কাতারের অবস্থানকে ‘যৌক্তিক’ বললেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
---
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :আরব প্রতিবেশীদের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধে কাতারের অবস্থান ‘যৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। চার দিনব্যাপী উপসাগরীয় অঞ্চল সফরের দ্বিতীয় পর্যায়ে দোহায় পৌঁছে সাংবাদিকদের এই কথা বলেন তিনি।
মঙ্গলবার কাতারের রাজধানীতে পৌঁছে টিলারসন বলেন, ‘আমি মনে করি, কাতার তার অবস্থানে স্বচ্ছ আছে এবং এটাকে আমি খুবই যৌক্তিক মনে করি।’
কাতারে তিনি প্রথমে দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন। এখন বৈঠক করছেন কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানির সঙ্গে।
এর আগে সোমবার কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমাদ আল-সাবাহ এবং দেশটির অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে শেখ সাবাহ টিলারসনকে বলেন, ‘বিষয়টি শুধু আমাদেরই উদ্বিগ্ন করছে না, সারা পৃথিবীকেই উদ্বিগ্ন করছে। ইস্যুটি মীমাংসার চেষ্টা করছি আমরা।’ বর্তমানে কাতারের সঙ্গে অন্য আরব দেশগুলোর সংকটে মধ্যস্থতা করছেন কুয়েতি আমির।
অবশ্য কাতারের সঙ্গে অন্য চারটি আরব দেশের সংকট এখনই শেষ হবে না বলেও মনে করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে যত দ্রুত সম্ভব আলোচনা এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন তিনি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, চলমান সংকটে সব পক্ষের মনোভাব বুঝতেই মূলত এই সফর করছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বর্তমানে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেনাঘাঁটি রয়েছে। এতে ১১ হাজার মার্কিন সেনা আছে।
গত ২৩ মে কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের কিছু তথ্য হ্যাকারদের হাতে চলে যাওয়ার পর এ নিয়ে দেশটির সঙ্গে অন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর বিরোধ শুরু হয়। ৫ জুন ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেয়ার অভিযোগ তুলে ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দেয় সৌদি আরব এবং তার মিত্র মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন। পরে এই তালিকায় যুক্ত হয় মালদ্বীপ এবং লিবিয়া ও ইয়েমেনের পশ্চিমা সমর্থিত সরকার। ওই অভিযোগকে শুরু থেকেই ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে কাতারি প্রশাসন।
পরে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী চারটি আরব রাষ্ট্র ২২ জুন ১৩ দফা দাবির একটি তালিকা দেয় দোহাকে। এতে আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ আরও কিছু দাবি পূরণের কথা বলা হয়। ওইসব দাবির তালিকায় আরও আছে: কাতারে নির্মিত তুরস্কের সেনাঘাঁটি বন্ধ করা এবং যেসব ব্যক্তিকে তাদের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া।
আরব বিশ্বের ইসলামি আন্দোলন মুসলিম ব্রাদারহুড, হিজবুল্লাহ, আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের সঙ্গেও সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বলা হয় দেশটিকে। অবশ্য কাতার আগে থেকেই বলে আসছে, এসব সংগঠনের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। কাতার শর্তগুলো মেনে নিলে প্রথম বছর প্রতি মাসে একবার দেশটির কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হবে। দ্বিতীয় বছরে তিন মাস পরপর এটা করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর বাৎসরিকভাবে কাতারকে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
১০ দিনের মধ্যে এসব শর্ত মেনে নেয়ার জন্যও বলা হয় কাতারকে। সে সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ২ জুলাই রবিবার সেই সময়সীমা দুই দিন বাড়ানোর কথা জানায় সৌদি সূত্র। কুয়েতকে শর্তের জবাব দেয়ার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আল-থানি জানান, ‘এটা আসলে সন্ত্রাসবাদের বিষয় না। এটা বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।’
আরব দেশগুলোও দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, কাতার ইসলামপন্থিদের সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ দেখিয়ে আসছে দেশগুলো। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই দলটি বর্তমানে নিষিদ্ধ। ব্রাদারহুড রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাদের এই আদর্শকে হুমকি হিসেবে দেখে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো।
২০১২ সালে মিসরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ব্রাদারহুড নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলেও ২০১৩ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। এরপর থেকে ব্রাদারহুড সমর্থকদের ওপর চালানো হয়েছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর নির্যাতন। এতে সমর্থন দেয় সৌদি সরকার।