিয়ের মাধ্যমে আমরা সেই বার্তাটাই পৌঁছাতে চেয়েছি। নানাভাবে হাবিবাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে আমাদের সবার।
তিনি বলেন, হাবিবার বিয়েতে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসনসহ অনেকেই নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিয়েতে নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকারও বেশি উপহার পাওয়া গেছে। এ টাকা হাবিবার নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য তার ব্যাংক হিসাবে জমা করা দেয়া হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো হাবিবার মতো অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।
এসপি মিজানুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ এ বিষয়টিকে খুব পজেটিভলি নিয়েছে, আমার ব্যাচমেটরাও অনেক প্রশংসা করেছেন। পুলিশের অনেক সদস্য এটা নিয়ে অহংকারবোধ করছেন যে, আমাদের পুলিশের সদস্যরা অনেক ভালো কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। এ কাজগুলো বাংলাদেশ পুলিশের নেতিবাচক প্রচারণা বদলে দিয়ে ইতিবাচক প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। পুলিশ যদি মানুষকে ভালোবাসে এবং মানুষ যদি পুলিশকে ভালোবাসে তাহলে ব্যবধানটা কমে আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের মেড্ডাস্থ সরকারি শিশু পরিবারে রাজকীয় হালে অনুষ্ঠিত হয় হাবিবার বিয়ে। বিয়েতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এদিন সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের সরকারি বাংলো ‘স্বপ্ন বিলাস’ থেকে হাবিবাকে তার বর জাকারিয়ার হাতে তুলে দেন এসপি মিজানুর রহমান।